ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

জলে ভাসা লেবু!

অলোক সাহা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:৫৫, ৩০ জুলাই ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
জলে ভাসা লেবু!

ঝালকাঠি সংবাদদাতা: চারদিকে তাকালে মনে হবে কাড়ি কাড়ি লেবু পানিতে ভাসছে। যেন জলে ভাসা লেবু’র সমারোহ।

ঝালকাঠির ভিমরুলীতে ভাসমান লেবুর হাট দেখে যে কেউই মুগ্ধ হবেন। লেবু মৌসুমে জমে উঠেছে ভিমরুলীর নৌকায় ভাসমান এই লেবুর হাট।

প্রতিদিন এখানে লাখ লাখ কাগজি লেবু কেনা বেচা হচ্ছে। পাইকাররা এখানের ডিঙি নৌকা থেকে লেবু কিনে নিয়ে গাড়িতে করে ঝালকাঠি কিংবা বরিশালের আড়তে নিয়ে বিক্রি করছে। আবার অনেকে ট্রলারের মাধ্যমে নিয়ে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়।

ঝালকাঠির বাউকাঠি, শতদশকাঠি, ভিমরুলী, কাফুরকাঠি, আটগড়, গাভারামচন্দ্রপুর, পোষন্ডা, ডুমুরিয়া, খেজুরা, কির্ত্তীপাশা, মিরাকাঠিসহ ২২ গ্রাম এখন লেবুর ঘ্রাণে ভাসছে।

প্রতিদিন এসব গ্রামের কৃষকরা গাছ থেকে লেবু সংগ্রহ করে নৌকায় স্থানীয় ভিমরুলী বাজারে নিয়ে আসছে। এখানে অপেক্ষমান পাইকাররা নৌকায় বসেই কৃষকের লেবু কিনে রাখছে নৌকা থেকেই। একদিকে নৌকায় লেবুর হাট অন্যদিকে পানির উপরে সবুজের সমারোহ দেখে প্রাণ জুড়িয়ে যায়।

গত বছরের তুলনায় এবার লেবুর ফলন একটু কম। তাই দাম একটু বেশি। গত বছর ১ পোন  (৮০টি) লেবু ছিলো দেড়শ’ টাকা । এবার তা বিক্রি হচ্ছে ২শ’ টাকায়। এসব গ্রামের কৃষকরা কাঁদি কেটে লেবুর চাষ করছে যুগ যুগ ধরে। এক একটি কাঁদি ১শ’ থেকে ১শ’ ১০ হাত লম্বা এবং ৭/৮ হাত চওড়া হয়। প্রতিটি কাঁদিতে ২২ টি গাছ লাগানো যায়। এরকম ১ বিঘার কাঁদিতে লেবু চাষ করতে খরচ হয় ৫০ হাজার টাকা। ফল ধরার পরে প্রতি বছর লেবু বিক্রি করে দেড় থেকে দু’লাখ টাকা পাওয়া যায়।

এ হিসেবে ২২ গ্রামের লেবু বিক্রি করে প্রতি বছরে কৃষকরা আয় করছে দেড় থেকে দু’কোটি টাকা। লেবুর পাইকার মিলন ব্যাপারী জানান, ভমিরুলী হাটে পোন (৮০ পিস) প্রতি লেবুর সাইজ অনুযায়ী দেড়শ’ থেকে ২শ’ টাকায় ক্রয় করেন। পটুয়াখালী থেকে ট্রলার আসলে সেই ট্রলারে পটুয়াখালী মোকামে পাঠানো হয়। ওখানের কাঁচামাল বিক্রেতাদের আগেই চুক্তি করা থাকে।

ভিমরুলী গ্রামের লেবু চাষি মানিক মজুমদার বলেন, ‘একবার লেবু গাছ লাগানোর পর তা একাধারে ২০/২৫ বছর ফলন দেয়। বছরে ৩ বার ফল আসে। ঝালকাঠির এ কাগজি লেবুর কদর ঢাকা, বরিশাল, ফরিদপুর, মাদারিপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়।’

তিনি বলেন, ‘পাইকারদের কাছে এককালিন নগদ টাকায় আমরা বাগানও বিক্রি করি।’

শতদশকাঠির লেবু চাষি অতুল হালদার বলেন, আমরা সহজ শর্তে ঋণ পেলে এবং কৃষি বিভাগের সহযোগিতা পেলে লেবু চাষ আরো সম্প্রসারণ করতে পারি। কিন্তু তা পাচ্ছিনা। সরকার কৃষকদের সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করার কথা শুনছি কিন্ত তার সুফল আমাদের ভাগ্যে জোটেনা। তাই চড়া সুদে এনজিওর কাছ থেকে ঋণ নিতে হচ্ছে।’

ঝালকাঠি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোঃ ফজলুর রহমান জানান, ঝালকাঠি সদর উপজেলা উত্তরাঞ্চলের চাষিরা ব্যাপকভাবে কাগজী লেবুর চাষ করেন। এ লেবু ছোট হলেও ভিতরে পর্যাপ্ত রস থাকে। লেবু চাষিদের কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সার্বিক পরামর্শ দেয়া হয়।


রাইজিংবিডি/ ঝালকাঠি/৩০ জুলাই ২০১৯/ অলোক সাহা/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়