ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৩ ১৪৩১

চিকিৎসকদের ‘দৈত্য মাথা’ জয়

মনিরুল হক ফিরোজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:১৬, ১০ জানুয়ারি ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
চিকিৎসকদের ‘দৈত্য মাথা’ জয়

মনিরুল হক ফিরোজ : চিকিৎসকরা সফলভাবে পরিচালনা করেছেন ৭ মাস বয়সী এক শিশুর চিকিৎসা। যার পরিবারকে প্রতিবেশীরা বর্জন করেছিল শিশুটিকে ‘দৈত্য মাথা’ অ্যখা দিয়ে। শিশুটির মাথার আকৃতিকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মাথার আকৃতি বলে ধারণা করা হচ্ছে। হাইড্রোসেফালাস রোগে আক্রান্ত শিশুটির মাথা ৯৬ সেন্টিমিটার বড় আকৃতিতে পরিণত হওয়ায়, প্রতিবেশীরা শিশুটিকে ‘ভূতের বাচ্চা’ এবং ‘দৈত্যের মাথা’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছিল।

তবে চিকিৎসকরা গত দেড় মাসে মৃত্যুঞ্জয় দাস নামক এই শিশুটির মাথা থেকে ৩.৭ লিটার তরল অপসারণ করে মাথার আকার ৭০ সেন্টিমিটার আকৃতিতে কমাতে সক্ষম হয়েছেন।

ভুবনেশ্বরের এআইআইএমএস হাসপাতালের সুপারিনটেনডেন্ট ডা. দিলীপ পারিদা বলেন, ‘মাথায় প্রায় ৫.৫ লিটার তরল থাকা শিশুটিকে নভেম্বরের ২০ তারিখে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আমরা এক্সটারনাল ভেন্টিকুলার ড্রেইনজের মাধ্যমে ৩.৭ লিটার পর্যন্ত তরল মাথা থেকে কমিয়েছি। এখন তার মাথার পরিধি ৯৬ সেন্টিমিটার থেকে ৭০ সেন্টিমিটারে নেমে এসেছে।’

‘শিশুটি চিকিৎসায় ভালো সাড়া দিয়েছে। তার অবস্থা এখন স্থিতিশীল। শিশুটির জ্ঞানীয় বিকাশেরওে উন্নতি ঘটেছে।’ ভারতের নয়াগড় জেলার রানপুর এলাকার এই শিশুটিকে নিয়ে চিকিৎসকরা বর্তমানে আশা করছেন, মাথার খুলি পুনর্নির্মাণ করার জন্য ক্রানোপ্লাসটি সার্জারি করার।

শিশুটির জীবন এর আগে পুরোপুরি বিছানা নির্ভর ছিল কিন্তু এখন তাকে বহন করা যাবে। হাসপাতালটির তথ্যানুযায়ী, ২০১১ সালে ত্রিপুরায় জন্মগ্রহণকারী রুনা বেগম নামক মেয়ে শিশু একই ধরনের হাইড্রোসেফালাস রোগে আক্রান্ত হয়ে সবচেয়ে বড় আকৃতির মাথার ছিল, তার মাথার আকৃতি ছিল ৯৪ সেন্টিমিটার।


ডা. পরিদা বলেন, ‘হাইড্রোসেফালাস রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুঞ্জয়ের চেয়ে বড় আকৃতির মাথার শিশুর অস্তিত্ব এর আগে কখনো ছিল না, তা যাচাই করার জন্য আমরা বিশ্বের মেডিকেল রেকর্ডগুলো চেক করছি।’

মৃত্যুঞ্জয়ের বাবা কমলেশ দাস এবং মা কবিতা বলেন, তাদের ছেলেটি জন্ম থেকেই প্রতিবেশীদের কাছে পরিত্যাজ্য হয়েছিল।

কলকাতায় কাজ করা ৩৫ বছর বয়সী কমলেশ দাস জানান, অস্বাভাবিক চেহারার দরুন মানুষজন আমার ছেলেটিকে ‘ভূত’ বলে অভিহিত করে। তার মাথা একটি স্বাভাবিক মাপে হ্রাস করা হচ্ছে, আমাদের প্রতিবেশী ও গ্রামবাসীর মনোভাব পরিবর্তন করা উচিত। ‘দৈত্যের মাথা’ ‘ভূতের বাচ্চা’ এসব অবমাননাকর সম্বোধন তাদের বন্ধ করা উচিত। এখন আমি নিশ্চিত সে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে সক্ষম হবে। চিকিৎসকদের সহায়তা ছাড়া এটা সম্ভব হতো না।

এ ধরনের চিকিৎসায় সাধারণত ৫ লাখ রুপির মতো ব্যয় হয় তবে বিনা মূল্যে চিকিৎসা সেবাটি দিচ্ছে অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্স (এআইআইএমএস)। ভারতের প্রিমিয়ার এই হাসপাতালটি রোগীদের বিনা মূল্যে চিকিৎসা সেবা দিয়ে থাকে।

তথ্যসূত্র : মেট্রো

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১০ জানুয়ারি ২০১৭/ফিরোজ  

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়