ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

জিনের মসজিদ!

জুনাইদ আল হাবিব || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:২৬, ১৬ মার্চ ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
জিনের মসজিদ!

মার্বেল পাথরে ঘেরা এক মসজিদ। তিনটি বড়  গম্বুজ, চারটি মিনার। দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যায়। মসজিদটি দর্শনার্থীদের কাছে আকর্ষণীয়!

জনশ্রুতি আছে, রাতের অন্ধকারে জিন দলবেঁধে এসে মসজিদটি নির্মাণ করেছে। নির্মাণের পর কয়েক বছর তারা ইবাদতও করেছে এই মসজিদে। গভীর রাতে তাদের জিকিরের আওয়াজ শুনেছেন কেউ কেউ। তবে এ ঘটনার কোনো প্রত্যক্ষদর্শী নেই। এসব জনশ্রুতির কারণে মসজিদটির নামই হয়েছে ‘জিনের মসজিদ’।

তবে স্থানীয়রা এ নামে ডাকলেও কাগজে-কলমে মসজিদের নাম ‘মসজিদ-ই-আবদুল্লাহ’। স্থানীয় একজন বাসিন্দা বলেন, ‘দিল্লির শাহী জামে মসজিদের নকশা অনুসরণ করে ১৮৮৮ সালে মৌলভী মো. আবদুল্লাহ মসজিদটি নির্মাণ করেন। তিনি ভারতের দারুল উলূম দেওবন্দ মাদ্রাসায় দীর্ঘ ১৭ বছর পড়াশোনা করেছেন। বিশ্বের শীর্ষ স্থানীয় ধর্মীয় এ বিদ্যাপীঠে উচ্চতর দ্বীনি শিক্ষালাভের পর দেশে ফিরে নিজ এলাকায় মসজিদ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন তিনি।’ 

মসজিদটির দৈর্ঘ্য ১১০ ফুট, প্রস্থ ৭০ ফুট। মাটি থেকে ১০ ফুট উঁচুতে এটি অবস্থিত। ১৩ ধাপ সিঁড়ি ডিঙিয়ে প্রবেশ করতে হয়। দেয়ালের উচ্চতা ৮ফুট, মিনারের উচ্চতা ২৫ ফুট। মসজিদটির সামনে এবং পাশে দুটি বিশাল দিঘি রয়েছে। এর পাশেই প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে কওমী মাদ্রাসা ও মুসাফিরখানা।

মসজিদের এক তৃতীয়াংশ নির্মাণ কাজ শেষ হলে মারা যান মৌলভী মো. আবদুল্লাহ। পরে নির্মাণ কাজ শেষ করেন তার ছেলে মওলানা মো. উল্লাহ।
 


একশ বত্রিশ বছর আগের নানন্দিক এই স্থাপনা দেখতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দর্শনার্থীরা ভিড় করেন। মসজিদটি নিয়ে রয়েছে তাদের কৌতূহল। জানা যায়, মসজিদের ২০ থেকে ২৫ ফুট তলদেশে গোপন একটি ইবাদতখানা ছিল। সেখানে আল্লাহর ধ্যানে মগ্ন থাকতেন মৌলভী মো. আবদুল্লাহ। তার মৃত্যুর কয়েক বছর পর স্থানটি পানি ভর্তি কূপে পরিণত হয়। কূপে নামার জন্য মসজিদের দক্ষিণপাশে রয়েছে পাকা সিঁড়ি। বারো মাস এ কূপে কম-বেশি পানি থাকা নিয়ে দর্শনার্থীদের কৌতূহলের শেষ নেই! অনেকে রোগ-শোক থেকে মুক্তি লাভের জন্য ওই পানি নিয়ত-মানত করে পান করেন।

মসজিদের ইমাম মাওলানা আবু বকর বলেন, ‘রাতের অন্ধকারে জিন এসে মসজিদটি নির্মাণ করেছে- কথাটি সত্য নয়। মাওলানা আবদুল্লাহ সাহেব যখন দিল্লিতে পড়তেন, রাতে স্বপ্ন দেখেন- দিল্লির শাহী জামে মসজিদের আদলে একটি মসজিদ নির্মাণ করেছেন। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে গিয়ে মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করেন তিনি।’

মসজিদটির অবস্থান লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর শহরে। রাজধানী ঢাকার সদরঘাট থেকে লঞ্চ যোগে চাঁদপুর হয়ে রায়পুর কিংবা সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে সড়কপথে রায়পুর যাওয়া যায়। শহরের পূর্বে পীর ফয়েজ উল্লাহ সড়কের পাশেই দৃষ্টিনন্দন এই মসজিদের অবস্থান।

 

ঢাকা/মারুফ

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়