ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

জনবল সংকটে সুবিধা কাজে লাগছে না

হাসিবুল ইসলাম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:২৭, ১৫ নভেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
জনবল সংকটে সুবিধা কাজে লাগছে না

তীব্র জনবল সংকট, উন্নত প্রযুক্তির মেশিন সম্পর্কে অপারেটররা অভ্যস্ত না হওয়ায় কারখানার শ্রমিকদের দক্ষতা এবং কাজের গুণগতমান বৃদ্ধি পেলেও সার্বিকভাবে উৎপাদন বৃদ্ধি পায়নি।

যাত্রীবাহী গাড়ি বৃদ্ধির লক্ষ্যে জনবল সংকটের শূন‌্য পদ পূরণ, মেরামতের জন্য রাজস্ব খাতে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ এবং আরও কিছু মেশিন প্রতিস্থাপনসহ ব্রডগেজ গাড়িগুলোর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কারখানার অবকাঠামো উন্নয়ন প্রয়োজন।

সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার আধুনিকীকরণ প্রকল্পের ওপর চলতি বছরের মে মাসে প্রভাব মূল্যায়ন প্রতিবেদন তৈরি করেছে পরিকল্পনা কমিশনের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)।

প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানা অতি পুরাতন অবকাঠামো, জরাজীর্ণ এবং মেশিনারিজের কারণে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী যাত্রীবাহী গাড়ি, ওয়াগন, ক্রেন এবং বয়লার মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজ এবং যন্ত্রাংশ উৎপাদন সুষ্ঠুভাবে করা যাচ্ছিল না। বাংলাদেশ রেলওয়ের যাত্রীবাহী গাড়ি এবং ওয়াগন মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজসহ উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কারখানাটি আধুনিকায়ন করা জরুরি হয়ে পড়ে। এ প্রেক্ষিতে সৈয়দপুর রেলওয়ে ওয়ার্কশপ আধুনিকায়ন করতে ১২২ কোটি টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্পটি মার্চ ২০০৯ থেকে জুন ২০১২ সালে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০০৯ সালের এপ্রিলে অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। পরবর্তী সময়ে প্রকল্পটির মেয়াদ এবং ব্যয় বৃদ্ধি করে সর্বশেষ এপ্রিল ২০১৭ সালে ১৫৩ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়িত হয়।

এ প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলদেশ রেলওয়ের ব্রডগেজ ও মিটারগেজ যাত্রীবাহী গাড়ি এবং ওয়াগনের ক্রমবর্ধমান মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ চাহিদা পূরণের উদ্দেশ্যে ১৭টি ওয়ার্কশপ মেরামত করা হয়। এছাড়া ৪৩ ধরনের মেকানিক্যাল ও ১৩ ধরনের ইলেকটিক্যাল প্ল্যান্টস অ্যান্ড মেশিনারিজ প্রতিস্থাপন এবং ডিপ টিউব-ওয়েল স্থাপনসহ ১টি ওভারহেড পানির ট্যাংক নির্মাণপূর্বক কারখানার দক্ষতা ও উৎপাদন ক্ষমতা এবং গুণগতমান বৃদ্ধিই ছিল প্রকল্পটির মূল উদ্দেশ্য।

প্রতিবেদনে প্রকল্পটির ঝুঁকির বিষয়ে বলা হয়েছে, বর্তমান কারখানায় ৬৭ শতাংশ অনুমোদিত পদ শূন্য আছে। যে হারে লোক কারখানার কাজে নিয়োজিত আছেন, তার থেকে বেশি হারে অবসরে যাচ্ছেন। তাই যথাসম্ভব দ্রুত সৈয়দপুর কারখানার শূন্য পদগুলো পূরণ করতে হবে। কারখানার জনবল সঙ্কট দূর করার জন্য অবসরের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে নিয়মিতভাবে নতুন নিয়োগের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এছাড়া কারখানার জনবলের তীব্র সংকটের কারণে প্রকল্পের সুবিধা কোনো কাজে লাগানো যাচ্ছে না। ফলে সংগৃহীত মেশিনগুলো প্রত্যাশা অনুযায়ী ব্যবহৃত হচ্ছে না।

এতে আরও বলা হয়েছে, অবকাঠামোসহ যাত্রীবাহী গাড়ি ও মেশিনাদির যথাযথ রক্ষণাবেখক্ষণের জন্য রাজস্ব খাতে প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দ নেই। নতুন নিয়োগ না হওয়ায় প্রযুক্তির উন্নয়নের সাথে খাপ খাওয়ানোর জন্য যথাযথ কারিগরি জ্ঞান সম্পন্ন জনবল তৈরি হচ্ছে না। কারখানার অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা দুর্বল। কারখানার অভ্যন্তরে শপগুলোতে অগ্নি নির্বাপক থাকলেও প্রয়োজনের তুলনায় কম। যেহেতু কারখানায় একটি ওভার হেড ট্যাঙ্ক আছে তাই শপগুলোকে কেন্দ্র করে পানির মজুত করা যেতে পারে। বর্তমান চলাচলরত ব্রডগেজ গাড়িগুলোর যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রকল্প থেকে ক্রয়কৃত মেশিনগুলো কারখানার সক্ষমতা বৃদ্ধিতে পর্যাপ্ত নয়।

প্রকল্পের দুর্বল দিকগুলো হচ্ছে, অপরিহার্য ও শুধু রেলওয়ের জন্য ব্যবহার্য কিছু মেশিন উন্নত দেশ থেকে সংগ্রহ করা সমীচীন ছিল। এগুলো চীন ও ভারত থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। বর্তমানে সমস্যা না থাকলেও অদূর ভবিষ্যতে এগুলো নির্ভরযোগ্য সার্ভিস দিতে পারবে বলে প্রতীয়মান হয় না। একই কোয়ালিটির হলেও এসব মেশিনের আয়ুষ্কাল কারখানার অন্য মেশিনগুলোর সমকক্ষ হবে না। চাইনিজ মেশিনারিজের সফটওয়ার ইংরেজীতে থাকায় তথ্য বুঝতে অসুবিধা হয়। আরও কিছু প্রয়োজনীয় মেশিন প্রতিস্থাপন করা দরকার ছিল, প্রয়োজনীয় মেশিনগুলো যথাসময়ে প্রতিস্থাপন না হলে অদূর ভবিষ্যতে কারখানার উৎপাদন ব্যহত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

প্রকল্পে ২৫ জন জনবল নিয়োগের ব্যবস্থা থাকলেও প্রকল্প পরিচালক ছাড়া ১ জন অনবিজ্ঞ এসএই এবং ১ জন করনিক নিয়োগ করা হয়, তাই প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যবস্থাপনার ঘাটতি ছিল।

প্রকল্পটি নিয়ে পরামর্শ দিয়ে আইএমইডি বলেছে, বর্তমানে রেলপথের সম্প্রসারণ ও রোলিংস্টকের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং নতুন নতুন ট্রেন চালু হতে যাচ্ছে। যাত্রী ও মালবাহী গাড়ির চলাচলকে স্বাভাবিক রাখতে হলে লোকোমোটিভ, ক্যারেজ ও ওয়াগনগুলোকে যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য রেলওয়ে কারখানাগুলোকে পুরোপুরি আধুনিকায়ন করতেই হবে। রেলের দীর্ঘস্থায়ী উন্নয়নের জন্য রেলওয়ে কারখানাগুলোকে ঢেলে সাজাতে হবে। টেকসই উন্নয়নের জন্য উন্নত মানসম্পন্ন যন্ত্রাংশ, মেশিন এবং কারিগরি জ্ঞান সম্পন্ন শ্রমিক নিয়োগ দিতে হবে।

 

ঢাকা/হাসিবুল/হাকিম মাহি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়