ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

চিত্রপুরীতে ভর করেছে হতাশা

রাহাত সাইফুল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:০২, ২৪ জুন ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
চিত্রপুরীতে ভর করেছে হতাশা

ছবির কোলাজ

করোনার তাণ্ডবে টালমাটাল বিশ্ব। বাংলাদেশেও প্রতিদিনই মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ হচ্ছে। সংক্রমণ থেকে বাঁচতে যে যার মতো ঘরবন্দি রয়েছেন।

বিশ্বের অন্য ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির মতো ঢাকাই চলচ্চিত্রের সকল কার্যক্রম দীর্ঘ দিন বন্ধ ছিল। এখন শুটিংয়ের অনুমতি পেলেও শুটিংয়ে ফেরেননি শিল্পীরা। স্বাভাবিক কারণে এই অঙ্গনের মানুষের মধ্যে হতাশা ভর করেছে। কারণ জীবনের সঙ্গে অর্থ জড়িত। এই বিষয়ে রাইজিংবিডির সঙ্গে কথা বলেছেন বেশ ক’জন চলচ্চিত্র প্রযোজক, পরিচালক, নায়ক-নায়িকা।

মতিন রহমান (চলচ্চিত্র পরিচালক): হতাশার কারণ হলো কাজ না থাকা। কাজ না থাকলে বিপর্যয় আসে। আর এই বিপর্যয়ের প্রভাব শিক্ষা, চিকিৎসা অর্থাৎ, সব ক্ষেত্রেই বিস্তার করেছে। চারপাশের মানুষই হতাশায় আক্রান্ত। সেক্ষেত্রে শিল্প-সংস্কৃতিতে যারা আছেন তারা প্রকৃত অর্থে একটু উদারপন্থী। তারা এতটাই উদারপন্থী থাকে যে, তারা মনে করেন তাদের কর্মটাই অনেক বড়। মানুষের ভালোবাসাই তাদের কাছে বড়। তাদের যে ব্যক্তি জীবন আছে পারিবারিক জীবন আছে, সেগুলো থেকে সবসময় উদাসীন। সঞ্চয়ের স্বল্পতার কারণে হোক বা যেকোনো কারণে হোক তারা কিন্তু, এই বিপর্যয়কে মেনে নিতে পারছেন না। অন্য যেকোনো মাধ্যমে হোক না কেন তারা কিছুটা হলেও সঞ্চয় করেন। কিন্তু এই অঙ্গনের মানুষ সঞ্চয় খুব একটা করেন না। এরা একটু আনন্দে থাকতে পছন্দ করেন। এই জায়গাটায় তারা বড় একটা ধাক্কা খেয়েছেন। এটা কাটিয়ে উঠতে কাজের বিকল্প নেই। জীবনের সত্যটা এখন সবার কাছে পরিষ্কার। এই হতাশা থেকে উত্তরণের কোনো উপায়-ই নেই। সাইফ আলী খান ভালো থাকতে পারেন। তাকে নবাব পরিবারের লোকজন রান্না করে খাওয়াচ্ছেন। আমাদের সাধারণ মানুষের পক্ষে ভালো থাকা সম্ভব নয়। আমরা খুবই কষ্ট করছি। বাস্তবতার সামনে কোনো উপদেশই কাজে লাগে না। সবার মনেই হতাশা কাজ করছে। শুটিং করতে হলে বড় ইউনিট লাগবে। সেক্ষেত্রে কীভাবে কাজ করব? এই বিষয়গুলোর জন্য বিষণ্নতা কাজ করছে।

রুবেল (চিত্রনায়ক): একেকজনের দৃষ্টিভঙ্গি একেকরকম। আমার দৃষ্টিভঙ্গি অন্যদের সঙ্গে নাও মিলতে পারে। মানুষ সৃষ্ট কোনো বিপদ আসলে সেটা মোকাবেলা করতে হয় একরকমভাবে। অন্যদিকে সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত কোনো বিপদ আসলে তা গ্রহণ করতে হবে। গ্রহণ না করে অন্য কোনো অপশন নেই। তখন এটাকে পজেটিভ ভাবতে হবে। আজকে ৯৪ দিন ধরে বাসায় রয়েছি। এর মধ্যে আমি যদি একদিন নেগেটিভ চিন্তা করতাম, তবে পাগল হয়ে যেতাম। ক্যারামবোর্ড খেলা, সিনেমা দেখা, কোরআন তেলাওয়াত করা আর নামাজ নিয়ে সময় পার করছি। এছাড়া তো আর কোনো উপায় নেই।

আমরা প্রত্যেকেই সমস্যার মধ্যে আছি। এজন্য হতাশ হওয়াটাই স্বাভাবিক। সবার কাছে অনুরোধ করতে চাই, হতাশ হবেন না। সিনেমার মানুষদের অনুরোধ করতে চাই—সিনেমার কাজ হচ্ছে না বলে হতাশ হবেন না। বেঁচে থাকলে আবার কাজ হবে। এখন কোনো সমস্যায় থাকলে শিল্পী সমিতিতে জানান। আমরা আপনাদের সহযোগিতা করব। আমরা শুরু থেকে সহযোগিতা করে আসছি। পৃথিবী একটা যুদ্ধক্ষেত্র। আমাদের যুদ্ধ করে বেঁচে থাকতে হবে, হতাশ হওয়া যাবে না।

মোহাম্মদ আলিম উল্লাহ খোকন (চলচ্চিত্র প্রযোজক): দীর্ঘদিন ধরে চলচ্চিত্রের কাজের অবস্থা ভালো যাচ্ছে না। চলচ্চিত্রের অনেক শিল্পী ও কলাকুশলী বেকার সময় পার করে আসছিলেন। এর মধ্যে করোনার কারণে পুরোপুরি ঘরবন্দি হয়ে পড়েছেন। কোনো কাজ হচ্ছে না। কাজ না করলে তাদের সংসার চলবে কী করে! সেই জায়গা থেকে অধিকাংশ চলচ্চিত্রের মানুষ হতাশার মধ্যে সময় কাটাচ্ছেন। কারণ তাদের পুঁজি নেই। চলচ্চিত্রের অনেকেই দিন আনে দিন খায়। তাদের সমস্যা চরমে। আর একটা শ্রেণী নিত্যনতুন টাকা আয় করেছেন, তাদেরও এখন আয়ের পথ বন্ধ। তারাও হতাশায় আছেন। আমি মনে করি, এদের হতাশ না হয়ে আগের সঞ্চয় থেকে অন্যকে সহযোগিতা করা। হতাশ হয়ে কোনো সমাধানের পথ আসবে না। ধৈর্য্য ধরে আয়ের পথ খুঁজে বের করতে হবে।

পপি (চিত্রনায়িকা): হতাশা একটু তৈরি হয়-ই। আমি মনে করি, আমার যা আছে তা নিয়ে এখন সন্তুষ্ট থাকা উচিত। আফসোস করা উচিত না। এই দুর্যোগ তো সারা জীবন থাকবে না। একটা সময় কাটিয়ে উঠব। আল্লাহ তা’লা বলেছেন ধৈর্য্য ধারণ করতে। আমি হয়তো খাবার বা চলতে পারছি। কেউ কেউ হয়তো দীর্ঘদিন ঘরে বসে থাকার কারণে খাবার জোগাড় করতেও কষ্ট হচ্ছে। বেঁচে থাকলে কাজ করা যাবে। কাজের জন্য হতাশ হওয়া যাবে না। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজে গেলে যদি আপনজন কোনো সমস্যায় পড়ে? তখন এই কষ্টটা কখনো ভোলা যাবে না। আমি  মনে করি, এটা ওপরওয়ালার পরীক্ষা। হতাশ না হয়ে সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করা উচিত। সারা পৃথিবী এখন অচল, এই মুহূর্তে ধৈর্য্য ধরে চলা উচিত।

 

ঢাকা/রাহাত সাইফুল/শান্ত

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়