ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

ক্রেতাদের বাকি দিতে নারাজ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা

হাসিবুল ইসলাম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৩১, ২২ জুন ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
ক্রেতাদের বাকি দিতে নারাজ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা

করোনা মহামারির কারণে দীর্ঘদিন ধরেই ব্যবসা ভালো হচ্ছে না। এতে বিপাকে পড়েছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। করোনার কারণে একদিকে যেমন ক্রেতা কমেছে, তেমনই বাকিতে পণ‌্য কেনার পরিমাণও বেড়েছে। পাওনা টাকা তুলতে হিমশিম খেতে হচ্ছে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের। তাই তারা আর বাকি বিক্রি করতে চাচ্ছেন না।

ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, করোনার কারণে অনেক মানুষ রাজধানী ছেড়ে গ্রামে চলে গেছেন। তাই ক্রেতা কম। আবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত দোকান খোলা রাখার নিয়ম থাকায় এত অল্প সময়ে বিক্রি হচ্ছে খুব কম। এর মধ‌্যে বাকি বিক্রি করা হলে পুঁজি সংকটে পড়বেন তারা।

অন‌্যদিকে, করোনা পরিস্থিতির কারণে কর্মজীবী মানুষের আয় কমেছে। চাকরিজীবীরা ঠিকমতো বেতন পাচ্ছেন না। কিন্তু পেট চালাতে হলে তো প্রয়োজনীয় পণ‌্য কিনতে হয়। তাই বাধ্য হয়ে বাকিতে কেনাকাটা করতে চান।

রাজধানীর ধানমন্ডি ১৫ নাম্বার এলাকার বিগ ব্রাদার্স জেনারেল স্টোরের মালিক মোহাম্মদ রাজিব হোসেন রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে তিন মাসের বেশি সময় ধরে ব্যবসা খুব মন্দা যাচ্ছে। একদিকে যেমন ক্রেতা নেই, তার ওপর আবার বিকেল ৪টার মধ্যে দোকান বন্ধ করতে হচ্ছে। তাহলে ব্যবসা-বানিজ্য কীভাবে করব?’

ক্রেতারা বাকি নিচ্ছেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাদের মতো ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ব্যবসা করতে হলে বাকি দিতেই হয়। আমাদের ব্যবসার একটা অংশ হচ্ছে ক্রেতাদের বাকি দেওয়া। কিন্তু করোনার কারণে এখন তেমন বেশি বাকি দিচ্ছি না। এমনিতেই বিক্রি কম হচ্ছে, তার ওপর বাকি দিলে কীভাবে চলব?’

তিনি আরো বলেন, ‘ঢাকা থেকে অনেক মানুষ গ্রামে চলে গেছেন। আমার দোকানের কিছু কাস্টমারও বাড়িতে চলে গেছেন। তাদের কাছে অনেক টাকা বাকি ছিল। এখন সে টাকা পাওয়া যাচ্ছে না। তাই এখন বাকি দেওয়া একদমই বন্ধ করে দিয়েছি। খুব বেশি পরিচিত কাস্টমার ছাড়া বাকি দিচ্ছি না।’

মেসার্স জাহিদ জেনারেল স্টোরের মোহাম্মদ জাহিদ হোসেন বলেন, ‘ব্যবসা করতে গেলে বাকি দিতে হবে, এটা স্বাভাবিক। কিন্তু এখন করোনার কারণে এমন একটা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে যে, বাকি চাইলে দিতে ভয় লাগে। আল্লাহ না করুক, কার কখন কী হয়ে যায়। অনেকেই এসে বাকি চায়। কারণ, এখন অনেকেরই বেতন ঠিকভাবে হচ্ছে না। সত্যি বলতে মানুষের পকেটে এখন টাকা নেই। খুব সমস্যার মধ্যে দিয়েই যাচ্ছে সবাই।’

তিনি বলেন, ‘যাদের কাছে এতদিন বাকি দিয়েছি তারা এখন টাকা দিতে পারছে না। বাকির টাকা চাইলে বলে, বেতন পাইনি। বেতন পেলেই দিয়ে দেব। আমিও তো জোর করতে পারি না। আমিও বুঝি—এই পরিস্থিতিতে সবার কী অবস্থা।’

রাজধানীর মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বলেন, ‘কিছু কিছু কাস্টমার আছে যারা নিয়মিত আমার দোকান থেকে বাজার-সদাই নিয়ে থাকে। তাদের কেউ কেউ মাসিক বাজার নেয়। মাস শেষে আমাকে টাকা দিয়ে দেয়। কিন্তু গত দুই মাস ধরে বাকির টাকা পাচ্ছি না। যাদের কাছে টাকা চাই, তারা বলে পকেটে টাকা নেই। পরে দেব। ভাই, আমিও তো ব্যবসায়ী। তাদেরকে এটা বুঝতে হবে। তাদের সঙ্গে সঙ্গে আমার অবস্থাও খারাপ। করোনায় আমার ব্যবসা হচ্ছে না। তাই এখন আর আমি বাকি দিচ্ছি না। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত যতক্ষণ দোকান খোলা রাখি, শুধু নগদ টাকায় বিক্রি করি। বাকি দেওয়া একদম বন্ধ।’

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে একই রকম চিত্র দেখা গেছে।


ঢাকা/হাসিবুল/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়