ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

খালেদা জিয়ার আত্মপক্ষ শুনানি ২ ফেব্রুয়ারি

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:০০, ৩০ জানুয়ারি ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
খালেদা জিয়ার আত্মপক্ষ শুনানি ২ ফেব্রুয়ারি

নিজস্ব প্রতিবেদক : জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থনের শুনানির জন্য আগামি ২ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করেছেন আদালত।

পুরান ঢাকার বকশিবাজারে কারা অধিদফতরের প্যারেড মাঠে স্থাপিত অস্থায়ী আদালতে ঢাকার তিন নম্বর বিশেষ জজ আবু আহমেদ জমাদার আসামিপক্ষের সময়ের আবেদন মঞ্জুর করে এ দিন ঠিক করেন।

সোমবার মামলাটিতে খালেদা জিয়ার পক্ষে আত্মপক্ষ সমর্থনের শুনানির জন্য দিন ধার্য ছিল। এজন্য বেলা সোয়া ১১টায় আদালতে এসে হাজির হন খালেদা জিয়া। ১১টা ২৫ মিনিটে আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়।

শুরুতেই খালেদা জিয়ার আত্মপক্ষ শুনানি শুরু করার আবেদন করেন দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল। আর খালেদা জিয়ার আইনজীবী আবদুর রেজ্জাক খান মামলাটি পুনঃতদন্তের জন্য আবেদন করেন। শুনানিতে তিনি বলেন, ‘কুয়েত দূতাবাস থেকে প্রত্যয়নপত্র দিয়ে বলেছে ওই টাকা কুয়েতের আমির অরফানেজ ট্রাস্টে অনুদান হিসেবে দান করেছেন। কিন্তু দুদকের তদন্তে দাবি করা হয়েছে সৌদি আরব সরকার ওই টাকা  দিয়েছে। ওই টাকা এতিম তহবিলের অর্থ্যাৎ অরফানেজ ট্রাস্টের টাকা নয়। তাই সঠিকভাবে মামলাটি তদন্ত না হওয়ায় মামলাটি পুনঃতদন্ত হওয়া প্রয়োজন।’

দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বিরোধিতা করে বলেন, ‘আসামিপক্ষের এই ধরণের আবেদনের কোন সুযোগ নেই। আর আমরা নথিপত্রে প্রমান পেয়েছি যে, সৌদি আরব থেকেই টাকা এসেছে।’

উভয়পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক খালেদা জিয়ার আত্মপক্ষ সমর্থনের শুনানি শুরু করার জন্য তার বয়স কত জানতে চান? এসময় খালেদা জিয়াও আদালতের কাছে সময় চান। তিনি বলেন, ‘মাননীয় আদালত, আত্মপক্ষ শুনানি করতে আমি একটু সময় চাই।’ এসময় বিচারক খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ্যে করে বলেন, ‘আপনার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে আগেও সময় দিয়েছি। আর আপনার প্রতি সব সময় সম্মান রয়ে যাবে। আপনি আজকে শুনানি না করলে আপনাকে কালকেও আদালতে আসতে হবে। এজন্য আজই করে ফেলুন।’

খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের উদ্দেশ্যে বিচারক বলেন, ‘আপনারা মামলাটি পুন:তদন্তের আবেদন করেছেন ঠিক আছে। খালেদা জিয়া যদি আত্মপক্ষ শুনানি করেন তাহলে মামলাটি শেষ হয়ে যাবে না। মামলাটি পুন:তদন্তে গেলে সবকিছু আবার নতুন করে শুরু হবে।’

এরপর শুনানির একপর্যায়ে খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নাল আবেদীন আদালতকে বলেন, ‘খালেদা জিয়া কিছু খাননি। তার আইনজীবীরাও খাননি।’ দয়া করে মামলাটি আজ মূলতবি করুন। দুই পক্ষের আইনজীবীদের বক্তব্য শেষ না হওয়ায় আদালত বেলা একটা ৪০ মিনিটে বিরতিতে যান। বিরতির সময় খালেদা জিয়া এজলাসে বসে শুধু চা পান করেন।

বেলা আড়াইটায় বিরতি শেষে আদালতের কার্যক্রম আবার শুরু হয়। এরপর জয়নাল আবেদীন দুই দিন সময় চেয়ে আবেদন করেন। ওই আবেদনের বিরোধিতা করে দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল পাল্টা যুক্তি তুলে ধরে আজকেই খালেদা জিয়ার আত্মপক্ষ সমর্থনের শুনানি শুরু করতে বলেন। এ নিয়ে দুই পক্ষের আইনজীবীর মধ্যে বাগবিত-া হয়।

একপর্যায়ে বিকেল পৌনে ৪টার দিকে আদালত আগামী বৃহস্পতিবার খালেদার আত্মপক্ষ সমর্থনের শুনানির দিন ধার্য করে সকল আসামিকে আদালতে হাজির থাকার নির্দেশ দেন। আর খালেদার পক্ষে করা মামলার পুনঃতদন্তের আবেদনের ওপর বিস্তারিত শুনানির জন্য ওই দিন ধার্য করেন।

এদিকে খালেদা জিয়ার আদালতে আসাকে কেন্দ্র করে সিনিয়র নেতারা আদালতে হাজির হন। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, রুহুল কবীর রিজভী, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, মির্জা আব্বাস, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, আব্দুল আউয়াল মিন্টু, আফরোজা আব্বাস, আব্দুস সালাম প্রমুখ আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে বেলা ১২টা ১০ মিনিটে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাকে নিয়ে হাসপাতালে চলে যান মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

গত বৃহস্পতিবার এই মামলায় দুই আসামি সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল ও ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ আত্মপক্ষ শুনানি করে নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন। আর তারেক রহমান ওই দিন আদালতে হাজির না হওয়ায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়।

প্রসঙ্গত, এতিমদের জন্য বিদেশ থেকে আসা ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলা দায়ের করে দুদক। ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় মামলাটি দায়ের করা হয়। ২০০৯ সালের ৫ আগস্ট দুদক আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। অভিযোগপত্রে খালেদা জিয়া, তার বড় ছেলে তারেক রহমান, সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল ও ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমানকে আসামি করা হয়।

আসামি তারেক রহমান সরকারের নির্বাহী আদেশে দেশের বাইরে আছেন। মাগুরার প্রাক্তন এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ জামিনে আছেন। ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমান মামলার শুরু থেকেই পলাতক।

মামলাটিতে খালেদা জিয়া ও অপর আসামিদের বিরুদ্ধে ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ তৎকালীন বিচারক বাসুদেব রায় অভিযোগ গঠন করেন।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩০ জানুয়ারি ২০১৭/মামুন খান/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়