ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

খুলনা নগরে সড়ক ঘেঁষে ময়লার ভাগাড়!

মুহাম্মদ নূরুজ্জামান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:১৭, ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
খুলনা নগরে সড়ক ঘেঁষে ময়লার ভাগাড়!

মুহাম্মদ নূরুজ্জামান, খুলনা : খুলনা মহানগরীর অধিকাংশ মূল সড়ক ঘেঁষে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ। যত্রতত্র ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধে নগরবাসীর দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। অনেক জায়গায় নাকে রুমাল চেপেও দুর্গন্ধের হাত থেকে রক্ষা মিলছে না। এ থেকে রক্ষা পাওয়ার যেন উপায় নেই।

নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক খানজাহান আলী রোড়। এই সড়কে রয়েছে পিটিআই মোড়। এই মোড়ের আশপাশে শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটসহ সরকারি-বেসরকারি বেশ কয়েকটি বিদ্যালয় ও গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান রয়েছে। প্রতিদিন শত শত মানুষকে এই মোড় পেরিয়ে তাদের প্রতিষ্ঠানে যাতায়াত করে। তাছাড়া প্রতিদিন হাজারো মানুষ এই মোড় অতিক্রম করে দূর-দূরান্তে যাতায়াত করে থাকে। পথচারীরা সেখান দিয়ে চলতে গেলে নাক চেপে ধরে বা রুমাল ঠেসে কিংবা দমবন্ধ করে দৌঁড়ে পার হয়। কারণ এখানে রয়েছে ময়লা-আবর্জনার বিশাল স্তুপ।

দিনের বেলায় রাস্তায় মানুষ চলাচলের সময় তাদের সামনে সিটি করপোরেশনের (কেসিসি) গাড়ি ময়লা-আবর্জনা সংগ্রহ করে উৎকট দুর্গন্ধ ছড়িয়ে ছুটে চলে রাজবাঁধ এলাকার ফাইনাল ডাম্পিং পয়েন্টের দিকে। নগরীতে এ রকম আরো কয়েকটি ‘স্বেচ্ছায় গড়ে ওঠা’ ময়লা স্তূপীকরণের স্থান রয়েছে। সেখান থেকেও দিনের বেলা ময়লা-আবর্জনা ডাম্পিং পয়েন্টে নেয়া হয়।

সরেজমিন নগরীর বেশ কয়েকটি স্থান ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ স্থানে ডাস্টবিনের সামনে ছোট একটি দেয়াল দেয়া রয়েছে। তারমধ্যে ময়লা-আবর্জনা ফেলার কথা থাকলেও তা করা হচ্ছে না। সড়কের ওপর ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রাখা হচ্ছে বর্জ্য। নগরীর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের সামনে, খালিশপুর, নতুনবাজার, জিলা স্কুলের সামনে, কদমতলা, পিটিআই মোড়, নিরালাবাজার, খুলনা সিটি ইমেজিং সেন্টারের পাশে, তেঁতুলতলার মোড়ে বর্জ্য পড়ে আছে দুপুর পর্যন্ত। এ সব জায়গার বর্জ্য থেকে উৎকট দুর্গন্ধ বের হচ্ছে। ওই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন মানুষ মুখে রুমাল চেপে চলাচল করছে।

কেসিসি সূত্র জানায়, খুলনা মহানগরীতে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৫০০ মেট্রিক টনের মতো বর্জ্য জমা হয়। বাসাবাড়ি থেকে বর্জ্য সংগৃহীত হয় বলে নগরীতে এখন আর ডাস্টবিন চোখে পড়ে না। ময়লা সংগ্রহকারীরা নির্দিষ্ট কয়েকটি স্থানে আবর্জনা স্তূপ করে। এই স্থানগুলোকে বলা হয় সেকেন্ডারি ডাম্পিং পয়েন্ট। এখান থেকেই আবর্জনাগুলো সিটি করপোরেশনের গাড়িতে করে নিয়ে ফেলা হয় খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কের রাজবাঁধের শেষ ডাম্পিং পয়েন্টে। মেডিক্যাল বর্জ্যও ফেলা হয় এই রাজবাঁধে। বাড়ি বাড়ি থেকে বর্জ্য সংগ্রহকারী, কেসিসির আবর্জনাবাহী গাড়িচালক ও অন্য সহযোগীরা স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কোনো প্রতিরোধক সামগ্রী ব্যবহার করে না।

আলী হোসেন নামের একজন বর্জ্য সংগ্রহকারী বলেন, ‘‘আমাদের নাকে রুমাল দেয়া লাগে না। দুর্গন্ধ এখন সয়ে গেছে।’’

নগরীতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় বেসরকারি উদ্যোগে কর্মরত নবারুণ সংসদের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ নেওয়াজ টিপু বলেন, ‘‘বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিষয়টি নাগরিকদের মানসিকতার সঙ্গে যুক্ত। আমরা নাগরিকরা এ ব্যাপারে সচেতন নই। আমরা ময়লা-আবর্জনা থেকে মুক্ত থাকতে চাই, কিন্তু নিজেরাই ড্রেনে আবর্জনা ছুড়ে ফেলি।’’

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) খুলনা বিভাগীয় সমন্বয়ক মাহফুজুর রহমান মুকুল বলেন, খুলনা মহানগরীতে বর্জ্য ফেলার কোনো নির্দিষ্ট জায়গা নেই। এ কারণে যেখানে-সেখানে ময়লা-আবর্জনা ছড়িয়ে পড়ে। এরপর সূর্য ওঠার আগে নিয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু নেয় দুপুর বেলায়। তখন দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। এতে মারাত্মকভাবে পরিবেশের দূষণ ঘটে।

কেসিসির কর্মকর্তা আনিসুর রহমান বলেন, ‘‘খুলনা মহানগরীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আগের চেয়ে অনেক ভালো। কিছু সীমাবদ্ধতা আছে, তবে তা দ্রুতই কাটিয়ে উঠব। আমরা সেকেন্ডারি ডাম্পিং পয়েন্টগুলো উন্নত করার চেষ্টা করেছি। জায়গার অভাবে সব তৈরি করা যায়নি। এখন বেশ কিছু এলাকার কাজ রাতে শুরু হয়েছে। ধীরে ধীরে আমরা সব ময়লা-আবর্জনা রাতেই পরিবহন করবো।’’


রাইজিংবিডি/খুলনা/০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯/মুহাম্মদ নূরুজ্জামান/বকুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়