ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

ক্লাব পাড়া থেকে অভিজাত এলাকায় ক্যাসিনো

মাকসুদুর রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৪৮, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ক্লাব পাড়া থেকে অভিজাত এলাকায় ক্যাসিনো

ক্যাসিনো। যেখানে চলে জুয়া খেলা। বাংলাদেশে এ খেলার প্রচলন শুরু হয় মতিঝিলের ক্লাব পাড়ায়। কিন্তু এখন ক‌্যাসিনো ছড়িয়ে পড়েছে রাজধানীর অভিজাত এলাকাতেও। নেপথ্যে থেকে এসব নিয়ন্ত্রণ করছেন কিছু রাজনীতিক। বিভিন্ন নামি-দামি আবাসিক ও বাণিজ‌্যিক ভবনের ফ্ল্যাটে দিন-রাত জুয়া খেলা চলে বলে জানতে পেরেছেন গোয়েন্দারা।

বুধবার দুপুরে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম শাখার প্রধান মাসুদুর রহমান রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘ক্যাসিনো ব্যবসা যারা করছে তাদের খুঁজে বের করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে। ক্যাসিনো নিয়ে থানা পুলিশের সঙ্গে একাধিক ইউনিট কাজ করছে। রাজধানীর কোথায় কোথায় এ খেলা হয়, তা খুঁজে দেখা হচ্ছে। শুধু এ ব্যবসা নির্মূলই নয়, এর নেপথ্যের নায়কদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।’

বেইলি রোডে তিনটি, গুলশানে একটি, বনানীতে ১০টি,  উত্তরায় সাতটি, খিলগাঁওয়ে দুটি ও মিরপুরের তিনটি ফ্ল্যাটে ক্যাসিনো আছে। এগুলো পরিচালনা করেন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও শ্রমিক লীগের নেতারা। তারা এসবের নিয়ন্ত্রক হলেও সব সময় থাকেন নেপথ্যে। পুরো ক্যাসিনো চালু করে তারা আড়ালে থাকেন। দিনশেষে তাদের কাছে ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা চলে যায়। অভিজাত এলাকার ক্যাসিনোগুলোর মালিকানায় কয়েকজন নেপালিও আছেন। স্টুডেন্ট বা ট‌্যুরিস্ট ভিসায় বাংলাদেশে এসে তারা ক্যাসিনো ব্যবসা করতেন। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী নিয়ন্ত্রণ করেন বেইলি রোডের ক্যাসিনোগুলো।

ক্যাসিনো ব্যবসায়ীরা মনে করেন, ফ্ল্যাটগুলো অনেক নিরাপদ, সেখানে অপরিচিত কেউ ঢুকতে পারেন না।  এক্ষেত্রে তারা বহুতল ভবনকে বেছে নিয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজন সহজে বুঝতে পারবেন না। প্রায় প্রতিটি ক্যাসিনোতে আছে অবৈধ মদের বার। যে বারগুলো থেকে জুয়ার আসরে সহজে চলে যায় মদ-বিয়ার। অনেকগুলোতে আবার অশ্লীলতাও চলে।

মতিঝিলের ক্লাব পাড়ায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ওয়ান্ডারার্স ক্লাবে প্রথম ক্যাসিনো চালু হয়। আমিনুর রহমান নামে এক প্রভাবশালী ব‌্যক্তি নিজের টাকায় প্রথম ক্যাসিনো সামগ্রী আনেন। হাওয়া ভবনের সঙ্গে তার ছিল গভীর সম্পর্ক। এ কারণে এ ব্যবসা শুরু করলেও বাধার সম্মুখীন হতে হয়নি। তিনি এখন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের নেতা। ২০০৮ সালে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর মতিঝিলের ক্লাবগুলো চলে যায় সম্রাটসহ আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের নেতাদের কাছে। পরে তারাই ক্যাসিনো অভিজাত এলাকায় নিয়ে যান।

একটি দায়িত্বশীল গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে, গত বুধবার চারটি ক্লাবের ক্যাসিনোতে অভিযান চালানোর পর এ ব্যবসা প্রায় বন্ধ হয়েছে। ক্যাসিনোগুলোতে আগের মতো জুয়াড়িদের আনাগোনা নেই। এসবের নিয়ন্ত্রকরাও আছেন আত্মগোপনে। তবে ক‌্যাসিনোগুলো যে আবার চালু হবে না, তা বলা যাচ্ছে না। এ কারণে ক্লাবের বাইরে ফ্ল্যাটগুলোর ক্যাসিনোতেও অভিযান চালানো হবে। সেখান থেকে অবৈধ সবকিছু উদ্ধার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জিম্মায় নেয়া হবে।

 

ঢাকা/মাকসুদ/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়