ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

জাপার কাউন্সিল আজ: নেতৃত্বে কাদের-রাঙ্গা, যাচ্ছেন না রওশন

মোহাম্মদ নঈমুদ্দীন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:২৭, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
জাপার কাউন্সিল আজ: নেতৃত্বে কাদের-রাঙ্গা, যাচ্ছেন না রওশন

সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রয়াত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে ছাড়া তাঁর রেখে যাওয়া জাতীয় পার্টির ৯ম কাউন্সিল আজ।

শনিবার সকাল ১০টায় রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশনের বাইরে খোলা জায়গায় হবে দলের এই কেন্দ্রীয় কাউন্সিল। সকালে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান, নেতাদের বক্তব্য, বিদায়ী কমিটির সাংগঠনিক রিপোর্ট পেশ, গঠনতন্ত্র অনুমোদন ও বিদায়ী কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে জিএম কাদের এর বক্তব্যের মধ্যদিয়ে প্রথম অধিবেশনের সমাপ্তি ঘটবে।

দুপুরে দ্বিতীয় অধিবেশনে অনুষ্ঠিত হবে দলের নেতৃত্ব নির্বাচন। গঠিত হবে আগামী তিনবছরের জন্য জাতীয় পার্টির নতুন কমিটি। নির্বাচন কমিশনের নেতৃত্বে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কাউন্সিলে সারাদেশ থেকে ৮ হাজার ডেলিগেট সম্মেলনে যোগ দেয়ার কথা রয়েছে। সম্মেলনে যোগ দিতে রাতেই অধিকাংশ ডেলিগেট ঢাকায় চলে এসেছেন। বাকীরা সকালে এসে পৌছাবেন। ডেলিগেট ছাড়াও সারাদেশ থেকে নেতাকর্মীরা আসছেন সম্মেলনে।

রওশন-কাদের- রাঙ্গাই জাপার নেতৃত্বে

নতুন কমিটিতে কাউন্সিলরদের মৌখিক ভোটে দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে রওশন এরশাদ, চেয়ারম্যান হিসেবে জিএম কাদের নির্বাচিত হবেন, এটা অনেকটা চূড়ান্ত হয়ে আছে। কাউন্সিলরদের দ্বিমত না থাকলে এবং আর কোন প্রার্থী না হলে কাউন্সিলরদের মৌখিক ভোটে সম্মেলনেই দলের মহাসচিব নির্বাচন করা হবে। আর দলের মহাসচিব হিসেবে বহাল থাকছেন বর্তমান মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা। তবে মহাসচিব নির্বাচনের ক্ষেত্রে কৌশল নিতেও পারেন জিএম কাদের। কাউন্সিলের পরেও তার নাম ঘোষণা করতে পারেন তিনি। তাছাড়া দলের কো চেয়ারম্যান ও প্রেসিডিয়াম সদস্যদের নামও পরে ঘোষণা দেবেন দলটির নতুন চেয়ারম্যান জিএম কাদের। জিএম কাদের এর নেতৃত্বে সিনিয়র নেতাদের নিয়ে জাতীয় পার্টি নতুন বছরে নতুন যাত্রা শুরু করবে।

সম্মেলনে যাচ্ছেন না রওশন:

সকাল ১০ টায় অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় পার্টির সম্মেলনে সভাপতিত্ব করবেন দলের চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের। দলের প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের অবর্তমানে নতুন কমিটিতে তার সহধর্মীনি রওশন এরশাদকে প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে রাখার সিদ্ধান্ত হলেও দলের কাউন্সিলে তাকে দেখা যাবে না। দলের রওশনপন্থী প্রায় সবাই যোগ দেয়ার কথা থাকলেও খোদ রওশন এরশাদ কাউন্সিলে যাচ্ছে না বলে তার ঘনিষ্টজন জানিয়েছেন। ফলে দলের নেতৃত্ব ও কতৃত্ব নিয়ে দেবর ভাবীর দ্বন্ধ রয়ে গেছে, এমনটাই মনে করেন দলটির নেতাকর্মীরা।

রওশনপন্থী দলের এক সিনিয়র নেতা জানান, ম্যাডাম প্রধান পৃষ্ঠপোষকের পদ নিতে আগ্রহী নন। জাতীয় পার্টি সামাজিক কোনো ক্লাব নয় যে তিনি এটার প্রধান পৃষ্ঠপোষক হবেন। রাজনৈতিক দলে এমন পদ হাস্যকরও। এ কারণে আজকের কাউন্সিলে তিনি যোগ দিচ্ছেন না।

মিছিল, মিটিংয়ে সম্মেলনের প্রস্তুতি সম্পন্ন:

জাতীয় পার্টির ৯ম কাউন্সিলের সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন। রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশনে সম্মেলনের বিশাল প্যান্ডেল, মঞ্চ প্রস্তুত। ডেলিগেটদের জন্য সারিবদ্ধভাবে চেয়ার বসানো আছে। খাবার পানি, চিকিৎসা কেন্দ্রসহ প্রয়োজনীয় সবকিছুই থাকছে সম্মেলনে। সম্মেলনের বাইরে প্রজেক্টর বসানো হয়েছে যাতে চারদিকে, রাস্তায়ও নেতাকর্মীরা সম্মেলনের অনুষ্ঠান দেখতে পায়।

সম্মেলনের সর্বশেষ প্রস্তুতি দেখতে রাতে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশনে যান দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদের, সাবেক মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা, জিয়া উদ্দিন আহমেদ বাবলু, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, সাহিদুর রহমান টেপা, লিয়াকত হোসেন খোকাসহ নেতাকর্মীরা। গভীর রাতে সম্মেলনস্থল পরিদর্শন করেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য মীর আব্দুস সবুর আসুদের নেতৃত্বে জাপার যুগ্ম মহাসচিব আশরাফ সিদ্দিকী, রাজ্জাক খান, মাসুদুর রহমান চৌধুরী, মাসুদুর রহমান মাসুম, সোলায়মান সামিসহ নেতাকর্মীরা। এর আগে মধ্যরাতে সম্মেলনস্থল পরিদর্শনে যান দলের মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গার নেতৃত্বে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য সাহিদুর রহমান টেপা, লিয়াকত হোসেন খোকা, প্রেসিডিয়াম সদস্য রেজাউল ইসলাম ভুইয়া, যুগ্ম মহাসচিব হাসিবুল ইসলাম জয়, মনিরুল ইসলাম মিলনসহ নেতারা। কাউন্সিলকে ঘিরে নেতাকর্মীদের পদচারনায় রাত থেকে মুখর রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন ও কাকরাইলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়।

সম্মেলনের সর্বশেষ প্রস্তুতি সারতে শুক্রবার রাতে দলের প্রত্যেকটি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা বৈঠক করেন। শ্যামপুর-কদমতলী নির্বাচনী এলাকায় রাতে নেতাকর্মীদের দিক নির্দেশনা দেন জাপার সাংসদ সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা। এসময় দলের যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক সুজনদে, কেন্দ্রীয় সদস্য মাসুক রহমানসহ থানা ও ওয়ার্ড নেতারা উপস্থিত ছিলেন। বাবলার নির্বাচনী এলাকা থেকে ৫ থেকে ৮ হাজার নেতাকর্মী সম্মেলনে যোগ দেবেন বলে জানান সুজন দে। তবে সবচাইতে বেশি নেতাকর্মী যোগ দেবেন প্রেসিডিয়াম সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকার নির্বাচনী এলাকা থেকে। ১০ হাজার নেতাকর্মী নিয়ে ভোরেই সম্মেলনে যোগ দেবেন তিনি। তাদের সঙ্গে খোকার নেতৃত্বাধীন স্বেচ্ছাসেবক পার্টির নেতাকর্মীরা যোগ দেবেন।

লিয়াকত হোসেন খোকা জানান, আমার সঙ্গে নেতাকর্মীরা ফজরের নামাজ আদায় করবেন। তারপর আমরা ঢাকা রওয়ানা দেবো। কমপক্ষে আমাদের ১০ হাজার নেতাকর্মী সম্মেলনে থাকবেন।

সম্মেলনের সর্বশেষ প্রস্তুতির অংশ হিসেবে শুক্রবার রাতেই দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য, যুবসংহতির সভাপতি আলমগীর সিকদার লোটন ও সেক্রেটারি ফখরুল আহসান শাহজাদার নেতৃত্বে সংগঠনটির নেতাকর্মীরা মিছিল করেন। এসময় যুবসংহতির হেলাল উদ্দিন, মিয়া আলমগীর, দ্বীন মোহাম্মদসহ বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। কাকরাইল কার্যালয়ে দক্ষিণের নেতাকর্মীরা বসেন সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা ও জহিরুল আলম রুবেলের নেতৃত্ব। সম্মেলন সফল করতে রাতে আপ্যায়ন উপ কমিটির বৈঠক হয় প্রেসিডিয়াম সদস্য সাহিদুর রহমান টেপা ও ভাইস চেয়ারম্যান জহিরুল ইসলাম জহিরের নেতৃত্বে। এসময় যু্গ্ম মহাসচিব শেখ আলমগীর হোসেন, কেন্দ্রীয় সদস্য হারুনুর রশীদ, আসমা আশরাফসহ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। সম্মেলন সফল করতে জাপার বিভিন্ন উপ-কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। দলের দপ্তর থেকে বন্টন করা হয় ডেলিগেট কার্ড। এ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করেন দপ্তর সম্পাদক সুলতান মাহমুদ ও যুগ্ম দপ্তর রাজ্জাক খান।

সম্মেলনে সাজ সাজ রব:

সম্মেলনকে ঘিরে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন এলাকায় সাজ সাজ রব। জাপার প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, ও অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা বেগম রওশন এরশাদের ছবি দিয়ে দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের বিশালাকার ব্যানার, বিলবোর্ডে সাজানো হয়েছে সম্মেলনস্থলসহ আশপাশের এলাকা। মৎসভবন থেকে সম্মেলনস্থল পর্যন্ত বিলবোর্ড ব্যানারের দখল নিয়েছে প্রেসিডিয়াম সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকা এমপি। তার পোস্টারে ছেয়ে গেছে সম্মেলনস্থল ও কাকরাইলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়।

দলের সাবেক মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি, কাজী ফিরোজ রশীদ, উত্তর সভাপতি এসএম ফয়সল চিশতী ও সেক্রেটারি শফিকুল ইসলাম সেন্টু, প্রেসিডিয়াম সদস্য মীর আব্দুস সবুর আসুদ, সালমা ইসলাম, তাজ রহমান, সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন, কাজী মামুনুর রশীদ, যুগ্ম মহাসচিব আশরাফ সিদ্দিকীসহ নেতাদের পোস্টার ব্যানার সম্মেলনস্থলে নেতাকর্মীদের আলাদা নজর কাড়ছে।

২০১৬ সালের মার্চে জাপার অষ্টম কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। মৌখিক ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। মহাসচিব হন এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার। দলটির প্রয়াত চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ তাঁর সহধর্মীনি বেগম রওশন এরশাদকে সিনিয়র কো চেয়ারম্যান ও ভাই জি এম কাদেরকে কো–চেয়ারম্যান ঘোষণা দেন। আর সেটাই ছিল এরশাদের জীবনের শেষ কাউন্সিল।

 

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/নাসিম

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়