ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

খুলনায় ২০ দিনে ১৯ ধর্ষণ!

মুহাম্মদ নূরুজ্জামান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:০৬, ৪ জুলাই ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
খুলনায় ২০ দিনে ১৯ ধর্ষণ!

নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা : খুলনায় হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে ধর্ষণের ঘটনা। গত ২০ দিনে ১৯ টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এমনকি গণ-ধর্ষণের ঘটনা ভিডিও ধারণও করেছে দুর্বৃত্তরা। এর মধ্যে মহানগর এলাকায় গণ-ধর্ষণসহ তিনটি ঘটনায় আট আসামি গ্রেপ্তার হয়েছে।

ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার সূত্রে জানা গেছে, গত ২০ দিনে খুলনার পাইকগাছা, বটিয়াঘাটা, রূপসা, কয়রা, ফুলতলা, দাকোপ ও দিঘলিয়া উপজেলা থেকে সেক্সুয়াল এসার্ল্ড নিয়ে নয় শিশু, কিশোরী ও নারী ভর্তি হয়েছেন। এছাড়া খুলনা সদর, সোনাডাঙ্গা খালিশপুর ও হরিণটানা এলাকার আরো ১০ জন ধর্ষণের শিকার হয়ে ভর্তি হন।

পুলিশের রেকর্ড অনুযায়ী, গত ১৮ জুন বিকেলে খুলনা ইসলামিয়া কলেজ এলাকায় সাত বছর বয়সের দুজন শিশু কন্যাকে চকলেট দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে কলেজের শিক্ষকদের টিভি দেখার কক্ষে নিয়ে যায় কলেজের নৈশ প্রহরী মোঃ মহিবুল্লাহ (৫০)। এরপর ওই কক্ষের দরজা বন্ধ করে দুই শিশুর ওপর যৌন নিপীড়ন করা হয়।

ঘটনাটি শিশুদের অভিভাবকরা জানতে পেরে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে ভর্তি করেন। শিশু দুটির ডাক্তারি পরীক্ষায়ও অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। এ ঘটনায় শিশুদের বাবা বাদী হয়ে ১৯ জুন সোনাডাঙ্গা মডেল থানায় মহিবুল্লাহর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।

অভিযুক্ত মহিবুল্লাহ বয়রা ফারুকীয়া ক্রস রোডের আলী আকবরের ছেলে। পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেছে।

২৯ জুন নগরীর ফারাজীপাড়া বিকে রায় রোডের স্কুল ছাত্রীকে (১৪) প্রেমের প্রস্তাব ও প্রলোভন দেখিয়ে শান্ত বিশ্বাস নামের এক যুবক, বিহারী কলোনীস্থ নুরুন্নবী আহমেদের ভাড়া বাসায় নিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে গণধর্ষণ করে। সেখানে ধর্ষণের চিত্র ভিডিও ধারণও করা হয়। এ ঘটনায় ৩০ জুন সোনাডাঙ্গা মডেল থানায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে নারী শিশু নির্যাতন দমন ও পর্নগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দায়ের হয়। এজাহারভুক্ত আসামিরা হলেন-নুরুন্নবী আহমেদ (১৮), মঈন হোসেন ওরফে হৃদয় (২০), শেখ শাহাদাৎ (২০), রাব্বি হাসান ওরফে পরশ (২১), মাহামুদ হাসান ওরফে আকাশ (২১), সৌরভ (১৯),  শান্ত বিশ্বাস (২৩), মোঃ জিহাদুল কবির ওরফে দিয়ান (১৯), প্রীতম (২৩) ও মিম বিশ্বাস (২৩)। এ ঘটনায় পুলিশ ৬ ধর্ষককে গ্রেপ্তার করলেও মুলহোতা শান্ত বিশ্বাস পলাতক রয়েছে।

২৮ জুন বিকেলে নগরীর বয়রা শ্মশান ঘাটের বিপরীতে আল আকসা এলাকায় একটি বাসায় ১৩ বছরের এক শিশু ধর্ষণের শিকার হয়। বর্তমানে সে খুমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে। সেদিন শিশুটির বাবা ও মা না থাকার সুযোগে ওই এলাকার নজরুল ইসলামের ছেলে মিলন (২৭) ঘরে প্রবেশ করে শিশুটিকে ধর্ষণ করার পর ঘটনাটি কাউকে না জানাতে হুমকি দেয়। এরপর শিশুটি অসুস্থ হয়ে পড়লে বিষয়টি তার মাকে জানায়। পরবর্তীতে অবস্থার অবনতি হলে বুধবার তাকে খুমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে ধর্ষিতার পরিবার বাদী হয়ে হরিণটানা থানায় মামলা দায়ের করলে পুলিশ আসামি মিলনকে গ্রেপ্তার করে।

এছাড়া খুলনার পাইকগাছা, বটিয়াঘাটা, রূপসা, কয়রা, ফুলতলা, দাকোপ ও দিঘলিয়া উপজেলায় অনুরূপ ঘটনা ঘটেছে।

এ বিষয়ে মানবাধিকার কর্মী এড. মোমিনুল ইসলাম রাইজিংবিডিকে বলেন, ধর্ষণের মতো জঘণ্য অপরাধ রোধে সামাজিকভাবে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা ধর্ষণের শাস্তি ও সামাজিক ক্ষতির দিক তুলে ধরে প্রচার প্রচারণা চালাতে পারে। এক্ষেত্রে অনেকটা জনসচেতনতা সৃষ্টি হবে বলে ধারণা করেন তিনি।

খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার সরদার রকিবুল ইসলাম রাইজিংবিডিকে বলেন, আমরা মেট্রোপলিটন এলাকায় মাদক, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও ধর্ষণের মতো জঘণ্য অপরাধের বিষয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্যে উঠান বৈঠকসহ মতবিনিময় সভায় কথা বলেছি।

এছাড়া প্রতিটি থানা এলাকায় এ ধরনের ঘটনা এড়াতে কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের সদস্যদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। তাছাড়া থানা এলাকায় পুলিশের নজরদারি রয়েছে। কেউ অপরাধ করে পার পাবে না বলে জানিয়েছেন তিনি।

 

রাইজিংবিডি/ ০৪ জুলাই ২০১৯/ খুলনা/মুহাম্মদ নূরুজ্জামান/লাকী

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়