ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

রংপুর-৩ আসনে উপ-নির্বাচন

জাপায় গৃহবিবাদ চরমে

নজরুল মৃধা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:১০, ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
জাপায় গৃহবিবাদ চরমে

সাদ এরশাদ, হুসেইন মকবুল শাহরিয়ার আসিফ ও মেহেজাবুনেচ্ছা টুম্পা

নিজস্ব প্রতিবেদক, রংপুর : আগামী ৫ অক্টোবর রংপুর-৩ (সদর) আসনে উপ-নির্বাচন। গত ১৪ জুলাই জাতীয় পার্টির চেয়ারম‌্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের মৃত‌্যুতে আসনটি শূন‌্য হয়েছে।

এরশাদের দূর্গ হিসেবে পরিচিত এই আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী চূড়ান্ত না হতেই তার পরিবারে ও দলে গৃহবিবাদ চরমে উঠেছে। এরশাদের ছেলে রাহগীর আল মাহি সাদ ওরফে সাদ এরশাদ মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করার পর এ বিবাদ প্রকাশ্যে এসেছে। এরশাদের ছেলে সাদ এরশাদ ও ভাগ্নি মেহেজাবুনেচ্ছা টুম্পাকে ঠেকাতে মাঠে নেমেছেন ভাতিজা হুসেইন মকবুল শাহরিয়ার আসিফ ও মহানগর জাপার সভাপতি সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফাসহ অন্যান্য নেতা।

সোমবার রাতে সদর উপজেলার তিনটি স্থানে সাদবিরোধী বিক্ষোভ এবং সাদকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়। এ সময় দুই গ্রুপে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। জাতীয় পার্টির অভ্যন্তরীণ কোন্দলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠছে।

জাপা প্রধানের মৃত্যুর পর উপ-নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য দলের মনোনয়নপ্রতাশী কয়েকজন প্রচার চালাচ্ছেন ও লবিং করছেন। মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন জাপার প্রেসেডিয়াম সদস্য ফখর-উজ-জামান জাহাঙ্গির, মহানগর জাপার সাধারণ সম্পাদক ইয়াসির আহমেদ। এরশাদের পরিবারের সদস‌্যদের মধ‌্যে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন তার ছেলে সাদ ও ভাগ্নি টুম্পা। এর বাইরে এরশাদের ভাতিজা আসিফ মনোনয়ন চেয়ে ব্যাপক শোডাউন করেছেন। দল যদি মনোনয়ন না দেয় তা হলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।

স্থানীয় প্রার্থীদের বাইরে এরশাদের পরিবার থেকে সাদ এরশাদ, মেহেজাবুনেচ্ছা টুম্পাকে এ আসনে নির্বাচন করতে না দেয়ার দাবিতে সোচ্চার হয়ে উঠেছেন জাতীয় পার্টির স্থানীয় নেতাকর্মী ও এরশাদের ভাতিজা আসিফ। রংপুরে বহিরাগত প্রার্থীদের জায়গা হবে না বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন তারা। স্থানীয় প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়ার দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশও হয়েছে। স্থানীয় প্রার্থীকে মনোনয়ন না দিলে বহিরাগত প্রার্থীকে প্রতিহত করার ঘোষণা দেয়া হয়েছে।

সোমবার রাতে সদর উপজেলার সদ্যপুস্করনী ইউনিয়নের পালিচড়াহাটে এরশাদের ভাতিজা হুসেইন মকবুল শাহরিয়ার আসিফের সমর্থকরা সাদ এরশাদের কুশপুত্তলিকা দাহ করেছেন। এ সময় জাতীয় পার্টির দুই গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়।

মঙ্গলবার দুপুরে রসিক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের কাছে জাতীয় পার্টির মহানগর সভাপতি ও সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা এরশাদের পরিবারের সদস‌্যদের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে বলেন, রংপুরের মানুষের মতামতের ওপর ভিত্তি করে স্থানীয় প্রার্থীকে মনোনয়ন দিলে তাকে সমর্থন দিয়ে তার পেছনে স্থানীয় নেতাকর্মীরা কাজ করতে পারবেন। সেই প্রার্থীকে বিজয়ী করতে স্থানীয় নেতাকর্মীরা নিরলস প্রচেষ্টা চালাবেন। এখানে বহিরাগত প্রার্থীকে জায়গা দেয়া হবে না। যদি বহিরাগত কোনো প্রার্থীকে এ নির্বাচনে আমাদের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়, সে ক্ষেত্রে নেতাকর্মীরা আন্তরিকভাবে কাজ করতে পারবেন না। দলের তৃণমূল নেতাকর্মী ও সমর্থকরা মাঠে থাকবেন না। যারা বহিরাগতকে মনোনীত করবেন, তাদেরকেই রংপুরে এসে তার পক্ষে ভোট করতে হবে।

রংপুর-৩ আসনের উপ-নির্বাচনে সাদ এরশাদকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী চূড়ান্ত করা হলে তার পক্ষে মাঠে না থাকার ঘোষণা তিনি।

মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, রংপুরের এই আসনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই এ আসনে সাধারণ মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে এমন প্রার্থীকে মনোনয়ন দিতে হবে। এটা তো ১৯৯১ বা ১৯৯৬ সালের প্রেক্ষাপট নয়। এখন যে কাউকে ধরে এনে প্রার্থী করা হলে তা দলের জন্য ক্ষতি ডেকে আনবে।

তিনি বলেন, জননন্দিত, জনসমর্থিত, পরিচ্ছন্ন মানুষকে এরশাদ স্যারের আসনে প্রার্থী ঘোষণা করতে হবে। সেক্ষেত্রে স্থানীয় তিনজন প্রার্থী রয়েছে, যাদেরকে কমবেশি সবাই চেনে ও জানে। এদের কাউকে প্রার্থী করা হলে কোনো আপত্তি থাকবে না।

স্থানীয় প্রার্থী হিসেবে রংপুর জেলা জাপার সাধারণ সম্পাদক এস এম ফখর-উজ-জামান জাহাঙ্গীর, কেন্দ্রীয় জাপার যুগ্ম সম্পাদক ও মহানগর জাপার সাধারণ সম্পাদক এস এম ইয়াসির এবং কেন্দ্রীয় জাপার সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাকের নাম উল্লেখ করেন তিনি।

তিনি আরো বলেন, যদি সাদ এরশাদকে প্রার্থী করা হয়, তাহলে আমরা রংপুর জাতীয় পার্টি তার পক্ষে কাজ করব না। সাদ এরশাদের জয়ের কোনো সম্ভাবনা নেই।

এদিকে, মঙ্গলবার সকালে সদর আসনের উপ-নির্বাচনে স্থানীয় প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়ার দাবিতে এরশাদের ভাতিজা হুসেইন মকবুল শাহরিয়ার আসিফ তার কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে নগরীতে বিক্ষোভ মিছিল করেন। মিছিলটি এরশাদের পৈতৃক নিবাস স্কাই ভিউ ভবন থেকে বের হয়ে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে। মিছিলে ‘সাদ-টুম্পার আস্তানা, রংপুরে হবে না’, ‘সাদ-টুম্পার প্রতিচ্ছবি, ভেঙে দাও-গুড়িয়ে দাও’ স্লোগান দেন মিছিলকারীরা।

পরে প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন হুসেইন মকবুল শাহরিয়ার আসিফ, জাতীয় পার্টির নেতা সামসুল হক প্রমুখ।

সমাবেশে হুসেইন মকবুল শাহরিয়ার আসিফ বলেন, আমি জাতীয় পার্টির চেয়ারম‌্যানের পরিবারের সদস্য। এরশাদ ভক্তরা চাচ্ছেন, উপ-নির্বাচনে যে প্রার্থী দেয়া হবে সে যেন জনগণের সাথে সম্পৃক্ত থাকে। জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে পারে, মানুষের অনুভূতি বুঝতে পারে। এই নির্বাচনে কেন্দ্রীয় কিছু সুবিধাভোগী দালাল এবারও বহিরাগতদের মনোনয়ন দিয়ে নির্বাচন করার পাঁয়তারা করছে। রংপুরের মানুষ এখন বোকা নয়, এখানে বহিরাগতদের চাপিয়ে দিলে আমরা মেনে নেব না।

তিনি আরো বলেন, শীর্ষ নেতারা রংপুরের স্থানীয় নেতৃত্ব তুলে ধরার জন্য জনগণের পক্ষে থাকবেন বলে মনে করছি। তারা যদি জনগণের পক্ষে না থাকেন; ছলে-বলে-কৌশলে সুবিধা নিতে পারবেন, কিন্তু রংপুরের নেতৃত্ব চিরতরে হারাবেন।


রাইজিংবিডি/রংপুর/৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯/নজরুল মৃধা/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ