ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

জি কে বিল্ডার্সের বিকল্প খুঁজছে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়

আসাদ আল মাহমুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৪৯, ১৯ অক্টোবর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
জি কে বিল্ডার্সের বিকল্প খুঁজছে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়

সচিবালয়ে দুটি ভবনসহ (নতুন মন্ত্রিপরিষদ ভবন) ও (অর্থ মন্ত্রণালয় ভবন) গণপূর্ত অধিদপ্তরের ৫৩ (একক ও যৌথভাবে) প্রকল্পের নির্মাণকাজ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জিকেবি অ্যান্ড কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেড।

এস এম গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জি কে শামীম এ কোম্পানির মালিক। এসব প্রকল্পের কাজ শেষ করতে ৪ হাজার ৫৫০ কোটি ৬৫ লাখ টাকার চুক্তি হয়। কিন্তু ক্যাসিনো কাণ্ডে গত ২০ সেপ্টেম্বর র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হন শামীম। এরপর থেকে এসব প্রকল্পের কাজ বন্ধ রয়েছে। কাজ দ্রুত শেষ করতে নতুন পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের জন্য গণপূর্ত অধিদপ্তরকে নির্দেশনা দেয়া হয়। পাশাপাশি বন্ধ থাকা কাজ দ্রুত শেষ করতে জি কে বিল্ডার্সের বিকল্প খুঁজছে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়।

সূত্র জানায়, গত সপ্তাহে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স জিকে বিল্ডার্স কর্তৃক একক/যৌথভাবে বাস্তবায়নাধীন কার্যক্রমসমূহের ক্ষেত্রে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণসহ দ্রুত প্রকল্পের কাজ শেষ করার নির্দেশনা দিয়ে গণপূর্ত অধিদপ্তরকে চিঠি দিয়েছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়।

গণপূর্ত অধিদপ্তরের আওতাভুক্ত প্রকল্পসমূহে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স জিকে বিল্ডার্স কর্তৃক একক/যৌথভাবে বাস্তবায়নাধীন কার্যক্রমসমূহের ক্ষেত্রে পিপিএ ২০০৬ ও পিপিআর ২০০৮ এর সংশ্লিষ্ট ধারা ও বিধি যথাযথভাবে অনুসরণ করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণপূর্বক দ্রুত প্রকল্পের কাজ শেষ করতে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের জন্য গণপূর্ত অধিদপ্তরকে নির্দেশনা দেয়া হয়। ইতিমধ্যে দেশের কয়েকটি বড় প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে। কথা চূড়ান্ত হলেই শুরু হবে এসব বন্ধ হওয়া প্রকল্পের কাজ।

সূত্র জানায়, জিকেবি অ্যান্ড কোম্পানি (প্রাইভেট) লিমিটেড পেয়েছে বড় ১৭টি প্রকল্পের কাজ। এর মধ্যে ৪০০ কোটি টাকার প্রকল্প সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের। ৩০০ কোটি টাকার প্রকল্প পঙ্গু হাসপাতালের। এছাড়া বড় প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে ৫০০ কোটি টাকার র‌্যাব সদরদপ্তর, ১৫০ কোটি টাকার সচিবালয় কেবিনেট ভবন, ৪০০ কোটি টাকার এনবিআর, ২০০ কোটি টাকার মহাখালী ডাইজেস্টিভ এবং বেইলি রোডে ৩০০ কোটি টাকার প্রকল্প। ২৫ কোটি টাকার অ্যাজমা, ২০ কোটি টাকার ক্যানসার, ২৫ কোটি টাকার সেবা মহাবিদ্যালয়, ৮০ কোটি টাকার নিউরোসায়েন্স, ৮০ কোটি টাকার বিজ্ঞান জাদুঘর, ১২ কোটি টাকার পিএসসি, ৬৫ কোটি টাকার এনজিও ফাউন্ডেশন এবং মিরপুর-৬ নম্বরে ৩০ কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ পেয়েছে।

গণপূর্তের ৫৩ নির্মাণকাজের মধ্যে জেকেবি এককভাবে ১৩টি প্রতিষ্ঠানের নির্মাণকাজ করছে। বাকি ৪০টি প্রকল্পের কাজ যৌথভাবে চলছে। জেকেবির পাওয়া এসব প্রকল্পের ২৪টির অনুমোদন দিয়েছে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। বাকি ১৭টি প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি।

রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ভবন, ন্যাশনাল নিউরোসায়েন্স ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের একটি ভবন যৌথভাবে নির্মাণ করছে জিকেবি অ্যান্ড কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেড ও পিএইএল (জেভি) ।

১৬ অক্টোবর সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, দুটি ভবনের নির্মাণকাজ বন্ধ আছে। নির্মাণ কাজের পাহারায় রয়েছেন চারজন নিরাপত্তাকর্মী। এদের একজন শাহিন মৃধা। তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘কোম্পানির মালিক গ্রেপ্তারের দুই দিন পর থেকেই এ দুটি প্রকল্পের কাজ বন্ধ। এখানে ৪০ জন লোক কাজ করতো। বেতন দিতে না পারায় শ্রমিকরা চলে গেছে।’

গত ১৭ অক্টোবর সচিবালয়ে কেবিনেট ভবনের সামনে কথা হয় নির্মাণ শ্রমিক আব্দুর রহিমের সাথে। তিনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জিকেবি অ্যান্ড কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেডে কাজ করেন। তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, কেবিনেট ভবন নির্মাণের কাজ পেয়েছে এ প্রতিষ্ঠান।

নতুন মন্ত্রিপরিষদ ভবন নির্মাণে ২৭৫টি পাইলিংয়ের মধ্যে ২০০ পাইলিংয়ের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। নিয়মিত শ্রমিকদের টাকা ঠিকাদার দিতে না পারায় অনেকেই চলে গেছেন। এ কারণে এখন নির্মাণকাজ বন্ধ।

এদিকে, জি কে শামীমের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নির্মাণাধীন প্রকল্প বাস্তবায়নের অগ্রগতি নিয়ে একটি তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে গণপূর্ত অধিদপ্তর। এর মধ্যে এককভাবে জিকেবির হাতে থাকা ১৩টি প্রকল্পের কোনোটিই পুরোপুরি শেষ হয়নি। কোনো প্রকল্পের কাজ হয়েছে ৯৯ শতাংশ। আবার কোনো প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি শূন্য শতাংশ।

রাজধানীর বেইলি রোডে পার্বত্য চট্টগ্রাম কমপ্লেক্স নির্মাণ প্রকল্পের চারটি অংশের গড় ভৌত অগ্রগতি ৭০ দশমিক ২৫ শতাংশ এবং আর্থিক অগ্রগতি ৫০ দশমিক ১৭ শতাংশ।

সচিবালয়ের নির্মাণাধীন নতুন ২০ তলা ভবনের (নতুন অর্থ মন্ত্রণালয় ভবন) ষষ্ঠ তলা থেকে ২০ তলা পর্যন্ত পূর্ত এবং অভ্যন্তরীণ স্যানিটারি ও বৈদ্যুতিক কাজের ভৌত ৭৯ শতাংশ এবং ৫০ শতাংশ আর্থিক আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে।

আগারগাঁওয়ে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান, নিটোরের এলইডি বাতি স্থাপন ও বৈদ্যুতিক কাজের ৯৯ শতাংশ ভৌত এবং ৯৮ শতাংশ আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে।

আজিমপুরে সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য বহুতল ভবন নির্মাণ কাজের অগ্রগতি শূন্য শতাংশ।

মহাখালীর জাতীয় ক্যানসার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের আধুনিকায়ন প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি ৯৭ শতাংশ, আর্থিক ৬৬ শতাংশ। এছাড়া যৌথভাবে কাজ করা উত্তরা নিম্ন ও নিম্নবিত্ত মানুষের জন্য অ্যাপার্টমেন্ট প্রকল্পের ৯৯ শতাংশ ভৌত অগ্রগতি হয়েছে।

এ বিষয়ে কথা বলতে জিকেবি অ্যান্ড কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেডের প্রধান প্রকৌশলী গোলাম মুস্তাফাকে মোবাইলে কল করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী শাহাদাত হোসেন বলেন, চুক্তি অনুযায়ী প্রকল্পের কাজ শেষ করার দায়িত্ব জিকেবি বিল্ডার্সের। নিয়ম অনুযায়ী তাকে নোটিশ দেয়া হবে।

গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম রাইজিংবিডিকে বলেন, কোনো ঠিকাদারের জন্য সরকারি কোনো উন্নয়ন কাজই আটকে থাকবে না। প্রথমে আইন অনুযায়ী, ঠিকাদারকে আমরা নোটিশ পাঠাব। সে কী পরিমাণ কাজ করেছে তা ঠিক করে প্রয়োজনে চুক্তি বাতিল করব। প্রয়োজনে নতুন ঠিকাদার নিয়োগ করব। কোনোভাবেই এসব প্রকল্পের কাজ বন্ধ থাকবে না।

তিনি বলেন, যেসব প্রকল্পের কাজ বন্ধ হয়ে গেছে, সেগুলোর বিষয়ে শিগগিরই নোটিশ দেয়া হবে। মন্ত্রণালয় থেকে দেখা হবে কাজ কত শতাংশ শেষ হয়েছে। কাজ পাওয়া কোম্পানি কাজ করতে না পারলে যে পরিমাণ কাজ করেছে তার বিল দিয়ে অন্য কোম্পানিকে কাজ দেয়া হবে।


ঢাকা/আসাদ/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়