ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

জেব্রা ক্রসিংয়ে শিক্ষার্থীর মৃত্যু, প্রশাসনের পদক্ষেপ জরুরি

মাছুম বিল্লাহ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৪৯, ২১ মার্চ ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
জেব্রা ক্রসিংয়ে শিক্ষার্থীর মৃত্যু, প্রশাসনের পদক্ষেপ জরুরি

মাছুম বিল্লাহ : বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে প্রাণ হারানোর পর তার সহপাঠী ও অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রাস্তা অবরোধ করে আন্দোলন করছে। তারা নি¤œলিখিত আটটি দাবি পেশ করেছে কর্তৃপক্ষের কাছে। দাবিগুলো হচ্ছে-

১। পরিবহন সেক্টরকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করতে হবে এবং প্রতিমাসে বাসচালকের লাইসেন্সসহ সব প্রয়োজনীয় কাগজপত্র চেক করতে হবে।
২। আটক চালক ও সম্পৃক্ত সবাইকে দ্রুত সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
৩। আজ থেকে ফিটনেসবিহীন বাস ও লাইসেন্সবিহীন চালককে দ্রুত সময়ের মধ্যে অপসারন করতে হবে।
৪। ঝুঁকিপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় সব স্থানে আন্ডারপাস, স্পিড ব্রেকার এবং ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণ করতে হবে।
৫। বর্তমান আইনের পরিবর্তন করে সড়ক হত্যার সঙ্গে জড়িত সবাইকে সর্বোচ্চ শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
৬। দায়িত্ব অবহেলাকারী প্রশাসন ও ট্রাফিক পুলিশকে স্থায়ীভাবে অপসারণ করে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে।
৭। প্রতিযোগিতামূলক গাড়ি চলাচল বন্ধ করে নির্দিষ্ট স্থানে বাসস্টপ এবং যাত্রীছাউনি করার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।
৮। শিক্ষার্থীদের জন্য হাফ পাস (অর্ধেক ভাড়া) অথবা আলাদা বাস সার্ভিস চালু করতে হবে।

প্রগতি সরণিতে বিইউপি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবরার নিয়ম মেনেই জেব্রাক্রসিং ধরে রাস্তা পার হচ্ছিলো। রাস্তার একটি লেন পার হয়ে পা রাখে অন্য লেনে। তখন দ্রুতগতিতে আসা সুপ্রভাত পরিবহনের একটি বাস সামনে দাঁড়িয়ে থাকা আরেকটি বাসকে অতিক্রম করে যাচিছলো। বেপরোয়া বাসটি আবরারকে সজোরে ধাক্কা দিয়ে তাকে না ফেরার দেশে পাঠিয়ে দেয়। ঘাতক বাসটি আবরারকে হত্যা করার আগে অন্য এক নারীকেও ধাক্কা দিয়ে চলে আসে। এই ঘটনাগুলোর বহু কারণের মধ্যে একটি হচ্ছে আমাদের জনাকীর্ণ ও অপ্রসস্ত রাস্তায় বাস চালকদের অসুস্থ প্রতিযোগিতার মানসিকতা। কেন এই প্রতিযোগিতা? সামনে গিয়ে দু’চারজন বেশি যাত্রী তুলবে, দশ বিশ টাকা বেশি উপার্জন করবে।

আর একটি কারণ হচ্ছে, একটি বাস দুই ট্রিপ দিলে নাকি তাদের খরচ পোষায় না তাই তিনটি বা ততোধিক ট্রিপ দেওয়ার জন্য তারা এই প্রতিযোগিতায় নামে। অন্য আর একটি কারণ হচ্ছে ট্রাফিক সার্জেন্টের ভয়। তারা যেখানে সেখানে বাস থামিয়ে কেস দিতে থাকে বলে অভিযোগ আছে। তাদেরকে এড়ানোর জন্যও নাকি বাস চালকরা দ্রুত গাড়ি চালিয়ে থাকে। এ ছাড়াও আরও বহু কারণ আছে যেগুলো আমরা জানি আর ট্রাফিক বিভাগ, পুলিশ বিভাগ আমাদের চেয়েও আরও ভাল করেই জানে। তারপরেও কিছুতেই কিছু হচ্ছে না কেন ? ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ, ট্রাফিক পরিচালনা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে যেসব কর্তৃপক্ষ আছেন তারা সবই জানেন কিন্তু কোন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না, তার উত্তর অবশ্য আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা এক নম্বরে দিয়েছে। তারা বলেছে পরিবহন সেক্টরকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করতে হবে। এই সেক্টরকে রাজনীতিমুক্ত করতে পারলে সমাধান ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ হয়ে যাবে, সেটি আমরাও জানি। কিন্তু সেটি কে করবে? কেন করা হবে? এগুলো নির্বিঘেœ করতে পারার জন্যই তো রাজনীতি। ব্যবসায়ীরা রাজনীতিতে যোগ দেন যাতে তারা নির্বিঘেœ ব্যবসা করতে পারেন; পুলিশ, সরকার বা অন্য কোন প্রভাবশালী  ব্যক্তি বা পক্ষ কোন ধরনের ঝামেলা করতে না পারে। ব্যবসায়ীদের যেহেতু অর্থনৈতিক শক্তি থাকে, সেই অর্থনৈতিক শক্তি তাদেরকে বাকী শক্তিগুলো আয়ত্বে আনতে সুবিধা করে দেয়। এখন এর সমাধান কি? সাধারন মানুষ মারা যাবে, সাধারন মানুষ বন্দি হবে, সাধারন মানুষ বিপদে পড়বে তাতে কার কি আসে যায়? সাধারন মানুষকে, সাধারন শিক্ষার্থীদের দমানোর বহু পদ্ধতি আছে যেগুলো আমরা অতীতে, নিকট অতীতে ছাত্র-আন্দোলনে ব্যবহৃত হতে দেখেছি। সরকার এই ছাত্র আন্দোলনও দমাতে পারবে, পদ্ধতি জানা আছে। কিন্তু প্রশ্ন হচেছ এইভাবেই কি চলতে থাকবে? তাহলে আমরা কেন এত মানুষের কল্যাণের কথা বলছি, দেশের কল্যাণের কথা বলছি?
আমাদের গাড়ী চালকদের ক্ষেত্রে বাস্তবতা হচেছ তারা দরিদ্র পরিবারের ছেলে, পড়াশোনা করার সুযোগ পায়নি কিংবা কারুর কারুর ক্ষেত্রে সুযোগ থাকলেও পড়াশোনা করেনি। বাসের হেলপার ছিল, তাদের ওস্তাদের কাছ থেকে ফাঁকে ফাঁকে, অবসরে গাড়ী চালানো শিখেছে। তবে, তাদের বাস্তব জ্ঞান অনেক। যেমন তাদের ওস্তাদের কাছ থেকে শিখেছে রাস্তায় কিভাবে অন্য গাড়ীকে ওভারটেক করে কিছু বেশি যাত্রী গাড়ীতে তোলা যায়, কিভাবে রাস্তায় পুলিশ ম্যানেজ করতে হয়, কিভাবে মাস্তান ম্যানেজ করতে হয়, কিভাবে দু’নম্বর লাইলেন্স করতে হয় কারণ সধারন নিয়মে তো আপনি সহজে লাইলেন্স করতে পারবেন না, ইত্যাদি। লাইসেন্স নেওয়ার জন্য মেকানিজম করা আছে কিভাবে চালকদের ফাঁদে ফেলে, সাধারন মানুষকে ফাঁদে ফেলে অর্থ আদায় করতে হয়। এখানেও বিরাট চক্র, বিশাল মাফিয়া, সাধারন মানুষ অসহায়, এই অসহায়দের পাশে দাঁড়ানোর তো কেই নেই। কারণ, এখানেও রাজনীতি। আপনি বেশি কিছু বলতে যাবেন, আপনার গায়ে এক বিশেষ ধরনের লেবেল লাগিয়ে দেওয়া হবে, ব্যস, আপনার জীবন শেষ!

এখানে আদর্শ হচেছ যে সব ড্রাইভার রাস্তায়, শহরে, সিটিতে বা হাইওয়েতে গাড়ী চালানোর পূর্বে তাদের টেকনিক্যাল ইনস্টিউিট থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। তারা যখন সত্যিকার দক্ষতার সার্টিফিকেট পাবেন তখন রাস্তায় গাড়ী চালানোর অনুমতি পাবেন। কিন্তু আমাদের বাস্তবতায় তো এসব নেই, আর এসব নিয়ে করুর কোন চিন্তাও নেই। হয়তো বেসরকারি পর্যায়ে কেউ ( যেমন চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন ) চেষ্টা চালিয়ে যাচেছন কিন্তু রাষ্ট্রযন্ত্র যদি প্রকৃতপক্ষে এগিয়ে না আসে তাহলে খুব একটা লাভ হওয়ার কথা নয়। তবে, ইচ্ছে থাকলে সরকার এই বাস্তবতায়ও যা করতে পারে - (ক) এই নিরক্ষর ও অশিক্ষিত ড্রাইভারদের বছরে অন্তত দুই সপ্তাহ সরকারি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে নিয়ে ট্রাফিক আইন শেখানো। সামাজিকতা শেখানো, সহমর্মিতা শেখানো। তারা পড়াশোনা জানেনা  কিন্তু দেশের সম্পদ। তারা সমাজের বোঝা নয়।
(খ) এত বিশাল দায়িত্ব সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়, তাই বেসরকারি পর্যায়ে সেক্টর ভাগ করে দিয়ে সাড়া বছরই এই প্রশিক্ষণ/ওরিয়েন্টেশন পরিচালনা করনো যেতে পারে। তারা অন্য গাড়ীর আগে কেন যাবে না, পেছনের গাড়ীর সমস্যা হবে, পথচারীদের সমস্যা হবে, দুর্ঘটনা ঘটবে। দুর্ঘটনা ঘটলে তার ব্যক্তিগত, পারিবারিক, রাষ্ট্রীয় কি সমস্যা হবে এগুলো নিবিড়ভাবে তাদের বোঝাতে হবে।
(গ) আমরা সবাই জানি শব্দ দুষণের ফলে মানুষের উচ্চ রক্তচাপ, ঘুমের ব্যাঘাত, হৃদরোগ, অস্থিরতা সৃষ্টি হয়। পেটের সন্তানের মারাত্মক ক্ষতি হয়, শ্রবণ শক্তির ওপর চাপ পড়াসহ বিভিন্ন ধরেনর রোগ ব্যাধি হয়। গাড়ীচালকরা তো এসব জানে না। তাদের জানার কথাও নয়। তাই এইসব প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের এসব বিষয়া জানাতে হবে। আর কোন গাড়ীতেই যাতে হাইড্রলিক হর্ণ ব্যবহার করা না হয় কর্তৃপক্ষ সেটি দেখতে পারে। গাড়ীতে হাইড্রলিক হর্ণ না দিলেই ড্রাইভার বাজাতে পাড়বে না। কিন্তু কে দেখবে এগুলো? ট্রাফিক পুলিশ বা সার্জেন্টদের দেখার কথা। তারা দেখবেন কেন? তাদের চাকুরিতে ঢোকার যে প্রক্রিয়ার কথা শুনেছি তাতে রাস্তায় তাদের তো অন্য দায়িত্ব পালন করতে হবে, কিসের হাইড্রলিক হর্ণ আর কিসের কি?

সবাই লক্ষ্য করবেন রাস্তায় জ্যাম, মানুষ চলাফেরা করতে পারছে না, গাড়ী সামনে আগাচ্ছেনা কিন্তু সার্জেন্ট অঙ্গুলি নিদের্শ করে একটির পর একটি গাড়ী থামাচ্ছেন, অনেক সময় দেখেছি যাত্রীদেরও নামিয়ে দিচ্ছেন। তারপর ড্রাইভার ও হেলপারের সঙ্গে কি যেন বলছেন আর কি যেন লিখছেন। সামনে গাড়ীর জ্যাম। জ্যাম হতে হতে পুরো রাস্তা ছেয়ে যায়, এলাকা ছেয়ে যায়। তখন তা সবার নিয়ন্ত্রণ ও ধৈর্য্যরে বাইরে চলে যায়। শুনেছি ট্রাফিট পুলিশ, মাস্তান এরা নাকি ইচেছ করেই জ্যাম বাধায় তাতে নাকি তাদের লাভ! কি সুন্দর দহরম মহরম! ভুগছে জনগণ, ভুগছে যাত্রী তাতে তাদের কী?

এরপর পথচারীদের কথায় আসি। রাস্তায় সুন্দরভাবে টিকিট কেটে গাড়ীতে ওঠার কোন সিস্টেম আমাদের দেশে নেই। নব্বইয়ের দশকে দেখেছি প্রায় সব রুটেই একবারে রাফ ও লোকাল গাড়ীর সাথে বেশ কিছু ভাল ভাল গাড়ী ছিল যেগুলো যত্রতত্র থামানো হতো না, বিদেশের মতো নির্দিষ্ট টিকিট কাউন্টারে থামতো, যাত্রীরাও ভাল অভ্যাসের দিকে ধীরে ধীরে আগাচ্ছিল। তারা টিকিট কেটে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতো, গাড়ী আসলে মোটামুটি সিরিয়াল দিয়ে গাড়ীতে উঠতো। কিন্তু সেই বাস, সেই কাউন্টার নেই। কারণ রাজনীতি। এতে পুলিশের ও মাস্তানদের আয় কমে য়ায়।

এখন যাত্রীরা যত্রতত্র যে যেভাবে পারছে, যেখানে সেখানে হাত দিয়ে গাড়ী থামিয়ে গাড়ীতে উঠছে, দুর্ঘটনা ঘটছে, রাস্তায় জ্যাম হচ্ছে। তাতে, কার কি আসে যায়? দেখার তো কেউ নেই। গাড়ীচারকরা তো প্যাসেঞ্জার পেলেই তুলবে, তুললেই পয়সা, তাতে রাস্তায় কারও কোন সমস্যা হলো না জ্যাম হলো এসব দেখার দায়িত্ব বা সচেতনতা তাদের নেই।

অধাঘণ্টা বা ঘণ্টাখানেক গাড়ী জ্যামে দাঁড়ানোর পরে যখন চলতে শুরু করে তখন ড্রাইভাররা থাকে পাগলের মতো। পাঠক লক্ষ্য করবেন, কিছু লোক দেখবেন এসব কিছুকে তোয়াক্কা না করে চলন্ত গাড়ীর সামনে দিয়ে মোবাইলে কথা বলছে, হাত দিয়ে গাড়ী থামিয়ে দিয়ে কেউ হাঁটছে, কেউ দৌঁড়াচেছ, কেউ গল্প করতে করতে যাচেছ। তাদের বলার কেউ নেই, শেখানোর কেউ নেই। বাঁধা দেওয়ার কেউ নেই।

অনেক রাস্তায় ফুট ওভারব্রিজ হয়েছে, সেগুলো কমই ব্যবহার হয়, কোথাও কোথাও হয়ই না। মানুষ নিচ দিয়ে যাচ্ছে, গাড়ী থামিয়ে গাড়ীর সামনে দিয়ে যাচ্ছে, উপরে ফুট ওভারব্রিজ খালি। আবার, ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণেও  রাজনীতি। পাঠক লক্ষ্য করবেন, গুদারাঘাটে একটি ফুট ওভারব্রিজ দেওয়া অছে, কেউ কখনও সেটি ব্যবহার করে না, করার খুব একটা প্রয়োজনও হয় না সেখানে। অথচ রামপুরার মতো ব্যস্ত ও ঘিঞ্জি এলকায় একটি ফুট ওভারব্রিজ দরকার, অনেকবার আমি নিজে কর্তব্যরত সার্জেন্টদের অনুরোধ করেছি এই বলে যে, আপনারা কর্তপক্ষকে বলুন এখানে একটি ওভারব্রীজ নির্মাণ করার জন্য।’ তাদের অনেকে জবাব দিয়েছেন, ওভারব্রিজে মানুষ ওঠেনা, বানিয়ে লাভ কি?

সাধারন মানুষ, শ্রমিক, নারী, পুরুষ, শিক্ষার্থী, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে মারা যায়, রাস্তা অবরোধ হয়, আমরা যারা কিছু করতে পারি না তারা কয়েক পৃষ্ঠা লিখি, বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে টকশো’র বন্যা বয়ে যায়। টকশো-এ বক্তারা উন্নত বিশ্বের ট্রাফিক সিস্টেম নিয়ে কথা বলেন, রাগ ঝারেন, টিভির পর্দা গরম রাখেন। এসব দেখে কেউ হয়তো হাসাহাসিও করেন কারণ কিছু তো হবেনা, কিছু তো করা হবেনা। যেই লাউ সেই কদু!

বিশেষ দ্রষ্টব্য : মতামত লেখকের একান্ত নিজস্ব

লেখক : শিক্ষা বিশেষজ্ঞ ও গবেষক



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৩ মার্চ ২০১৯/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়