ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

ঘরের মধ্যে কবর

শাহিদুল ইসলাম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:১৩, ২৮ জুলাই ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ঘরের মধ্যে কবর

শাহিদুল ইসলাম : কবর, শ্মশান কিংবা সমাধি যাই বলি সেটা লোকালয় থেকে একটু দূরেই নির্জন জায়গাতে হয়। তবে ভিয়েতনামে একটি বাড়ি রয়েছে যেটার ঘরের মধ্যে রয়েছে একটি কবর। এই কবরটি কাকতালীয়ভাবে দেওয়া হয়নি। ইচ্ছা করেই প্রিয়জনের শেষ আশ্রয়স্থলটি করা হয়েছে ঘরের মধ্যে।

ভিয়েতনামের বেনত্রে প্রদেশে অবস্থিত এই বাড়িটি ইতোমধ্যে কবর বাড়ি হিসেকে স্বীকৃতি পেয়েছে। সাদামাটা এই বাড়িটিতে গিয়ে অনেকেই অবাক হয়। কারণ বাড়িতে যেখানে ডাইনিং টেবিল থাকে সেখানেই কবরটি। ঝকঝকে মার্বেল পাথরে বাঁধানো কবরটি যেন কালের সাক্ষী হয়ে বাড়ির লোকদের মনে করিয়ে দিচ্ছে প্রিয়জনের স্মৃতিকে।

কিন্তু প্রশ্ন হলো বাড়ির মধ্যে কবর কেন? এই প্রশ্নের উত্তর জানতে হলে আপনাকে ফিরে যেতে হবে ষাটের দশকে। ওই সময়ে জন্ম নেওয়া থাই কিম লিন নামের ভিয়েতনামী নারী এক মাছ ধরার নৌকার মালিককে ভালোবেসে তার হাত ধরে পাড়ি জমায় যুক্তরাষ্ট্রে। মার্কিন মুল্লুকে গিয়ে অভাব-অনটনের মধ্যে বড় হওয়া লিনের ভাগ্য বদলে যায়। ইন্টেরিয়ার ডিজাইন ব্যবসায় সফল হওয়ায় স্বচ্ছলতা আসে তার জীবনে। ভিয়েনামে পরিবারের কাছেও টাকা পাঠাতে থাকে।

বিংশ শতকের শুরুতে ভিয়েতনামে বেড়াতে আসে লিন। বেড়াতে এসে লিন তার মা এবং ভাইদেরকে ভিয়েতনামে ফিরে আসার পরিকল্পনার কথা জানায়। ফিরে আসার আগে লিন একটি প্রাসাদসম বাড়ি তৈরি করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। শুরু হয় বাড়ি তৈরির তোড়জোড়। লিনের আর্থিক সহয়তায় ২০০৬ সালে বাড়িটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়।

২০০৭ সালে লিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে পাকাপাকিভাবে ভিয়েতনামে ফিরে আসে। কিন্তু কথায় বলে অতি সুখ কপালে সয়না। বাড়ি তৈরির কিছুদিন পর লিনের ক্যানসার ধরা পড়ে। চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে যায় লিন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। তবে মৃত্যুর কিছুদিন পূর্বে লিন তার মায়ের কাছে একটি অন্তিম ইচ্ছার কথা জানায়। তার অন্তিম ইচ্ছা ছিল, অতি সাধের বাড়িতে সে জীবদ্দশায় যেহেতু থাকতে পারছে না তাই মৃত্যুর পর সে ওই বাড়িতে চিরনিদ্রায় শায়িত হতে চায়।

লিনের এই অন্তিম ইচ্ছা অপূর্ণ রাখেনি তার পরিবার। মৃত্যুর পরে তাকে বাড়ির সবচেয়ে ভালো ঘরটির মাঝে সমাহিত করা হয়। কালের আবর্তে এরপর কেটে গেছে একযুগ। মৃত মানুষের কবর নিয়ে বসবাস বাকি দুনিয়ার তামাম লোকের কাছে অস্বাভাবিক হলেও লিনের পরিবারের কাছে সেটাই নিত্যদিনের জীবন।

বর্তমানে ওই বাড়িতে বসবাস করছেন লিনের ছোট ভাই। স্থানীয় এক পত্রিকাকে তিনি বলেন, প্রতিদিন অনেক লোক আসে বাড়িটি এক নজর দেখতে। তবে এটা তাদের কাছে মোটেও বিখ্যাত কিছু নয়। বরং তারা এই ভেবে তৃপ্ত হন যে, তাদের বোন সর্বক্ষণ তাদের সঙ্গেই আছে।


রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৮ জুলাই ২০১৯/ফিরোজ   

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়