ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

চামড়ার দরপতন : বিপাকে পড়বে লিল্লাহ বোর্ডিং

আব্দুল্লাহ আল নোমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৫৮, ১৫ আগস্ট ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
চামড়ার দরপতন : বিপাকে পড়বে লিল্লাহ বোর্ডিং

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট : সিলেট শহরতলীতে দলদলি উত্তর বালুচর মাদ্রাসা। চা বাগানের টিলাবেষ্টিত এ মাদ্রাসার লিল্লাহ বোর্ডিংয়ে দেড় শতাধিক ছাত্রের বাস। এদের থাকা-খাওয়ার ব্যয় নির্বাহ করে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। এ অর্থের প্রধান অংশ আসত কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রি করে। তবে এ বছর কাঁচা চামড়ার দাম এতটাই নিম্নমুখী যে, কাঙ্ক্ষিত অর্থ উপার্জন তো দূরে থাক, চামড়া সংগ্রহ করতে গিয়ে যে ব্যয় হয়েছে তাও উঠে আসেনি। এ কারণে চলতি অর্থবছরে তহবিল সংকটে পড়বে লিল্লাহ বোর্ডিং।

দলদলি উত্তর বালুচর মাদ্রাসার জ্যেষ্ঠ শিক্ষক হাফেজ মাওলানা আবদুল মুনিব বললেন, ‘কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রি করে কওমি মাদ্রাসা এবং এতিমখানাগুলোর লিল্লাহ বোর্ডিংয়ের ছাত্রদের লেখাপড়া, থাকা-খাওয়ার ব্যয় নির্বাহ করা হতো। কিন্তু এ বছর পশুর চামড়া থেকে অর্থ উপার্জন একদম হয়নি। উল্টো চামড়া সংগ্রহ করতে গিয়ে তহবিলের টাকা গচ্চা গেছে।’

তিনি জানান, প্রতি বছরের মতো এবারও তার মাদ্রাসায় তিন শতাধিক গরুর চামড়া দান করেছেন এলাকার মানুষ। তবে ঈদের দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনো ক্রেতা চামড়া কিনতে আসেননি। শেষ পর্যন্ত অনেক কম দামে এক ক্রেতার কাছে চামড়াগুলো বিক্রি করা হয়েছে। তিনি ৩০০ পিস চামড়ার জন্য ১০ হাজার টাকা দিয়েছেন। এসব চামড়া সংগ্রহ করতেই ৪ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ঈদের এক সপ্তাহ আগ থেকে ঈদের দিন পর্যন্ত প্রচার, চামড়া সংগ্রহসহ সব মিলিয়ে প্রায় ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। চামড়ার দরপতনের কারণে ২০ হাজার টাকা ক্ষতি হয়েছে। চলতি বছরে মাদ্রাসার লিল্লাহ বোর্ডিং চালাতে হিমশিম খেতে হবে।

পূর্ব সিলেট আযাদ দ্বীনি এদারা শিক্ষা বোর্ডের প্রধান কার্যালয় সিলেটের কানাইঘাট দারুল উলুম মাদ্রাসা। সিলেটের অন্যতম বৃহৎ এ মাদ্রাসায় সহস্রাধিক পশুর চামড়া এসেছে। তবে যে দরে তারা চামড়া বিক্রি করেছেন তাতে খরচও উঠবে না বলে জানিয়েছেন মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক মাওলানা হারুনুর রশীদ চতুলী।

তিনি রাইজিংবিডিকে জানান, এবার তাদের মাদ্রাসায় ১ হাজার ১৮১টি পশুর চামড়া এসেছে। সিলেটের এক ব্যবসায়ীর কাছে ১৩০ টাকা দরে বাকিতে এসব চামড়া বিক্রি করা হয়েছে। চামড়া সংগ্রহে তাদের যে ব্যয় হয়েছে তাও উঠবে না।

কওমি মাদ্রাসা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চামড়ার নজিরবিহীন মূল্যহ্রাসে এবার সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে বিভিন্ন এতিমখানা ও মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। এতিমখানা ও মাদ্রাসার খরচের একটি বড় অংশের যোগান আসে ঈদুল আজহায় পাওয়া চামড়া বিক্রি করে। এবার চামড়ার দাম না পাওয়ায় আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে এসব প্রতিষ্ঠান।

তারা বলেন, চামড়া শিল্পকে বাঁচাতে হলে সরকারকেই উদ্যোগ নিতে হবে। কোরবানির চামড়া বিক্রির টাকার হক থেকে গরির এবং অসহায়দের বঞ্চিত করা সিন্ডিকেটকে ভেঙে দিতে হবে। কেননা, পশুর চামড়া বিক্রি করে এতিম, গরিব এবং অসহায়দের কাজেই লাগানো হয়। চামড়া শিল্পের ক্ষতি মানে তাদের ক্ষতি।

সারা দেশের মতো এবারের পবিত্র ঈদুল আজহায় সিলেটেও চামড়ার নজিরবিহীন দরপতন হয়েছে। ন্যায্য মূল্যে চামড়া বিক্রি করতে না পেরে অনেক চামড়া বিক্রেতা এবং বিভিন্ন এতিমখানা ও মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ চামড়া রাস্তায় ফেলে প্রতিবাদ করেছেন।

অন্য বছর যে চামড়া বিক্রি হতো হাজার টাকায়, এবার তা বিক্রি হচ্ছে মাত্র ২৫ থেকে ১০০ টাকায়। এ কারণে কেউ কেউ বিপাকে পড়ে নামমাত্র মূল্যে চামড়া বিক্রি করলেও অনেকে চামড়া ডাস্টবিনে কিংবা সড়কে ফেলে চলে যান।

নগরীর খাসদবির দারুসসালাম মাদ্রাসা কর্তপক্ষ প্রতিবছরের মতো এবারও প্রায় ১ হাজার পিস চামড়া সংগ্রহ করেছিল। ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় তারা চামড়া রাস্তায় ফেলে প্রতিবাদ করেন বলে জানিয়েছেন মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সদস্য ও সিসিক কাউন্সিলর রেজওয়ান খান।

এদিকে, নগরীর বিভিন্ন রাস্তায় ফেলে রাখা চামড়া পচে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হওয়ায় রাতেই সেগুলো অপসারণ করে সিটি করপোরেশন।

সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী জানান, ‘ভালো দাম না পাওয়ায় বিক্রেতারা চামড়া রাস্তায় ফেলে রেখে চলে যান। সেগুলো থেকে দুর্গন্ধ বের হওয়ায় সেগুলো অপসারণ করে পারাইরচকে ময়লার ভাগাড়ে ফেলা হয়েছে। ভাগাড়ে ফেলা চামড়া প্রায় ১০ টন হবে।’


রাইজিংবিডি/সিলেট/১৫ আগস্ট ২০১৯/আব্দুল্লাহ আল নোমান/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়