ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

চিকিৎসা খাতে অদ্ভুত যত ঘটনা

এস এম গল্প ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:৫০, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
চিকিৎসা খাতে অদ্ভুত যত ঘটনা

চিকিৎসা বিজ্ঞানের অগ্রগতি থেমে নেই। চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের অক্লান্ত পরিশ্রমে চিকিৎসা বিজ্ঞান এতটা অগ্রসর হয়েছে যে, এখন আমরা উপযুক্ত চিকিৎসা বা টিকা নিয়ে বিভিন্ন প্রাণনাশক রোগের হাত থেকেও জীবনকে রক্ষা করতে পারি। এ অগ্রগতির পেছনে সকল ধরনের অসুস্থতা অথবা অদ্ভুত শারীরিক ঘটনার কিছু না কিছু অবদান রয়েছে, কারণ শারীরিক রোগ অথবা আশ্চর্যজনক ঘটনা দেখলে বিজ্ঞানীরা এর ব্যাখ্যা ও সমাধান খোঁজার চেষ্টা করেন। ২০১৯ সালে চিকিৎসা জগতে ঘটে যাওয়া অদ্ভুত কিছু ঘটনা নিয়ে দুই পর্বের প্রতিবেদনের আজ থাকছে প্রথম পর্ব।

বেগুনি রঙের প্রস্রাব

কখনো কখনো হাসপাতালে ভর্তিকৃত রোগীদের মূত্র সংগ্রহ করতে ক্যাথেটার ব্যাগ ব্যবহার করা হয়। সাধারণত এটা কিন্তু আলোচনার গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়, কিন্তু ২০১৯ সালে একজন রোগীর বেগুনি বা পার্পল রঙের মূত্র এ বিষয়টিকে আলোচনার কেন্দ্রে নিয়ে এসেছে। ফ্রান্সের এক নারী হাসপাতালে ভর্তির ১০ দিন পর দেখেন যে তার ক্যাথেটার ব্যাগটি স্বাভাবিক হলুদ থেকে পরিবর্তিত হয়ে ভায়োলেটে রূপ নিয়েছে। এ বিরল কন্ডিশনটি ‘পার্পল ইউরিন ব্যাগ সিন্ড্রোম’ নামে পরিচিত। ক্যাথেটার ব্যাগে অস্বাভাবিক কেমিক্যাল রিয়্যাকশনের কারণে এমনটা হয়ে থাকে। এটি তখনই ঘটে যখন ব্যাকটেরিয়া মূত্রের ইনডোক্সিল সালফেট (খাবারের উপাদান ট্রিপ্টোফ্যানের ব্রেকডাউন প্রোডাক্ট) নামক কেমিক্যালকে লাল ও নীল রঙের কম্পাউন্ডে রূপান্তর করে। লাল ও নীল একত্রে মিশলে পার্পল রঙ তৈরি হয়। দেখতে অদ্ভুত হলেও পার্পল মূত্র নিজে নিরীহ, কিন্তু এটি মূত্রতন্ত্রের ইনফেকশনের লক্ষণ হতে পারে। ভাগ্য ভালো যে ফ্রেঞ্চ নারীটির মূত্রতন্ত্রের ইনফেকশন ছিল না- তরল পানের পরিমাণ বাড়ানোর চারদিন পর তার মূত্র ধীরে ধীরে স্বাভাবিক রঙে ফিরে এসেছিল। এ কেসটি দ্য নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিনে ৩১ অক্টোবরে প্রকাশিত হয়।

নীল রঙের রক্ত

রোডি আইল্যান্ডের এক অল্পবয়স্ক নারী দুর্বলতা, ক্লান্তি, শ্বাসকষ্ট ও নীল ত্বক নিয়ে জরুরি বিভাগে যান। চিকিৎসকেরা তার ধমনী থেকে রক্ত নিয়ে দেখেন যে এটি স্বাভাবিক উজ্জ্বল লালের পরিবর্তে গাঢ় নীল। তার শরীরে মিথেমোগ্লোবিনেমিয়া নামক রক্তরোগ ধরা পড়েছে। এ রোগে লোহিত রক্তকণিকার প্রোটিন হিমোগ্লোবিন শরীরের টিস্যুতে সুষ্ঠুভাবে অক্সিজেন পৌঁছাতে পারে না। এ কন্ডিশনে ত্বক ও রক্ত নীল হয়ে যেতে পারে। এ রোগটি বংশের ধারায় প্রবাহিত হতে পারে অথবা ওষুধের প্রতি রিয়্যাকশন থেকে হতে পারে। এ কেসের নারীটি উপসর্গ দেখা দেওয়ার পূর্বে দাঁত ব্যথার জন্য উচ্চ ডোজে টপিক্যাল অবশকারী ওষুধ ব্যবহার করেছিলেন। তার এ রক্তরোগের চিকিৎসায় মিথাইলিন ব্লু নামক ওষুধ প্রয়োগ করা হয়েছিল, যা দ্রুত এ কন্ডিশনকে রিভার্স করেছিল, অর্থাৎ রক্তকে স্বাভাবিক রঙে ফিরিয়ে এনেছিল। পরের দিন সকালে তিনি ঘরে ফিরতে সক্ষম হয়েছেন। এ কেসটি ১৯ সেপ্টেম্বরে দ্য নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিনে প্রকাশ পায়।

মদপান না করেও মাতাল

লোকটি জোর দিয়ে বলেছিলেন যে তিনি কখনো অ্যালকোহল সেবন করেননি, কিন্তু চিকিৎসকেরা তার এ কথাকে বিশ্বাস করতে পারেননি। কারণ তাকে কেবলমাত্র মাতালই মনে হয়নি, তার রক্তে উচ্চ মাত্রায় অ্যালকোহলও পাওয়া গেছে। কিন্তু শেষে দেখা গেল যে তিনি আসলেই সত্য বলেছেন। তার একটি বিরল রোগ ছিল, যেখানে অন্ত্রের অণুজীবেরা মদ তৈরি করতে সক্ষম। ছয় বছর ধরে এ ৪৬ বছর বয়সি পুরুষটির মাতালের মতো অভিজ্ঞতা হচ্ছিল, ৫ আগস্টে বিএমজে ওপেন গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি জার্নালে প্রকাশিত এ কেসের প্রতিবেদন অনুসারে। এসময় তার মানসিক অবস্থা ও মস্তিষ্কের কার্যক্রমে পরিবর্তন এসেছিল- তিনি উগ্র আচরণ করেছেন ও ব্রেইন ফগে ভুগেছেন। একদিন মাতাল অবস্থায় গাড়ি চালানোর অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করা হয় এবং রক্ত পরীক্ষায় বৈধ মাত্রার চেয়ে দ্বিগুণ বেশি অ্যালকোহল পাওয়া গেছে। কিন্তু তিনি এ অভিযোগ অস্বীকার করেন। শেষপর্যন্ত চিকিৎসকেরা এটা শনাক্ত করেন যে লোকটির অটো ব্রুয়ারি সিন্ড্রোম (এবিএস) রয়েছে, যেখানে অন্ত্রের অণুজীবগুলো কার্বোহাইড্রেটকে গাঁজন প্রক্রিয়ায় অ্যালকোহলে রূপান্তর করে। লোকটির অন্ত্রে কার্বোহাইড্রেটকে মদে রূপান্তরকারী অণুজীবের প্রজাতি পাওয়া গেছে। এসব অণুজীব দূর করতে তাকে অ্যান্টিবায়োটিক প্রেসক্রাইব করা হয়েছে ও অন্ত্রে অণুজীবের ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে প্রোবায়োটিক খাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। শেষপর্যন্ত তিনি এ সমস্যা থেকে রেহাই পেয়েছেন। এখন কার্বোহাইড্রেট খেলেও তার শরীরে অ্যালকোহল তৈরি হয় না।

ওয়াসাবি খেয়ে ব্রোকেন হার্ট সিনড্রোম​

ওয়াসাবি ও অ্যাভোকাডো উভয়েই হচ্ছে জনপ্রিয় সবুজ খাবার। এগুলোর যেকোনো একটিকে পরিবেশন করে আপনাকে দেয়া হলে আপনি ওয়াসাবিকে অ্যাভোকাডো অথবা অ্যাভোকাডোকে ওয়াসাবি মনে করে ভুল করতে পারেন। তেমনই তালগোল পাকিয়েছেন ইসরায়েলের এক নারী- এ তালগোল থেকে হয়ে গেছে ব্রোকেন হার্ট সিনড্রোম! বিএমজে কেস রিপোর্টসে ২০ সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত এ কেসের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ৬০ বছর বয়সি এ নারী একটি বিয়েল অনুষ্ঠানে প্রচুর পরিমাণে ওয়াসাবি খেয়েছেন। তিনি ভেবেছিলেন যে অ্যাভোকাডো খাচ্ছেন। কিছুসময় পর তিনি হঠাৎ করে বুকে চাপ অনুভব করেন, যা তার বাহুতে ছড়িয়ে পড়েছে। পরেরদিন তার ব্রোকেন হার্ট সিনড্রোম ধরা পড়ে। এ কন্ডিশনে হার্টের প্রধান পাম্পিং চেম্বার বাম নিলয় এতটা বড় ও দুর্বল হয় যে এটি সঠিকভাবে পাম্প করতে পারে না। মানসিক বা শারীরিক চাপ দ্বারা এ কন্ডিশনের সূচনা হতে পারে। এ কেসের চিকিৎসকেরা ধারণা করছেন যে অতিরিক্ত ওয়াসাবি ভোজন জনিত মুখের জ্বালাপোড়া থেকে এ নারীর ব্রোকেন হার্ট সিন্ড্রোম হয়েছে। সাধারণত এ কন্ডিশনটি সাময়িক- প্রায় একমাস হার্টের ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করে তিনি নিরাময় পেয়েছেন।

পেনিসে হাড়ের গঠন

কখনো কখনো শরীরের এমন স্থানে হাড় গঠিত হয়, যেখানে আসলে এমনটা হওয়া উচিত নয়। ২০১৯ সালে একটি মেডিক্যাল কেসে ৬৩ বছর বয়সি এক লোকের পেনিসে হাড়ের অস্তিত্ব ধরা পড়েছে। পড়ে যাওয়ার পর লোকটির পেলভিক এক্স-রে করা হয়েছিল, যাতে তার পেনিসে অসিফিকেশন বা হাড় দেখা গেছে। এ কেসটির প্রতিবেদন সেপ্টেম্বরে ইউরোলজি কেস রিপোর্টসে প্রকাশিত হয়। পেনিস হাড়ে রূপান্তরকে মেডিক্যালের ভাষায় পেনাইল অসিফিকেশন বলে। এটি খুব বিরল দশা, যেখানে নরম কলাতে ক্যালসিয়াম সল্ট পুঞ্জিভূত হয়ে হাড় গঠিত হয়।

(আগামী পর্বে সমাপ্য)


ঢাকা/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়