ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

খুলনায় ভ্রাম্যমাণ মৎস্য হাসপাতাল

মুহাম্মদ নূরুজ্জামান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:১১, ১৪ মে ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
খুলনায় ভ্রাম্যমাণ মৎস্য হাসপাতাল

খুলনায় ‘ভ্রাম্যমাণ মৎস্য হাসপাতাল’ চালু করেছে ডুমুরিয়া উপজেলা মৎস্য অফিস। করোনার কারণে সৃষ্ট লকডাউন পরিস্থিতিতে সমস্যা লাঘবে মৎস্য চাষিদের দোরগোড়ায় পৌঁছে যাচ্ছে এই হাসপাতাল।

করোনার ছোবলে খুলনা অঞ্চলের মৎস্য চাষিরা সংকটে পড়েছেন। অন্যদিকে লকডাউনের কারণে সীমিত হয়ে গেছে মৎস্য অফিসের কার্যক্রম। এ অবস্থায় চাষিরা ঘেরের মাটি-পানি পরীক্ষা করতে পারছেন না। এমনকি মাছের রোগ-বালাইও দমন করা সম্ভব হচ্ছে না।

এমনই পরিস্থিতিতে খুলনার ডুমুরিয়ার ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের সেবায় এই অনন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেছে উপজেলা মৎস্য অফিস। এখন আর চাষিদের মৎস্য অফিসে বা কর্মকর্তাদের কাছে যেতে হচ্ছে না, উল্টো ভ্রাম্যমাণ হাসপাতাল নিয়ে কর্মকর্তারাই পৌঁছে যাচ্ছেন চাষির ঘেরে।

এমনকি পরিবহন সংকটে মাছ বিক্রি করতে না পারা চাষিদের মাছও বিক্রির জন্য ‘ভ্রাম্যমাণ নিরাপদ মাছ বাজার’ও চালু করা হয়েছে। এতে সংকটকালীন কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরে পেয়েছেন হতাশাগ্রস্ত মৎস্য চাষিরা।

উপজেলা মৎস্য অফিসের সূত্র জানায়, চিংড়ি চাষ মৌসুমের শুরুতে ঘেরের মাটি-পানি পরীক্ষা ও পরিমাণ মতো চুন-সার প্রয়োগ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েন মৎস্য চাষিরা। এমন পরিস্থিতিতে ডুমুরিয়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার উদ্যোগে চালু করা হয়েছে ব্যতিক্রমী ‘ভ্রাম্যমাণ মৎস্য হাসপাতাল’। ইজিবাইকে করে মাটি ও পানি পরীক্ষার সরঞ্জাম পিএইচ মিটার, ডিও মিটার, রিফ্রাক্টো মিটার ইত্যাদি নিয়ে ঘের প্রস্তুত টিমের সদস্যরা পৌঁছে যাচ্ছেন চাষিদের দ্বারপ্রান্তে। ঘেরের পাশে দাঁড়িয়েই মাটি-পানি পরীক্ষা, চুন, সার প্রয়োগ ও নিরাপদ মাছ চাষের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এতে সুবিধাভাগী চাষিদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ তৈরি হয়েছে।

সূত্র জানায়, ডুমুরিয়া উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নে প্রায় ২৬ হাজার মৎস্য ঘের রয়েছে। এসব ঘেরের ব্যবস্থাপনায় মৎস্য অফিসের ১৪টি ভ্রাম্যমাণ টিম রয়েছে। করোনা পরবর্তী সময়ে মাছের ঘাটতি মোকাবিলায় চাষি প্রকল্পের আওতায় থাকা আরডি চাষি, বন্ধু চাষি ও সিআইজি সমিতির সমন্বিত উদ্যোগে কাজ করছে উপজেলা ঘের প্রস্তুত টিম।
 


সূত্র জানায়, মৎস্য হাসপাতালের মাধ্যমে আদর্শ পুকুর-ঘের প্রস্তুতকরণ ও তলদেশ জীবাণুমুক্তকরণ, ঘেরে রাক্ষুসে মাছ দমন, বায়োসিকিউরিটি ব্যবস্থা, মাছের প্রাকৃতিক খাদ্য তৈরির কৌশল, খাদ্য তৈরি পর্যবেক্ষণ, মাটি-পানি পরীক্ষা, মাছের আহরণ পদ্ধতি ও রোগ প্রতিরোধ সম্পর্কে চাষিদের সেবা দেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে করোনা পরিস্থিতিতে যেসব চাষি মাছ বিক্রি করতে পারছেন না, ঘের থেকে তাদের মাছ কিনে ডুমুরিয়া প্রডিউসার অর্গানাইজেশনের (পিও) মাধ্যমে চাহিদামতো তা ভোক্তার বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে অতিরিক্ত কোন অর্থ ভোক্তার কাছ থেকে নেয়া হচ্ছে না, কেনা মূল্যেই বিক্রি করা হচ্ছে। এ প্রক্রিয়ায় গত ২১ দিনে ৬ লাখ টাকা মূল্যের মাছ বিক্রি করা হয়েছে বলেও সূত্র জানিয়েছে।

আলাপকালে ডুমুরিয়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা আবু বকর সিদ্দিক রাইজিংবিডিকে জানান, স্বাভাবিক সময়ে তার অফিসে প্রতিদিন কমপক্ষে ২০-২৫জন মৎস্য চাষি বিভিন্ন পরামর্শের জন্য আসতেন। কিন্তু করোনার কারণে যাতায়াত সমস্যা এবং অফিস সময়ও সীমিত থাকায় প্রত্যন্ত এলাকার চাষিরা উপজেলা মৎস্য অফিসে যেতে পারছেন না। এ কারণে চাষিদের সেবার বিষয়টি মাথায় রেখেই নিজস্ব ভাবনা থেকেই তিনি ভ্রাম্যমাণ মৎস্য হাসপাতালের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। ১২ মে থেকে এ হাসপাতাল চালু করা হয়েছে। এ হাসপাতালের মাধ্যমে কৃষকের ঘেরে গিয়ে মাটি ও পানি পরীক্ষায় প্রাপ্ত ফলাফলের ভিত্তিতে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। ঘের প্রস্তুত করতে কী পরিমাণ চুন ও সার প্রয়োগ করতে হবে, ভাইরাস দমনে ঘেরের চারপাশে বায়োসিকিউরিটির ব্লু নেট কীভাবে দিতে হয় তা হাতে কলমে শেখানো হচ্ছে।

তিনি জানান, উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে ২জন করে স্থানীয় মৎস্য সম্প্রসারণ কর্মী (লীফ), ৪০ জনের ২টি করে কমন ইন্টারেস্ট গ্রুপ (সিআইজি) মৎস্য সমবায় সমিতি এবং ইউনিয়ন প্রতি ৫-১০জনের বন্ধু চাষি রয়েছে। মূলত: তাদের মাধ্যমে চাষিদের সমস্যা চিহ্নিত করে পর্যায়ক্রমে ভ্রাম্যমাণ হাসপাতাল কাজ করছে। এ ধরণের উদ্যোগ বাংলাদেশে প্রথম বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

 

খুলনা/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়