খাতুনগঞ্জে আদা নিয়ে দাদাগিরি
আমদানি পর্যায়ে চায়না থেকে প্রতিকেজি আদার ক্রয়মূল্য ৯১ টাকা থেকে ৯৭ টাকা। শিপমেন্ট হয়ে চট্টগ্রাম বন্দর এবং আমদানিকারকের গোডাউন পর্যন্ত পৌঁছাতে এই আদার প্রতিকেজি ক্রয়মূল্য দাড়ায় ১০৭ টাকা থেকে ১১০ টাকা। আর এই ১১০টাকা মূল্যের আদা পাইকারি পর্যায়ে বিক্রি হচ্ছে ২৩৫ থেকে ২৪৫ টাকা। যা খুচরা পর্যায়ে গিয়ে ৩৫০ টাকা পর্যন্ত।
রান্নায় মশলা উপকরণ হিসেবে নিত্য প্রয়োজনীয় এই আদার অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির সাথে চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের কতিপয় আমদানিকারকের কারসাজি রয়েছে বলে তথ্য পেয়েছে ভোক্তা অধিকার। দেশে করোনা সঙ্কটের এই মুহূর্তে খাতুনগঞ্জের আদার বেপারিরা অমানবিকভাবে দাদাগিরি শুরু করেছেন।
ভোক্তা অধিকারের অভিযান এবং মাঠ পর্যায়ে অনুসন্ধানে আদার মূল্য নিয়ে ভোক্তাদের সাথে ব্যবসায়ীদের ডাকাতি করার মতোই তথ্য মিলেছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের আদার আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ব্রাদার্স ট্রেডার্স ইন্টারন্যাশনাল ৯৭ টাকা কেজি দরে আদার এলসি খুলে আদা আমদানি করেন। আমদানি ও অন্যান্য খরচসহ এই আদার মূল্য ১১০ টাকা এবং পাইকারি পর্যায়ে বিক্রয় মূল্য ১২০ টাকার বেশি হওয়ার সুযোগই নেই। কিন্তু খাতুনগঞ্জের আমদানিকারক ব্রাদার্স ট্রেডার্স তার কমিশন এজেন্টদের পাইকারী মূল্য হিসেবে প্রতিকেজি আদা ২৩৫ টাকায় বিক্রি করার নির্দেশনা প্রদান করেন।
একই চিত্র ধরা পড়ে ঢাকার শ্যামাবাজারে ফয়সাল এন্টারপ্রাইজ নামক একটি আদার আড়তে অভিযান চালানোর সময়।
ভোক্তা অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগীয় উপ-পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার রাইজিংবিডিকে জানান, বুধবার শ্যামবাজারে আদার পাইকারি আড়তে সরেজমিনে অভিযান চালিয়ে আদার মূল্য নিয়ে রীতিমত ডাকাতি করার চিত্র পাওয়া গেছে।
চট্টগ্রামের আমদানিকারক যে আদা ৯৭ টাকায় আমদানি করেছেন সেই আদা পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে ২৩৫ টাকা। মনজুর শাহরিয়ার জানান, শ্যামবাজারের আদার আড়তদার ফয়সাল এন্টারপ্রাইজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে তারা চট্টগ্রামের আমদানিকারকের নির্দেশে ৯৭ টাকার আদা ২৩৫ টাকায় বিক্রি করছিলেন। অভিযানের পর একই আদা ১২০ টাকায় বিক্রি করার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।
এছাড়া চট্টগ্রামের যে আমদানিকারক আদার মূল্য নিয়ে এই ধরনের ডাকাতি করছেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ভোক্তা অধিকারের চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়কেও জানানো হয়েছে।
আদার আমদানিকারক চট্টগ্রাম খাতুনগঞ্জের ব্রাদার্স ট্রেডার্সের মালিক আরিফ হোসেন চায়না থেকে ৯৭ টাকা কেজি দরে আদার এলসি খুলে আমদানি করার সত্যতা স্বীকার করে জানান, চট্টগ্রামে গোডাউন পর্যন্ত পৌঁছাতে এই আদার প্রতি কেজির ক্রয়মূল্য দাঁড়ায় ১০৭ থেকে ১১০ টাকা। পাইকারি পর্যায়ে এর মূল্য কেজি ১২০টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়।
তবে তিনি তার কমিশন এজেন্টদের আদার কেজি ২৩৫ টাকায় বিক্রির জন্য কেন নির্দেশ দিয়েছেন এর কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারেননি।
আরিফ হোসেন জানান, কোনো নির্ধারিত মূল্য নয়, কমিশন এজেন্টদের বাজারদর অনুযায়ী আদা বিক্রির কথা বলা হয়েছে। পরবর্তীতে পাইকারি বিক্রেতাদের প্রতিকেজি আদা ১২০টাকা দরে বিক্রির জন্য বলেছেন বলে জানান এই আমদানিকারক।
এদিকে খাতুনগঞ্জসহ বিভিন্ন বাজারের খবর নিয়ে জানা গেছে, খাতুনগঞ্জের আমদানিকারকদের দৌরাত্মের কারণেই আদার মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ৯৭ টাকা কেজি দরের আদা ভোক্তা পর্যায়ে বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকা কেজি দরে।
দেশের চলমান করোনা পরিস্থিতিতেও অসাধু আমদানিকারক ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা কারসাজি করে আদার মূল্য বাড়িয়ে দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন।
রেজাউল/সনি
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন