ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

জাতীয় লিগে খুলনার এত সাফল্যের রহস্য কী?

আব্দুল্লাহ এম রুবেল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৫৬, ১৯ মে ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
জাতীয় লিগে খুলনার এত সাফল্যের রহস্য কী?

জাতীয় ক্রিকেট লিগ মানেই খুলনার সাফল্য। মোট ২১ বার হওয়া দেশের প্রথম শ্রেণী ক্রিকেটের এই প্রতিযোগিতায় এখনও পর্যন্ত এককভাবে সর্বোচ্চ ৭ বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে খুলনা বিভাগ। দুই বার হয়েছে রানার্স আপ। এর মধ্যে হ্যাটট্রিক শিরোপাও রয়েছে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের এই দলটির। শেখ সালাহ উদ্দিন, হাসানুজ্জামান ঝড়ুদের হাত দিয়ে গড়া খুলনা সাফল্য পেয়েছিলো মাশরাফি বিন মুর্তজা, হাবিবুল বাশার সুমনদের নিয়ে। যে সাফল্যে ধরে রাখতে এখন অবদান রাখছেন হালের ক্রিকেটার মেহেদী মিরাজ, সোহান-আফিফরাও।

জাতীয় ক্রিকেট লিগে সব সময়ই আধিপত্য ধরে রাখা খুলনার, সাফল্যের রহস্য কী? কিভাবেই এই সাফল্যের ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে খুলনা। এই নিয়ে জানার চেষ্টা করছেন রাইজিংবিডি’র এই প্রতিবেদক। কথা বলেছেন খুলনা দলের সাবেক ক্রিকেটার হাবিবুল বাশার সুমনের সাথে। এছাড়াও খুলনা টিমের সদস্য নন কিন্তু জাতীয় লিগ পর্যবেক্ষন করছেন, তাদের ভাবনাও জানার চেষ্টা করেছেন পাঠকদের জন্য।

বাংলাদেশ টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার প্রাক্কালে ১৯৯৯-২০০০ মৌসুমে শুরু হয় জাতীয় ক্রিকেট লিগ। শুরুর পরের মৌসুমেই প্রতিযোগিতাটি আইসিসির প্রথম শ্রেনীর স্বীকৃতি আদায় করে নেয়। শুরুতে এই প্রতিযোগিতা লংগার ভার্সন ও ওয়ানডে দুই ফরমেটে হতো।

জাতীয় ক্রিকেট লিগে প্রথম শিরোপার মুখ দেখতে বেশীদিন অপেক্ষা করতে হয়নি খুলনা বিভাগকে। ২০০২-০৩ মৌসুমে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন হয় খুলনা। সে থেকে সর্বশেষ আসর মিলিয়ে ৭ বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে খুলনা।
 


খুলনা বিভাগের হয়ে দীর্ঘদিন সার্ভিস দিয়েছেন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ও বর্তমান নির্বাচক হাবিবুল বাশার সুমন। জাতীয় দল নির্বাচনে ভূমিকা রাখতে হয় বলে জাতীয় লিগের খোঁজ নিয়মিত রাখতে হয় তাকে। নির্বাচক হিসেবেই যেতে হয় বিভিন্ন ভেন্যুতে, বিভিন্ন দলের অবস্থা জানতে হয়। সেই হাবিবুল বাশার সুমন মনে করেন খুলনা যেমন দল, তাতে ৭ বার চ্যাম্পিয়ন হওয়াটা অনেক কমই হয়ে গেছে।

জাতীয় ক্রিকেট লিগে দলটির সাফল্যের রহস্য জানাতে গিয়ে সাবেক এই অধিনায়ক বলেন, ‘খুলনার আরও বেশীবার চ্যাম্পিয়ন হওয়া উচিত ছিল। আসলে খুলনার সাফল্যের মুল কারণ, এই দলটা সব সময়ই এক হয়ে খেলে। বাংলাদেশ দলে খেলাটা নিঃসন্দেহে সবথেকে বেশী গর্বের। আর এই বিভাগের খেলোয়াড়রা জাতীয় দলের পরেই এই টিমে খেলতে সব থেকে বেশী গর্ববোধ করে।’

নিজের সময়ের কথা মনে করে হাবিবুল আরও যোগ করেন, ‘জাতীয় দলের পর আমি নিজেই সব থেকে বেশী গর্ব করতাম খুলনা বিভাগের হয়ে খেলতে পেরে। খুলনা বিভাগ সব সময়ই তারকা সমৃদ্ধ দল। আমরা যখন খেলেছি তখন প্রায় জাতীয় দলটাই ছিলো আমাদের খুলনা দলে। এমনও হয়েছে জাতীয় দলের তারকা খেলোয়াড়কেও বসে থাকতে হয়েছে। কিন্তু সবাই একটা দল হিসেবেই খেলেছি। জয়ের জন্য বা মাঠে সেরাটা দেওয়ার জন্য এই দলের সবাই এক হয়ে যেতো।’

তিনি আরও বলেন, ‘অনেক সময় দেখা যায়, কোন দলে তারকা খেলোয়াড় বেশী থাকলে ওই দলটায় ইগো প্রবলেম চলে আসে। আর এটা ক্রিকেটে স্বাভাবিকই। কিন্তু আমি জানি খুলনায় এত এত তারকা থাকলেও কখনো দলের ক্রিকেটারের মধ্যে ইগো প্রবলেম হয়নি। এখানে সিনিয়র-জুনিয়র কম্বিনেশনটাও খুব ভালো।’
 


এক সময় জাতীয় দলে সব থেকে বেশী পেস বোলার সাপ্লাই দিতো খুলনা বিভাগ। মঞ্জুরুল ইসলাম থেকে শুরু করে মাশরাফি বিন মুর্তজা, সৈয়দ রাসেল, আল আমিন হোসেন, রুবেল হোসেন, রবিউল ইসলাম শিবলুদের মতো পেসার দিয়েছে খুলনা। আর সর্বশেষ সংযোজন তো বাংলাদেশের নির্ভরতার প্রতীক তারকা পেসার মুস্তাফিজুর রহমান। তবে মুস্তাফিজের পর নতুন পেস বোলার পাচ্ছে না খুলনা।

হাবিবুল বিশ্বাস করেন ভবিষ্যতেও খুলনা বিভাগ জাতীয় ক্রিকেট লিগে তাদের এই সাফল্য ধরে রাখতে পারবে। তবে নতুন পেস বোলার না পাওয়াটা খুলনার জন্য একটা দুর্বল দিক হতে পারে বলে মনে করছেন তিনি। 

জাতীয় ক্রিকেট লীগে খুলনার সঙ্গে সবথেক বেশী পাল্লা দিয়েছে রাজশাহী বিভাগ। তারা এখন পর্যন্ত ৬ বার চ্যাম্পিয়ন জাতীয় লিগে। যদিও সর্বশেষ আসরে রাজশাহী রেলিগেটেড হয়ে দ্বিতীয় স্তরে নেমে গেছে। সেই রাজশাহী বিভাগীয় দলের সাবেক কোচ মো: শাহনেওয়াজ শরীফ শানু মনে করেন খুলনায় তারকা ক্রিকেটার ও উঠতি খেলোয়াড়ের সংখ্যাটা বেশী। ফলে প্রতিপক্ষ দলের থেকে সব সময়ই মানসিকভাবে এগিয়ে থাকে খুলনা।

এই কোচ বলেন, ‘খুলনা সব সময় যোগ্যতা সম্পন্ন প্রতিভাবান খেলোয়াড় যোগান দেয়। একইসাথে দলটিতে জাতীয় দলের একাধিক তারকা খেলোয়াড় ও উঠতি ক্রিকেটার একই সাথে খেলে। আর স্বাভাবিকভাবে যে কোন প্রতিপক্ষই এমন তারকা খেলোয়াড়ের বিপক্ষে মাঠে নামার সময় মেন্টালি একটু পিছিয়ে থাকবে। ঠিক একই ভাবে খুলনা দলের মনোবল আরও বেশী চাঙা হয়ে থাকে।’

জাতীয় ক্রিকেট লিগে ২০০২-০৩ মৌসুমে প্রথমবার শিরোপা জয় করে খুলনা। খুলনার ওই চ্যাম্পিয়ন টিমের সদস্য মো: সেলিম। যিনি এখন বিসিবির গেম ডেভলেপমেন্টের প্রশিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সর্বশেষ জাতীয় লিগে ঢাকা বিভাগের কোচও ছিলেন। তিনিও মনে করেন খুলনায় তারকা খেলোয়াড়ের সংখ্যাটা বেশী, এটাই সাফল্যের অনেক বড় কারণ।


ঢাকা/কামরুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়