ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

লাঙ্গলের দূর্গ দখলে নৌকার মাঝিদের দৌড়ঝাঁপ

নজরুল মৃধা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:১৪, ২ সেপ্টেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
লাঙ্গলের দূর্গ দখলে নৌকার মাঝিদের দৌড়ঝাঁপ

নিজস্ব প্রতিবেদক রংপুর : প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদের নির্বাচনী আসনটি (রংপুর-৩, সদর) ২৮ বছর ধরে জাতীয় পার্টির দখলে। গত ১৪ জুলাই তাঁর মৃত্যুর পর আসনটি ফাঁকা হওয়ায় ১৬ জুলাই গেজেট প্রকাশ করা হয়। আগামী ৫ অক্টোবর আসনটিতে ভোট গ্রহণ হবে। জাপার সেই দূর্গটিকে আয়ত্তে নিতে আওয়ামী লীগের অন্তত দেড় ডজন প্রার্থী মনোনয়ন পেতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছে।

এরশাদের মৃত্যুর পর থেকেই রংপুরে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সবাই খুব আশাবাদি। দল মনোনয়ন দিলে নৌকার বিজয় সুনিশ্চিত বলে তাদের বদ্ধমূল ধারণা।

এদিকে গতকাল রোববার নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণা করেছে। তফসিল ঘোষণার সাথে সাথে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা গণভবনমুখি হয়েছেন। অধিকাংশ নেতাই ঢাকায় অবস্থান করে দলের হাই কমান্ডের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করছেন। প্রত্যেকেই মনোনয়নের দৌড়ে নিজেকেই এগিয়ে রাখছেন। তবে শেষ পর্যন্ত কার ভাগ্যে নৌকা প্রতীক বরাদ্দ হবে, সেটা জানতে আরো কয়েক দিন অপেক্ষা করতে হবে।

গতকাল রোববার আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানা গেছে, ২, ৩ ও ৪ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করা যাবে। দলীয় মনোনয়নের আবেদনপত্র সংগ্রহ করার পর তা পূরণ করে বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) বিকাল ৫টার মধ্যে একইস্থানে জমা দিতে হবে।

এদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ বেশ কয়েকজন নেতা বিভিন্ন সভায় বলেছেন, ‘এবার রংপুর সদর আসনে জাতীয় পার্টিকে ছাড় দেয়া হবে না।’ তাই রংপুরের আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের প্রায় সকলেই এখন ঢাকায় অবস্থান করছেন।

রংপুর সদর আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য চৌধুরী খালেকুজ্জামান, জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মমতাজ উদ্দিন আহাম্মেদ, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম রাজু, দপ্তর সম্পাদক তৌহিদুর রহমান টুটুল, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তুষারকান্তি মন্ডল, মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ারুল ইসলাম, রংপুর মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কর্মাসের প্রেসিডেন্ট মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা রেজাউল ইসলাম মিলন, শ্রমিকলীগ নেতা এমএ মজিদ, আব্দুস ছালাম, আওয়ামী লীগ নেত্রী রোজী রহমান, প্রাক্তন এমপি হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া প্রমুখ। এদের মধ্যে অনেকেই আগাম নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়েছেন। কেউ কেউ নগরীতে সভা-সমাবেশ করে ব্যাপক শোডাউনও করেছেন।

সূত্রমতে, চৌধুরী খালেকুজ্জামান, রেজাউল ইসলাম রাজু ও আনোয়ারুল ইসলাম আগে থেকেই ঢাকায় অবস্থান করছেন। তুষারকান্তি মন্ডল, রেজাউল ইসলাম মিলন ও তৌহিদুর রহমান টুটুল রোববার রাতে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়ে সোমবার সকালে পৌঁছেছেন। অন্যান্য প্রার্থীরাও দুয়েকদিনের মধ্যে ঢাকা যাবেন। হাইকমান্ডের সাথে যোগাযোগ করে তারা মনোনয়ন দৌড়ে টিকে থাকার চেষ্টা করছেন।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য চৌধুরী খালেকুজ্জামান বলেন, ‘বর্তমানে আমি ঢাকায় অবস্থান করছি। আমি দলের হয়ে অনেক আগে থেকেই প্রচারণা চালাচ্ছি। ‘

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সদর ৩ আসনে এর আগে তাকে তিন বার প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছিলেন। কিন্তু মহাজোটের স্বার্থে তিনবারই প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিতে হয়েছে। উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে এই আসনে তিনি মনোনয়ন প্রতাশী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবার তাকে বিমুখ করবেন না বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম রাজু বলেন, ‘দীর্ঘদিন থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত আমি। সদর আসনটি গুরুত্বপূর্ণ। দীর্ঘদিন এই আসনটি জাতীয় পার্টির দখলে। এবার জাতীয় পার্টিকে ছাড় দেয়া হবে না। আমি নিজে একজন মনোনয়ন প্রত্যাশী। আশাকরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে মনোননয়ন দিবেন। সেই প্রত্যাশায় ঢাকায় অবস্থান করছি।

জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম টুটুল বলেন, ‘সদর আসনে আমিও একজন মনোনয়ন প্রত্যাশী। আশাকরি দল আমাকে মনোনয়ন দিবে।’

সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘আমি একজন মনোনয়ন প্রত্যাশী। বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করছি। দল মনোনয়ন দিলে এলাকার উন্নয়নে কাজ করব।’

মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি মন্ডল বলেন, ‘এই আসনটি দীর্ঘদিন থেকে জাতীয় পার্টিকে ছাড় দেয়া হয়েছে। এবার কোনো ছাড় নয়। আমি এই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করার জন্য অনেক দিন থেকে প্রচারণা চালিয়ে আসছি। আশাকরি হাই কমান্ড এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে নিরাশ করবে না।’

রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের নেতা রেজাউল ইসলাম মিলন বলেন, ‘দলের সভাপতি যে সিদ্ধান্ত নিবেন তা আমরা মাথা পেতে নেব। তবে দীর্ঘদিন থেকে সদর আসনটি আওয়ামী লীগের হাতছাড়া হয়ে আছে। এবার এই আসনে নৌকা প্রতীকে প্রার্থী দেয়া হবে। তাই আমি একজন মনোনয়ন প্রত্যাশী। আশাকরি দল আমাকে নিরাশ করবে না। অন্য কাউকে মনোনয়ন দিলে নৌকার বিজয়ের জন্য কাজ করব।’

এদিকে, জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করেছেন, প্রেসিডিয়াম সদস্য এস এম ফখর-উজ-জামান, মহানগর সেক্রেটারি ইয়াসির আহম্মেদ ও হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের ভাগ্নি টুম্পা। সাংগঠনিক সম্পাদক আ. রাজ্জাক প্রচারণা চালালেও মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করেননি এখনো। এ ছাড়া দল থেকে বহিষ্কৃত হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের ভাতিজা প্রাক্তন এমপি আসিফ শাহরিয়ার দলীয় মনোনয়ন না পেলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হবেন বলে জানিয়েছেন।

ইসির দেয়া তফসিল অনুযায়ী মনোনয়ন দাখিলের শেষ তারিখ ৯ সেপ্টেম্বর। যাচাই-বাছাই ১১ সেপ্টেম্বর। মনোনয়ন প্রত্যাহার ১৬ সেপ্টেম্বর এবং ভোটগ্রহণ ৫ অক্টোবর। সব কয়টি কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) নেওয়া হবে।

রংপুর-৩ আসনে ১৭৫টি ভোটকেন্দ্র রয়েছে। এ আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ৪১ হাজার ৬৭১ জন। যার মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ২১ হাজার ১০৯ জন ও নারী ভোটার ২ লাখ ২০ হাজার ৫৬২ জন।


রাইজিংবিডি/রংপুর/২ সেপ্টেম্বর ২০১৯/নজরুল মৃধা/সনি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়