ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

জীবনানন্দের জন্ম ও মৃত্যুভিটেয়

পিয়াস মজিদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:৩৭, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
জীবনানন্দের জন্ম ও মৃত্যুভিটেয়

জীবনানন্দের প্রয়াণভূমি কলকাতার শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালের সামনে লেখক

পিয়াস মজিদ : ২০০৮-এর শীতবেলা। জীবনানন্দ-পরবর্তী কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের পিতৃভিটে মাদারীপুরের মাইজপাড়ায় গিয়েছিলাম বন্ধু সাব্বির আহমেদ সুবীর এবং আমি। ফেরার পথে বরিশাল হয়ে ঢাকা আসা সাব্যস্ত হলো।

বরিশাল যাবো আর জীবনানন্দে যাবো না তা কি হয়?

বগুড়া রোড। আমি আর সুবীর। দুপুর হয় হয়। এক্কেবারে জীবনানন্দীয় প্রহর। বাড়িতে ঢুকতেই জীবনানন্দ গবেষক আবদুল মান্নান সৈয়দের ফোন-যিনি তখন পর্যন্ত বরিশাল আসেননি। আমি জীবনানন্দের ভিটেয় শুনে বললেন ওখানে এখনও কবির সময়কার একটি খুঁটি বহাল আছে, দেখে নিন। দেখলাম, স্পর্শ করলাম। স্পর্শের বাইরে ঐন্দ্রজালিক অনুভবের জলে স্নান সারলাম। মায়াভরা জঙ্গুলে আবহাওয়া, বাড়ির সামনে এক চিলতে উঠোন, পেছনে মালঞ্চমধুর। এখন অন্যসব পরিবারের বসত, পাশেই জীবনানন্দ দাশ জাদুঘর মতো কিছু একটা ব্যাপার। কোনো আগ্রহ জন্মালো না, আমার বরং ভালো লাগছিল সাদামাটা সর্বানন্দ ভবন।

না নেই সেখানে কোনো স্মারক বা স্মৃতিচিহ্ন তবু ধুলায় ধুলায় ঘাসে ঘাসে যে তাঁরই পদচ্ছাপ- যেমনটা ঠিক বাংলা কবিতার বুকে তাঁর অমোচ্য পদচ্ছাপ।

২.
২০১৫’র এপ্রিল। কলকাতা এসেছি প্রথম কিন্তু শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতাল যাবো না-তাই কি হয়! বহু আগে কবি মজনু শাহের কবিতায় পড়েছিলাম ‘ডেকেছিল তাকে লাক্ষারঙ যবনিকা।’ যেন নিরুজ্জ্বল জীবন শেষে বর্ণিল যবনিকার ডাকে জীবনানন্দ তাঁর শেষ শ্বাস ফেলেছেন শম্ভুনাথে। লড়াই করেছেন মৃত্যুর সঙ্গে অথবা আলিঙ্গন।

কবিবন্ধু জুবিন ঘোষ সঙ্গে ছিল, বলল কলকাতার লোকেদের অনেকেই তো জানে না তুমি জানো কী করে শম্ভুনাথের কথা?

বলি-জানতেই হবে।

জীবনানন্দ আমার অসুখ ও আরোগ্য।

ঠিক যেমন এ হাসপাতাল-তাই তাঁর কাছে তো আসতেই হবে। এলাম, দেখলাম, কত রোগ আর রোগহর ওষুধের ছবি আর বিবরণে ভরা হাসপাতাল; নার্স, ডাক্তার, রোগী।

আরে ওই তো জীবনানন্দ দাশ,

ল্যান্সডাউন রোড থেকে রক্তমাখা গা নিয়ে এইমাত্র এলেন,

ওই তো ভূমেন্দ্র,

ওই তো ময়ূখগোষ্ঠী, বাংলা কবিতার মায়াময় ধারা।

না, সঙ্গে ফোন ছিল না, জুবিনের ফোনেও ছিল না ভালো ক্যামেরা।

অতঃপর মনের অ্যালবামে ধারণ করে এলাম জীবনানন্দ-প্রয়াণের পুণ্য, করুণভূমি।

দূরে একটা ভবন, দাশ নয় জীবনানন্দ দাস ভবন, হায় ভুল নাম ও ভুল সময়ের মাঝে এক গোলকধাঁধায় খাবি খেতে খেতে দুপুরের চিলচিৎকারে হঠাৎ শুনি এক মিহি কণ্ঠের ডাক-

বন্দরের কাল হলো শেষ।

অমর্ত্য জাহাজ ছাড়লো বলে।

শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতাল ছেড়ে

জীবনানন্দ কেওড়াতলার ছাইভষ্মের বাড়িতে চলেন,

সঙ্গে সঙ্গে অনেকে।

জীবনানন্দ চলে যান,

চলে গিয়ে আবার অক্ষরের ডানায় ভরে উড়ে আসেন।

পড়ি, পড়তেই থাকি;

জীবনানন্দ দাশ।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯/মারুফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়