ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

ছাত্র রাজনীতি বন্ধে সন্ত্রাসী উৎপাদন বাড়বে: ছাত্র ফ্রন্ট

নিউজ ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:২১, ১১ অক্টোবর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ছাত্র রাজনীতি বন্ধে সন্ত্রাসী উৎপাদন বাড়বে: ছাত্র ফ্রন্ট

রাজনৈতিক লেখার কারণেই বুয়েটে আবরাকে হত‌্যা করা হয়েছে, ছাত্র রাজনীতি বন্ধে তার কর্মকাণ্ডকেই একভাবে দায় দেয়া হলো, এতে সন্ত্রাস বাড়বে।

বাসদের ছাত্র সংগঠন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট সভাপতি আল কাদেরী জয় ও সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন প্রিন্স একটি যুক্ত বিবৃতিতে এ কথা বলেন।

তারা বলেন, ‘এটি একটি ভয়ংকর অগণতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত এবং সকল ধরণের বিরোধী মত এবং তার ভিত্তিতে সংগঠিত শক্তিকে দমনের একটি হাতিয়ার। এটি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে একটি প্রতারণাও বটে।

প্রগতিশীল ছাত্রজোটের এই দুই নেতা বল্, কার্যত বুয়েট চলে ৬১ 'র অধ্যাদেশ অনুযায়ী, যে অধ্যাদেশে বুয়েটে ইতোমধ্যেই ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ। দ্বিতীয়ত, বুয়েটে গত এক দশকে ছাত্র রাজনীতি ছিলই না। শুধু ছিল রাজনীতির নামে ছাত্রলীগের চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস, নির্যাতন। আবরার ফাহাদ হত্যাকে কেন্দ্র করে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মত বুয়েটে দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা ছাত্রলীগের এই একচ্ছত্র সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, অগণতান্ত্রিক আচরণ, দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে বুয়েটের শিক্ষার্থীদের পুঞ্জীভূত ক্ষোভ প্রকাশ পেয়েছে।

তারা বলেন, বাস্তবে বুয়েট শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ ছাত্র রাজনীতি নয়, শাসক দলের ছাত্র সংগঠন ছাত্র লীগের রাজনীতির বিরুদ্ধে। ক্যাম্পাসে, হলে হলে টর্চার সেলগুলো একদিনে তৈরি হয়নি। প্রশাসনের নির্লিপ্ততা যা প্রকারান্তরে পৃষ্টপোষকতাযরই নামান্তর, সে কারণেই এই টর্চার সেল গুলো গড়ে উঠেছে এবং টিকে থেকেছে এতদিন ধরে। আমরা এর আগেও দেখেছি বিভিন্ন সময়ে এভাবেই প্রকাশ্যে সাধারণ শিক্ষার্থীদেরকে বিভিন্ন তকমা দিয়ে মারধর করার ঘটনা।

বাম ছাত্রনেতারা অভিযোগ করেন, এর বিরুদ্ধে প্রশাসন কখনোই কোন ব্যাবস্থা নেয় নি। এখানে শিক্ষার্থীদের তাৎক্ষণিক আবেগকে কাজে লাগিয়ে এই ঘটনার মূল উৎস যে অগণতান্ত্রিক চর্চা, সেই অগণতান্ত্রিক চর্চাকেই আড়াল করে আরো শক্তিশালী করবার আয়োজন করেছে বুয়েট প্রশাসন। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই।

ছাত্র ফ্রন্ট নেতারা বলেন, নিহত আবরার ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছিল ভারত বাংলাদেশ সমঝোতা চুক্তি নিয়ে, যেটি একটি রাজনৈতিক বিষয়, তার রাজনৈতিক অধিকার এই চুক্তির বিরোধিতা করা। এই খুনের জন্য দায়ী এই রাজনৈতিক অধিকারকে যারা দমন করে, সবসময় করে আসছে, তারা। কিন্তু রাজনীতি নিষিদ্ধ করার মধ্য দিয়ে প্রকারান্তরে এই খুনের দায় চাপানো হল আবরারের রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে স্ট্যাটাস দেওয়ার উপরেই। এবং এই নিষেধাজ্ঞার মধ্য দিয়েই রাষ্ট্র, বিশ্ববিদ্যালয় এবং সমাজের যে কোন অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগঠিত প্রতিবাদ, যেকোন রাজনৈতিক বিষয়ে বক্তব্য, মতামত দেওয়ার অধিকার দমন করার সবচেয়ে বড় হাতিয়ার বুয়েট প্রশাসনের হাতে তুলে দেওয়া হল।

ছাত্রনেতারা সতর্ক করে দেন, এই সিদ্ধান্ত তাৎক্ষণিক ভাবে চমকপ্রদ মনে হলেও এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। আবরার হত‌্যাকাণ্ডসহ বিভিন্ন সময়ে ঘটে যাওয়া সকল ক্যাম্পাস হত্যাকাণ্ডের বিচার কার্যকর করা এ মূহুর্তে জরুরি, তার সাথে সাথে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হলগুলোতে সন্ত্রাস, অস্ত্র, দখলদারিত্ব, টর্চার সেল, গেস্টরুম ও গণরুমে নির্যাতন বন্ধ করার আরো বেশি জরুরি। তা না হলে আগের মতই প্রশাসন যদি নির্বিকার থাকে, যদি হলের সিটের নিয়ন্ত্রণ প্রশাসনের কাছে না থেকে সন্ত্রাসীদের কাছেই থাকে, তবে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করলেও খুনি উৎপাদন বন্ধ থাকবে না, অত্যাচার বন্ধ হবে না। এই অত্যাচার বন্ধের জন্য প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক সংগ্রাম।

ছাত্র ফ্রন্টের স্পষ্ঠভাবে বলেন, আমরা দাবি জানাচ্ছি অবিলম্বে আবরার সহ সকল ক্যাম্পাস হত্যাকাণ্ডের বিচার ও রায় কার্যকর করতে হবে, হলে হলে টর্চার সেল, গেস্টরুম গণরুমে নির্যাতন বন্ধে প্রশাসনের কার্যকরী ভূমিকা রাখতে হবে, প্রথম বর্ষ থেকেই প্রশাসনিক তত্ত্বাবধানে সকল শিক্ষার্থীর হলের সিটের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে, বিশ্ববিদ‌্যালয়সহ সকল শিক্ষাঙ্গনের গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। গণতান্ত্রিক ভাবে সকল ছাত্র সংগঠনকে বুয়েটসহ সকল ক্যাম্পাসে রাজনীতি করার অধিকার দিতে হবে, রাজনীতির নামে অপরাজনীতির চেষ্টা করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।

প্রসঙ্গত, ১১ অক্টোবর শুক্রবার বিকেলে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) প্রশাসনের সাথে একটি মিটিং এ বসে সেখানকার আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। মিটিং শেষে বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করার ঘোষণা দেওয়া হয়।


নিউজডেস্ক/সাজেদ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়