ছুটি চান হবিগঞ্জের চা শ্রমিকরা
করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে হবিগঞ্জের ৪১টি চা বাগানের শ্রমিকরা ছুটি চান।
জেলার বাহুবল উপজেলার মধুপুর চা বাগানে কাজ করেন রুপালী সাঁওতাল। তিনি জানান, প্রতিদিন গাছ থেকে ২৪ কেজি পাতা সংগ্রহ করেন। এ পাতা জমা দিলে ১০২ টাকা পাওয়া যায়। এ টাকায় খুব কষ্টে চলে তার সংসার।
রুপালী বলেন, ‘সংসার চালাতেই হিমশিম খেতে হয়, আর রোগ হলে দেখবে কে? তাই এ সময় আমরা ছুটি চাই।’ শুধু তিনি না, তার মতো বালিশিরা ও লস্করপুর ভ্যালির আওতাধীন হবিগঞ্জের বাহুবলের ১০টি, নবীগঞ্জের দুইটি, চুনারুঘাটের ২৪টি ও মাধবপুরের পাঁচ চা বাগানের শ্রমিকরা ছুটি চান।
নিয়তী সাঁওতাল, মায়া রবিদাস, অনিতা বাউরী, মাংরী মুণ্ডা, রেবতি সাঁওতালরা জানান, করোনাভাইরাসের কারণে তারা আতঙ্কিত।
শ্রমিকরা জানান, অনেক চা বাগানে করোনাভাইরাসের বিষয়ে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানো হয়নি। এ মুহূর্তে তারা সরকারের কাছে ছুটি চেয়ে পর্যাপ্ত খাবার ও আর্থিক সহযোগিতা কামনা করেন।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রামভজন কৈরি বলেন, ‘করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে সারা দেশের মতো চা শ্রমিকদেরও এই সরকারি ছুটির অন্তর্ভূক্ত করার দাবি জানিয়ে শ্রম মন্ত্রণালয় ও চা বাগান মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশের চা সংসদের কাছে লিখিত আবেদন পাঠানো হয়েছে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে এ সময়ে চা বাগানগুলো বন্ধ রাখার দাবি জানাচ্ছি।’
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের বালিশিরা ভ্যালীর উপদেষ্টা সুভাস রবিদাস বলেন, ‘বাগানের প্রাণ শ্রমিকরা। শ্রমিকরা বাঁচলে বাগান টিকে থাকবে। এ সময়ে করোনাভাইরাসের কারণে পুরো দেশে ছুটি চলছে। আর এখানে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শ্রমিকরা চা পাতা উত্তোলনে কাজ করছেন। এখন দাবি একটাই, চা শ্রমিকদের জন্য ছুটি ঘোষণা করে পর্যাপ্ত পরিমাণে খাবার সহায়তা প্রদান করা হোক।’
তার সঙ্গে একমত পোষণ করেন শ্রমিক নেতা ময়না রবিদাস, মধুপুর বাগান পঞ্চায়েত সভাপতি গোপাল চন্দ্র গড়াইক, সেক্রেটারি হরি নারায়ণ গোয়ালা, বৃন্দাবন বাগান পঞ্চায়েত সভাপতি অধির সাঁওতাল, সেক্রেটারি সিতা রাম রাজভর, কামাইছড়া বাগান পঞ্চায়েত সভাপতি বিমল ভর, শ্রমিক নেতা শান্ত সাধু, অচিন্ত রবিদাসরা।
বাহুবলের আমতলী চা বাগানের ব্যবস্থাপক সোহেল রানা পাঠান বলেন, ‘শ্রমিকরা বাগানের প্রাণ। তাদের সুরক্ষার জন্য মাস্ক ও সাবান বিতরণ করা হয়েছে। যেকোনো প্রয়োজনে শ্রমিকদের পাশে আমরা আছি।’
এ অবস্থায় ভ্যালীর চা বাগানগুলোতে বহিরাগতদের আগমন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বিষয়টি ভ্যালীর সভাপতি ও চন্ডিছড়া চা বাগান সিনিয়র ব্যবস্থাপক মো. রফিকুল ইসলাম উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের কাছে চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন।
রফিকুল ইসলামের দাবি, চা বাগানের শ্রমিকদের মধ্যে কখনোই এ ভাইরাস ছড়াবে না যদি বহিরাগতরা বাগানে না আসে। কারণ, বাগানে শ্রমিকরা ছাড়া আর কেউই নেই। তাই চা শ্রমিকদের নিরাপদ রাখতে আমরা চা বাগানে বহিরাগতদের আসতে নিষেধ করে দিয়েছি। বিষয়টি প্রশাসনকেও জানিয়েছি।
চা বাগানগুলো খোলা রাখার জন্য সরকারের নির্দেশ রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা চা শ্রমিকদের নিরাপত্তার জন্য যা যা করা দরকার তাই করছি।’
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান বলেন, ‘চা শ্রমিকদের ছুটির ব্যাপারে সরকারিভাবে কোনো নির্দেশনা আসেনি। তবে শ্রমিকদের সুরক্ষার ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি রাখতে সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী অফিসারদেরকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
হবিগঞ্জ/মামুন/ইভা
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন