ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

জাপানের গণমাধ‌্যমে সশস্ত্র রোহিঙ্গাদের সংগঠিত হওয়ার খবর

সাজেদ রোমেল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৩২, ২১ জানুয়ারি ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
জাপানের গণমাধ‌্যমে সশস্ত্র রোহিঙ্গাদের সংগঠিত হওয়ার খবর

বিশ্বের সর্বাধিক পঠিত দৈনিক জাপানের আসাহি শিম্বুন পত্রিকায় সশস্ত্র সংগঠন আরকান রোহিঙ্গা সেলভেশন আর্মির (আরসা) সংগঠিত হওয়ার খবর প্রকাশিত হয়েছে।

খবরে বাংলাদেশে ক‌্যাম্পে থাকা রোহিঙ্গাদের হত‌্যা, নির্যাতন ও তাদের দেশে ফেরাতে ভীতি প্রদর্শনের অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। যাতে পরোক্ষভাবে মিয়ানমারের পক্ষেই সাফাই গাওয়া হয়েছে।

‘রিফুইজি ফ্রম মিয়ানমার সিট অ‌্যাটাক ফ্রম দেয়ার প্রোটেক্টরস’ (মিয়ানমারের উদ্বাস্তুরা হামলাকারী হিসেবে ‘রক্ষকের’ নাম বলছে) খবরটিকে প্রধান শিরোনাম করে পত্রিকাটি।

কক্সবাজার থেকে রিউতো সিমোইতায়ার নামে সাংবাদিকের পাঠানো প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরার ইচ্ছা থাকলেও তারা তাদের স্বঘোষিত রক্ষক আরসার প্রতিশোধমূলক হামলার ভয়ে ভীতসন্ত্রস্ত থাকে।’

ওই জাপানি প্রতিবেদক তার নিজের বয়ানে লিখেছেন, ‘আমি মিয়ানমারের পশ্চিমে রাখাইন রজ্যে মুসলমান ও বৌদ্ধদের সংঘাতের খবর প্রথম শুনি ২০১৯ সালের আগস্টে। মিয়ানমারে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইচিরো মারুইয়ামা সেসময় সংঘাত কবলিত অঞ্চলে গিয়ে কথা বলেন বাংলাদেশ থেকে ফিরে আসা রোহিঙ্গাদের সঙ্গে। ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা মুসলমানদের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের অভিযানে সাত লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশ আশ্রয় নেয়ার ঘটনায় আন্তর্জাতিক অঙ্গণে সমালোচনা তখন তুঙ্গে।’

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিকভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ এলেও সেটা নিয়ে ‘অফিসিয়াল রুটে’ যায়নি কেউ। এরই মধ‌্যে কয়েক হাজার রোহিঙ্গা ফিরে গেছে বলেও বলা হয় প্রতিবেদনে।

প্রতিবেদক বলেন, ‘‘ফিরে আসা রোহিঙ্গারা বলেন, তারা এখনো মনে করে- মিয়ানমার এখনো একটা বিপদজনক জায়গা। আমি যখন জিজ্ঞেস করলাম অনিরাপদ দেশে তারা কেন ফিরছে, তারা কক্সবাজার ক‌্যাম্পে তাদের ওপর আরসার হামলার কথা উল্লেখ করে।

‘তারা আরো বলেছে, যারা মিয়ানমার ফিরতে চায়, তাদের ভয়-ভীতি দেখিয়েছে আরসার সদস‌্যরা। সরকারিভাবে দেশে ফেরাটাকে আরসা দেখবে মিয়ানমার সরকারের প্রস্তাবকে মেনে নেয়া যা সেদেশের সরকারের বিরুদ্ধে আরসার যুদ্ধকে দুর্বল করে দেবে।”

রোহিঙ্গারা জীবনের ভয়ে আরসার বিষয়ে মুখ খুলতে নারাজ বলে দাবি করে প্রতিবেদক রিউতো সিমোইতায়ার জানান, রোহিঙ্গারা শুধু বলতে থাকে, আরসা তাদের জন‌্যই যুদ্ধ করছে। কিন্তু কক্সবাজারের ক‌্যাম্পের কোনো সমস‌্যা হয় কি না জানতে চাইলে চুপ করে থাকে তারা।

রোহিঙ্গাদের ৯০ শতাংশ মুসলিম, কিছু সংখ‌্যক হিন্দুও মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসে আশ্রয় নিয়েছে বাংলাদেশে।

সুভাষ (৬০) নামে এক হিন্দু উদ্বাস্তু ওই প্রতিবেদককে বলেছে, তিনি এবং আরো ১০জন হিন্দু উদ্বাস্তুকে এক বছর আগে ক‌্যাম্প থেকে দূরে নির্জন জায়গায় বৈঠকে ডেকে পাঠায় আরসার সদস‌্যরা। পরে আরসার সদস‌্যরা তাদের নির্যাতন করে, তাদের ১১ জনের মধ‌্যে ৯ জন ক‌্যাম্পে ফিরতে দিয়েছিল। বাকি দুজনের খবর আজো কেউ জানে না। তার ধারণা, তাদের হত‌্যা করা হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক হিন্দু উদ্বাস্তু জানিয়েছে, তাকে জোর করে মিয়ানমারের অত‌্যাচার-নির্যাতনের ভিডিও করে ফেইসবুকে ছড়িয়ে দেয় আরসার সদস‌্যরা।

এছাড়া ইউনুস নামে মুসলমান উদ্বাস্তুর আরসার সদস‌্যদের অত‌্যাচার নির্যাতনের বর্ণনাও তুলে ধরা হয় আসাহি শিম্বুন পত্রিকার প্রতিবেদনে।

কক্সবাজারের ক‌্যাম্পের কাছে এক যুবককে আরসার সদস‌্যদের দ্বারা হত‌্যার অভিযোগ তুলে ধরা হয় জাপানের ওই পত্রিকার প্রতিবেদনে। এছাড়া রাতের অন্ধকারে বিস্তৃত ক‌্যাম্পে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সদস‌্য এবং এনজিও কর্মীরা যখন থাকে না, তখন আরসার রাজত্ব চলে বলে দাবি করা হয় ওই পত্রিকায়।

রোহিঙ্গা ক‌্যাম্পে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন, অনেকগুলো আন্তর্জাতিক সাহায‌্য সংস্থার সঙ্গে ওই প্রতিবেদক কথা বললেও বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী কোনো সংস্থার বক্তব‌্য ছাড়াই অনলাইনে চার পাতার ওই প্রতিবেদন ছাপানো হয়।


ঢাকা/সাজেদ/সনি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়