ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

চট্টগ্রামজুড়ে চিকিৎসার জন্য হাহাকার

রেজাউল করিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:১৯, ১১ জুন ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
চট্টগ্রামজুড়ে চিকিৎসার জন্য হাহাকার

দশ মাসের অন্তঃস্বত্ত্বা ফাতেমা আক্তার মুক্তা। দুই সন্তানের জননী এই নারী তৃতীয় সন্তান প্রসবের মাত্র এক সপ্তাহ আগে হঠাৎ করেই শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হন। স্বজনরা দ্রুত তাকে নিয়ে ছোটেন হাসপাতালে।

নগরীর কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হলেও চিকিৎসা মেলেনি। অবশেষে চট্টগ্রাম মেডিক‌্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয় তাকে। সেখানে আইসিইউ প্রয়োজন ছিলো তার। চিকিৎসকদের পায়ে ধরেও আইসিইউ ম্যানেজ করতে পারেননি মুক্তার স্বামী। বুধবার (১০ জুন) সকালে গর্ভের সন্তানসহ মারা যান মুক্তা।

জসিম উদ্দিন চৌধুরী, বয়স ৫৮। বুধবার (১০ জুন) রাতে হঠাৎ করে বুকের ব্যাথা অনুভব করেন। নগরীর গরীব উল্লাহ শাহ হাউজিং সোসাইটির বাসিন্দা এই ব্যক্তির ছেলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জুবায়ের চৌধুরী।

জুবায়ের বাবাকে নিয়ে ছোটেন হাসপাতালে। নগরীর কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালে ঘোরেন। জসিম উদ্দিন চৌধুরীর শ্বাসকষ্ট থাকায় কোনো হাসপাতালেই তাকে চিকিৎসা প্রদান করেনি। চিকিৎসা না পেয়ে বৃহস্পতিবার (১১ জুন) ভোর রাতের দিকে জসিম উদ্দিন চৌধুরীর মৃত্যু ঘটে।

লায়ন কামাল উদ্দিন, চট্টগ্রাম নগর বিএনপির সহ-সভাপতি। হঠাৎ শ্বাসকষ্ট শুরু হওয়ায় আইসিইউ সাপোর্টের জন্য নগরীর তিনটি বেসরকারি হাসপাতাল ঘুরেও কোনো সেবা পাননি। বৃহস্পতিবার (১১ জুন) ভোরে নগরীর ট্রিটমেন্ট হাসপাতালে আইইসিইউ সাপোর্টের অভাবে তার মৃত্যু ঘটে।

উল্লেখিত তিনটি ঘটনা গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম মহানগরীর চিকিৎসা ব্যবস্থার চিত্র। তারা কেউই করোনা আক্রান্ত ছিলেন না। কিন্তু চলমান করোনা পরিস্থিতিতে সমগ্র চট্টগ্রাম মহানগরী জুড়ে চলছে চিকিৎসার জন্য হাহাকার।

করোনা উপসর্গ থাকলেই চট্টগ্রামের কোনো বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি বা চিকিৎসা মিলছে না। শয্যা খালি না থাকার অজুহাতে কোনো রোগীর আইসিইউ সাপোর্ট লাগলে সেই রোগী নিশ্চিতভাবেই মৃত্যুবরণ করছে। গত এক সপ্তাহে চট্টগ্রামে আইসিইউ সাপোর্টের অভাবে কমপক্ষে ১৩ জন রোগীর মৃত্যু হয়েছে।

চট্টগ্রামের বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে চিকিৎসা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গঠিত সার্ভেইল্যান্স টিম থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, নগরীর ২০টি বেসরকারি হাসপাতালের সর্বশেষ তথ্য মতে এসব হাসপাতালে দেড় হাজারের বেশি রোগী ভর্তির জন্য শয্যা রয়েছে। এসব শয‌্যায় বর্তমানে রোগী ভর্তি আছে প্রায় নয়শ’ জন। শয‌্যা খালি আছে ছয়শ’র বেশি।

এছাড়া বেসরকারি হাসপাতালগুলোয় সব মিলিয়ে আইসিইউ আছে ১০০টি। এসব আইসিইউতে রোগী ভর্তি আছে সর্বোচ্চ ৩০ জন। এতগুলো শয‌্যা ও আইসিইউ খালি থাকলেও করোনার লক্ষণ থাকলেই কোনো হাসপাতালে রোগী ভর্তি কিংবা চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে না বেসরকারি হাসপাতালগুলো।

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রামের বেসরকারি ক্লিনিক মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ডা. লিয়াকত আলী খান রাইজিংবিডিকে জানান, সবগুলো বেসরকারি হাসপাতাল সাধ্যমতো চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছে। বেসরকারি হাসপাতালগুলোয় সব মিলিয়ে ১০০টির মতো আইসিইউ থাকলেও অধিকাংশ আইসিইউ নষ্ট।

৫০ থেকে ৬০টি আইসিইউ ইউনিট সচল থাকলেও এগুলোর প্রত্যেকটিতে রোগী ভর্তি রয়েছেন। খালি না থাকায় নতুন রোগী আইসিইউতে ভর্তি করা যাচ্ছে না।

প্রতিটি হাসপাতালে করোনা ইউনিটে শয‌্যা থাকা সাপেক্ষে করোনা আক্রান্ত রোগীও ভর্তি করা হচ্ছে বলে দাবি করেন এই ক্লিনিক সমিতির নেতা।

বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে চিকিৎসা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গঠিত সার্ভেইল্যান্স টিমের আহ্বায়ক চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মিজানুর রহমান জানান, বেসরকারি হাসপাতালগুলোয় রোগী ভর্তি এবং চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে তথ্য সংগ্রহ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।

সর্বশেষ বৃহস্পতিবার (১১ জুন) বিকেলে জেলা প্রশাসন চট্টগ্রামের পক্ষ থেকে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে কোভিড এবং নন-কোভিড স্বাস্থ্যসেবা পরিস্থিতি মনিটরিং করতে দুটি মোবাইল কোর্ট মনিটরিং অভিযান শুরু করেছে।

এদিকে বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত চট্টগ্রামের আইসিইউ বেড সমৃদ্ধ দুটি বড় হাসপাতালেই কোনো আইসিইউ খালি নেই বলে জানা গেছে। এই শহরের প্রধান হাসপাতাল চট্টগ্রাম মেডিক‌্যাল কলেজ হাসপাতালে আইসিইউ ইউনিটে মোট বেড রয়েছে ১২টি। এর মধ্যে ব্যবহার উপযোগী সচল আছে ১০টি। এই ১০টি বেডেই রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন। চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে করোনা রোগীদের চিকিৎসায় ১০টি আইসিইউ রয়েছে। এগুলোর একটিও খালি নেই।


রেজাউল করিম/সনি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়