ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

ঘাতকদের ফেরাতে যুক্তরাষ্ট্রকে দিতে হবে রায়ের কপি

হাসান মাহামুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:৩৬, ১৪ আগস্ট ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ঘাতকদের ফেরাতে যুক্তরাষ্ট্রকে দিতে হবে রায়ের কপি

হাসান মাহামুদ: বঙ্গবন্ধুর ঘাতকদের যারা যুক্তরাষ্ট্র-কানাডাসহ বিভিন্ন দেশে পালিয়ে বেড়াচ্ছে তাদেরকে দেশে ফিরিয়ে আনতে আইনগত প্রক্রিয়ায় অগ্রসর হতে হবে।

এ জন্য বাংলাদশ সরকারের পক্ষ থেকে বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রে দন্ডিতদের নাম এবং বাংলাদেশের আদালতে বিচারের রায়ের কপি দেশটির বিচার বিভাগ বা হোমল্যান্ড সিকিউরিটিকে কূটনৈতিক চ্যানেলে দিতে হবে।

বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের বাংলাদেশে ফেরত এনে আইনের আওতায় আনার বিষয়ে কূটনৈতিকদের পরামর্শ জানতে চাইলে তারা এমন মতামত দেন।

এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন নিয়ে কাজ করা অ্যার্টনি অশোক কর্মকার বলেন, সেই ১৯৯৬ সাল থেকে বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর পাঁচ খুনির ফাঁসি কার্যকর হয়। কিন্তু বিদেশে যারা লুকিয়ে আছে তাদের দেশে ফিরিয়ে নিয়ে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে না বিভিন্ন কারণে।

তিনি বলেন, এ জন্য বাংলাদেশের কূটনৈতিক তৎপরতা রয়েছে। ২০১১ সালে তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি কানাডা ও আমেরিকায় অবস্থান করা দুই আসামি মেজর (অব.) এমএইচ নূর চৌধুরী ও কর্নেল (অব.) এএম রাশেদ চৌধুরীকে ফেরত পাঠাতে দু’দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের চিঠি দেন।  তখন বঙ্গবন্ধুর খুনি এম রাশেদ চৌধুরীকে ফেরত চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন ও নূর চৌধুরীকে ফেরত চেয়ে কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন বেয়ার্ডকে চিঠি পাঠানো হয়। এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার তৎপর হয়েছে। কিন্তু যেহেতু প্রক্রিয়া বিলম্বিত হচ্ছে তাই সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগে যোগাযোগ করা প্রয়োজন।  

এই অভিবাসন বিশেষজ্ঞ আরো বলেন, এ প্রক্রিয়াকে আরো বেগবান করতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে মুখ্য ভূমিকা পালন করতে হবে। বঙ্গবন্ধুর হত্যা মামলায় দন্ডিতদের নাম এবং বাংলাদেশের আদালতে বিচারের রায়ের কপি যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ অথবা হোমল্যান্ড সিকিউরিটিকে কূটনৈতিক চ্যানেলে দিতে হবে। তাহলে এ বিষয়ে কাজ করতে সংশ্লিষ্টদের জন্য সহজ হবে।

কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন দেশে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে লিপ্তদের একটি তালিকা এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটিতে পেশ করা হয়েছে দেশটির ফেডারেল প্রশাসনের পক্ষ থেকে। এই তালিকার মধ্যে যারা ইতিমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের সিটিজেনশিপ নিয়েছেন, তাদের সিটিজেনশিপ বাতিল করে নিজ নিজ দেশে পাঠানোর প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে।

জানা গেছে, তালিকায় বাংলাদেশি, ভারত, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, শ্রীলংকাসহ বিভিন্ন দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে এসে সিটিজেনশিপ নেওয়া প্রায় ৭ লাখ মানুষ রয়েছে। কিন্তু এদের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর ঘাতক হিসেবে এবং একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে দন্ডিতদের নাম রয়েছে কি না বাংলাদেশ সরকার এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হোমল্যান্ড সিকিউরিটিতে বিষয়টির পরিষ্কার বার্তা দেওয়া প্রয়োজন বাংলাদেশে সরকারের। যদিও  ২০১৬ সালের ৭ নভেম্বর নিউইয়র্ক টাইমসে এক উপ-সম্পাদকীয়তে সজীব ওয়াজেদ জয় বঙ্গবন্ধুর ঘাতক রাশেদ চৌধুরীকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কারের জন্যে মার্কিন সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছিলেন। এরপর থেকে দেশটির আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠনগুলো বিভিন্ন সময়ে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রেরণের মাধ্যমে দাবিটির প্রতি জোর সমর্থন ও তাগিদ দিয়ে আসছে। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মূল কাজ করতে হবে বাংলাদেশের কূটনৈতিক চ্যানেলে।

কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, রাশেদ চৌধুরী ১৯৯৬ সাল থেকে আমেরিকায় বসবাস করছেন। তিনি এরই মধ্যে রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্যও আবেদন করেছেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অনেক দেশের মানবতাবিরোধী অপরাধীসহ এমন নৃশংসতার জন্য দন্ডিতদের গ্রেপ্তার করে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কারের তথ্য রয়েছে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি মন্ত্রণালয়। বাংলাদেশ চেষ্টা করলেও বঙ্গবন্ধুর ঘাতকদের দেশে ফিরিয়ে নিয়ে আইনের আওতায় আনা সম্ভব।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (দ্বিপক্ষীয়- ইউরোপ, আফ্রিকা ও আমেরিকা) এবং কনস্যুলার কামরুল আহসান বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পথ অনুসরণ করে আমরা আমাদের দেশে একটি অবাধ ও বিচারিক প্রক্রিয়ায় সাজাপ্রাপ্ত বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত পলাতক খুনিকে ফেরত চাই। এ জন্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরে উভয় দেশের মধ্যে সভা হয়েছে।

এদিকে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আর্ন্তজাতিক আইন অনুসরণ করেই বাংলাদেশ কূটনৈতিক তৎপরতা চালাচ্ছে। মার্কিন প্রশাসনকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হলে গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে রাশেদ চৌধুরীর সঙ্গে ন্যায়সংগত আচরণ করা হবে। বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হলে রায় পর্যালোচনা করার অনুমতি দিতে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে জানানো হয়েছে। রাষ্ট্র একজন আইনজীবী নিয়োগ করতে পারে এবং রাশেদ চৌধুরী উচ্চ আদালতে নিজেকে উপস্থাপনের সুযোগ পাবেন।
 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৫ আগস্ট ২০১৯/হাসান/এনএ/নাসিম

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়