খুলনা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে কারা আসছেন?

খুলনা মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন মঙ্গলবার। নগরীর সার্কিট হাউজ ময়দানে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।

দীর্ঘ পাঁচ বছর পর অনুষ্ঠিত হচ্ছে এ সম্মেলন। শেষ মুহূর্তে মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে কারা আসছেন তা নিয়ে চলছে নানা আলোচনা। সম্মেলনে প্রধান অতিথি থাকবেন দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

এদিকে, সম্মেলনকে ঘিরে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে। সম্মেলনে যেকোনো বিশৃঙ্খলা এড়াতে প্রস্তুত রয়েছে পুলিশ, র‌্যাবসহ অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনী। নিরাপত্তার জন্য এক সপ্তাহ পূর্বে থেকেই সম্মেলন স্থলে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। এছাড়া সম্মেলনের দিন সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরো বেশি জোরদার করা হবে কেএমপির পক্ষ থেকে।

জানা গেছে, খুলনা মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের শীর্ষ চার পদেই পরিবর্তন আসতে পারে। নগরে বর্তমান সভাপতি সিটি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভ্রাতুষ্পুত্র শেখ সালাউদ্দিন জুয়েল এমপিরর নাম শোনা যাচ্ছে। তবে, সভাপতি পদে পরিবর্তন না হলে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে শেখ সালাউদ্দিন জুয়েল আসতে পারেন।

এছাড়া সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজান, শেখ সৈয়দ আলী, এমডিএ বাবুল রানা, সাইফুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজনকে নিয়ে চলছে আলোচনা।

অপরদিকে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ পেতে শুরু হয়েছে তীব্র প্রতিযোগিতা। সভাপতি পদে বর্তমান সভাপতি শেখ হারুনুর রশিদসহ সাবেক মন্ত্রী, ব্যবসায়ীসহ চারজনের নাম উঠে এসেছে। এছাড়া সাধারণ সম্পাদক পদে বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুজিৎ কুমার অধিকারীসহ অর্ধডজন প্রার্থী মাঠে নেমেছেন।

সূত্র জানায়, সভাপতি হতে চান বর্তমান সভাপতি শেখ হারুনুর রশিদ। তিনি বর্তমানে খুলনা জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান। এছাড়া সভাপতি পদে মাঠে নেমেছেন খুলনা-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সোহরাব আলী সানা, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা এম এম মুজিবুর রহমান, সাবেক মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী মন্ত্রী নারায়ণচন্দ্র চন্দ, খুলনা চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি ও মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি কাজী আমিনুল হক ও সাবেক সংসদ সদস্য নূরুল হক।

সাধারণ সম্পাদক পদ পেতে আগ্রহী বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুজিৎ কুমার অধিকারী, যুগ্ম সম্পাদক ও তেরখাদা উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান শরফুদ্দিন বিশ্বাস বাচ্চু, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সাবেক সহ-সম্পাদক অসিত বরণ বিশ্বাস, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা যুবলীগের সভাপতি কামরুজ্জামান জামাল, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আখতারুজ্জামান বাবু এমপি, বটিয়াঘাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আশরাফুল আলম খান, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত এস এম মোস্তফা রশিদী সুজার ছোট ভাই জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও সরকারি সুন্দরবন কলেজের সাবেক ভিপি এস এম মোর্ত্তজা রশিদী দারা এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাংস্কৃতিক সংগঠক হুমায়ূন কবির ববি।

দলের নগর শাখার দপ্তর সম্পাদক মুন্সি মাহবুব আলম সোহাগ ও জেলা শাখার দপ্তর সম্পাদক ফরিদ আহম্মেদ জানান, খুলনা সার্কিট হাউজ ময়দানে মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের জন্য নৌকা আকৃতির বিশাল ও সুদৃশ্য পান্ডেল নির্মাণ করা হয়েছে। সম্মেলন ঘিরে এক সপ্তাহ আগে থেকেই মহানগরীসহ জেলার সর্বত্র আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ছবি সম্বলিত তোরণ, ব্যানার, ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে। সম্মেলন স্থলে শতাধিক মাইক এবং নগর ও জেলার বিভিন্ন স্থানে সহস্রাধিক তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে। প্রবেশের জন্য মাঠে ৪টি গেট রাখা হয়েছে। সম্মেলন বাস্তবায়নে নগরে ১০ ও জেলায় ১০টি উপ-কমিটি কাজ করছে। কাউন্সিলর ও ডেলিগেটদের জন্য সম্মেলন প্যান্ডেলে ৩০ হাজার চেয়ারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। নগর ও জেলায় ৭৮২জন কাউন্সিলর। এর মধ্যে মহানগরীতে ৫৩২ জন এবং জেলায় ২৫০ জন কাউন্সিলর রয়েছেন।

উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ২৯ নভেম্বর খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে তালুকদার আব্দুল খালেক সভাপতি ও মিজানুর রহমান মিজান সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এর প্রায় দুই বছর পর ২০১৬ সালের ৪ সেপ্টেম্বর মহানগর আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। অপরদিকে, ২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে শেখ হারুনুর রশিদকে সভাপতি ও এসএম মোস্তফা রশিদী সুজা সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এর নয় মাস পর পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়। গত বছর ১৮ জুলাই চিকিৎসাধীন অবস্থায় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা রশিদী সুজা ইন্তেকাল করেন।

 

খুলনা/নূরুজ্জামান/সাইফ