ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

গাজীপুরে এক হাসপাতালেই নমুনা সংগ্রহ-টিকা প্রদান-আইসোলেশন!

গাজীপুর সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২১:১৬, ৭ এপ্রিল ২০২১   আপডেট: ২১:১৯, ৭ এপ্রিল ২০২১
গাজীপুরে এক হাসপাতালেই নমুনা সংগ্রহ-টিকা প্রদান-আইসোলেশন!

ফাইল ছবি

গাজীপুরে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক‌্যাল কলেজ হাসপাতালে একই সঙ্গে করোনার নমুনা সংগ্রহ, টিকা প্রদান ও আইসোলেশনে রাখা হচ্ছে রোগীদের। 

এতে নন কোভিড রোগীদের চিকিৎসা নেওয়ার ক্ষেত্রে সংক্রমণ বৃদ্ধির শঙ্কা রয়েছে বলে মনে করছেন সাধারণ রোগী ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ উভয়েই।

এজন‌্য করোনা ভ্যাকসিন কেন্দ্র, নমুনা সংগ্রহ বুথসহ করোনা চিকিৎসা তথা আইসোলেশন ব্যবস্থা পৃথক হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক‌্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক মো. হাফিজ উদ্দিন বলেন, ‘বর্তমানে মূল ভবনের পাশে পুরনো ভবনের দোতলায় (দক্ষিণে) করোনা ইউনিট হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। নিচতলার (উত্তরে) শিশু ওয়ার্ডটি করোনা ইউনিটের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। হাসপাতালে বর্তমানে করোনা রোগী বেড়ে যাওয়ায় পুরানো ভবনেই ৫০টি শয্যা বাড়িয়ে ১০০টি করা হয়েছে। দোতলায় সেন্ট্রাল অক্সিজেন কানেকশন ব্যবস্থা থাকলেও নিচতলায় (উত্তরে) ইউনিটে অক্সিজেন কানেকশন নেই। করোনা রোগীর সংখ্যা আরও বাড়তে থাকলে তাদের নতুন ভবনে স্থানান্তর করতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘‘এখন আমাদের বড় সমস্যা হলো করোনা ইনফেকশন যেভাবে ছড়াচ্ছে, তাতে এ হাসপাতালটি এখন বড় ধরনের ইনফোকশনের জায়গা। কারণ এ হাসপাতালের আউটডোর, ইনডোর, ইমারজেন্সি, কোভিড, ননকোভিড রোগী একইসঙ্গে যাতায়াত করছে। এছাড়া এ হাসপাতালে করোনা টিকাদান কেন্দ্রও রয়েছে। আগে করোনা স্যাম্পল কালেকশনের জন্য হাসপাতালের বাইরে (ব্র্যাকসহ) বিভিন্ন স্থানে বুথ ছিল। কিন্তু মাঝে করোনা কমে যাওয়ায় তার সবগুলো বুথ গুটিয়ে নেওয়া হয়েছে। তখন থেকে করোনা পরীক্ষা হয়ে যায় সব হাসপাতাল বেজড। 

‘নমুনা দেওয়ার জন্য মানুষজন হাসপাতালে ভিড় করতে থাকে। কিন্তু এ হাসপাতালে এত ব্যবস্থা বা ম্যানপাওয়ার ও ক্যাপাসিটি নেই। প্রতিদিনই এসব নিয়ে অসন্তোষ হচ্ছে। তাই আগের গুটিয়ে নেওয়া স্যাম্পল সংগ্রহের বুথগুলো আবার চালু করা প্রয়োজন। কারণ যারা স্যাম্পল দিতে যায় তাদের মাধ্যমেই অন্যদের মধ্যে করোনা পজেটিভ হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। স্যাম্পল দিতে গিয়ে হাসপাতালে তারা ঘোরাফেরা করে, কেউবা টাকা জমা দেওয়ার জন্য সেখানে সবার সঙ্গে ভিড় করে। এভাবে সেখানে করোনা ছড়ায়। 

‘গত বছর এ হাসপাতালে যারা ভর্তি হয়েছেন প্রয়োজন হলে শুধু তাদের নমুনা পরীক্ষার জন্য সংগ্রহ করা হতো। আর অন্যদের স্যাম্পল হাসপাতালের বাইরে থেকে সংগ্রহ করা হতো। তাতে সংক্রমণের সম্ভাবনা কমত। বাইরের বুথগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সবাই এখন হাসপাতালেই করোনা পরীক্ষার জন্য ভিড় করছে।”

গাজীপুর মহানগরের বরুদা এলাকার এক বাসিন্দা মো. শাহিন জানান, সম্প্রতি ওই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গিয়ে তিনি ননকোভিড রোগীদের জন্য যে ভবনে ইনডোর ও জরুরি বিভাগ রয়েছে সেই ভবনেই করোনা ইউনিট অবস্থিত। জরুরি ও ইনডোর বিভাগের ভিড় ঠেলেই করোনা ইউনিটে যেতে হচ্ছে। তাই করোনা রোগ সংক্রমণের সংযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। তাই নন কোভিড ও কোভিড রোগীদের জন্য আলাদা আলাদা হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা নেওয়া দরকার।

গাজীপুরের সিভিল সার্জন মো. খাইরুজ্জামান জানান, করোনা কমে যাওয়ায় গুটিয়ে নেওয়া করোনা স্যাম্পল কালেকশনের বুথের মধ্যে চান্দনা হাইস্কুল মাঠেরটি গত সপ্তাহে আবার চালু করা হয়েছে। এছাড়া বাইপাইল ও গাছায় আরও দুটি কেন্দ্র চালুর জন্য প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

হাসপাতালের উপ-পরিচালক তপন কান্তি সরকার জানান, গত বছর ১৬ এপ্রিল এ হাসপাতালটিকে কোভিড-১৯ ডেডিকেটেড হাসপাতাল হিসেবে ঘোষণা করলে পরবর্তীতে এখানে শুধু করোনা রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হতো। এ সময় ননকোভিড রোগীদের অন্য হাসপাতালে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। পরে করোনার প্রকোপ কমে গেলে গত বছরের সেপ্টেম্বরের শুরুর দিকে একই হাসপাতালের পুরানো ভবনের একটি অংশে করোনা ইউিনিট রেখে নতুন ভবনসহ পুরানো ভবনের অন্য অংশে আবার ননকোভিড রোগীদের চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু করা হয়। 

এ হাসপাতালে বর্তমানে তিনশ’ মতো নন কোভিড রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন। জরুরি ও ইনডোরে প্রতিদিন গড়ে সাত/আটশ রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন বলে জানান উপ-পরিচালক তপন কান্তি সরকার।

রফিক সরকার/সনি 

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়