ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

জৈবসারের ব্যবহার বাড়লেও জমির স্বাস্থ্যের উন্নতি নেই

নজরুল মৃধা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:৩১, ২৭ নভেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
জৈবসারের ব্যবহার বাড়লেও জমির স্বাস্থ্যের উন্নতি নেই

রংপুর অঞ্চলে জৈবসারের ব্যবহার বেড়েছে প্রায় ৫ গুণ।  এরপরেও যে পরিমাণ জৈব সার ব্যবহার করলে জমির স্বাস্থ্য রক্ষা হবে সেই পরিমাণ সার ব্যবহার হচ্ছেনা এই অঞ্চলে।

স্বাস্থ্য সম্মত জমিতে ৫ শতাংশ জৈব সারের প্রয়োজন হলেও রংপুর অঞ্চলের জমিতে এক থেকে দেড় শতাংশ জৈবসার রয়েছে।

ফলে এই অঞ্চলের জমিগুলো স্বাস্থ্যহীনতায় ভুগছে। মাটিতে জৈব পদার্থের পরিমাণ বাড়াতে হলে কৃষকদের আরো সচেতন হতে হবে বলে মনে করছেন কৃষিসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগ। সুষম সারের ব্যবহার  কিছুটা বাড়লেও কমেছে গুটি ইউরিয়ার ব্যবহার।  এছাড়া সঠিক বয়সে চারা রোপণ করছেন না এখনো ৪ শতাংশ কৃষক। ফলে গড় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।

রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বোরো মৌসুমে রংপুর, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারী ও গাইবান্ধা জেলায় জৈব সারের ব্যবহারে লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৬০ হাজার ৮৮১ হেক্টর জমিতে। সেখানে জৈব সার ব্যবহার হয়েছে ২ লাখ ৭৩ হাজার ৮৯৭  হেক্টরে। গত কয়েক বছরে এর ব্যবহারের হার বেড়েছে ৫ গুণেরও বেশি।

অপরদিকে এই পাঁচ জেলায় সুষম সার ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা ছিল তিন লাখ ৬৫ হাজার ২৮৫  হেক্টরে।  সেখানে সুষম সার ব্যবহার হয়েছে তিন লাখ ৭৩ হাজার ৮৫৫ হেক্টর জমিতে।  এছাড়া গুটি ইউরিয়া সারের ব্যবহার কমেছে অনেক। গুটি ইউরিয়া সর ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা ছিল একলাখ ৮২ হাজার ৬৫৬ হেক্টরে।  সেখানে ব্যবহার হয়েছে মাত্র ১০৫ হেক্টরে।

এদিকে সঠিক বয়সে আমনের চারা রোপণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ লাখ ৮৭ হাজার ৪৭ হেক্টর।  সেখানে লক্ষ্য মাত্রা অর্জিত হয়েছে চার লাখ ৬৬ হাজার ৫৮ হেক্টরে। লক্ষ্যমাত্রার হার ৯৫ দশমিক ৮০ শতাংশ।  অর্থাৎ এখনো চার শতাংশের ওপর কৃষক সঠিক পদ্ধতিতে আমনের চারা রোপণ করছেন না। ফলে গড় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।

কৃষি অফিসের তথ্য মতে রাসায়নিক সার ব্যবহারের ফলে জমি থেকে জৈব পদার্থ হারিয়ে যায়। রংপুর অঞ্চলের  জমিতে ৫ ভাগ জৈব পদার্থ থাকা দরকার। ক’বছর আগেও এ অঞ্চলের জমিতে জৈব পদার্থ ছিল মাত্র এক ভাগ। তবে আশার আলো এই যে বিগত  কয়েক বছর থেকে জৈব সারের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় এ অঞ্চলের জমিতে জৈব পদার্থের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে দেড় শতাংশে। তবে জমির স্বাস্থ্য রক্ষায় কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য মাত্রায় পৌঁছাতে আরো সাড়ে তিন শতাংশ জৈব সারের ব্যবহার প্রয়োজন।

কৃষিবিদদের মতে রাসায়নিক সার ব্যবহারের ফলে মাটির উর্বরা শক্তি প্রায় পুরোটাই হারিয়ে যেতে বসেছে। জমির অম্লতা এমনভাবে বেড়েছে যে জমিতে ফসলই উৎপাদন এক রকম কঠিন হয়ে পড়েছে। জমির সেই হারানো শক্তিকে ফিরিয়ে আনতে হলে জৈব সার ব্যবহার করা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। আবাদি জমির প্রাণ ফিরিয়ে আনতে জৈব সার উৎপাদন এবং প্রয়োগে সচেষ্ট হতে হবে কৃষকদের।

জৈব সার মাটিকে রাখতে পারে সতেজ, ফিরিয়ে দিতে পারে আগের সেই প্রাণ। জৈব সার ব্যবহারের ফলে মাটিতে বাতাস চলাচল বৃদ্ধি পায়, অণুজীবের ক্রিয়া বাড়াতে থাকে, ফসলের প্রয়োজনীয় সব খাদ্য উপাদান সহজলভ্য হয়। ফলে আশানুরূপ ফলন পাওয়া যায় এবং গুণগত মানসম্পন্ন পণ্য উৎপাদন করা সম্ভব হয়।

মৃত্তিকা সম্পদ গবেষকদের মতে, রংপুর অঞ্চলে গড়ে এক থেকে দেড় শতাংশ জৈব পদার্থ রয়েছে। এই অঞ্চলের মাটির প্রাণ শক্তি আরো বাড়াতে হলে জৈব সারের ব্যবহার আরো বাড়াতে হবে। প্রাণিজ জৈব সার বলতে গৃহপালিত পশুপাখির মলমূত্র পচিয়ে তৈরিকৃত বস্তুকে বোঝায়। অত্যন্ত প্রয়োজনীয় প্রাণিজ জৈব সার হচ্ছে গোবর। কিন্তু আমাদের দেশে প্রাপ্ত গোবরের এক বিরাট অংশ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। যদিও দেশজুড়ে  জ্বালানি হিসেবে এগুলোর মূল্য রয়েছে, তথাপি মাটির উন্নয়নকল্পে যতটুকু সম্ভব তা জমিতে ফিরিয়ে দেয়ার জন্য কৃষকদের উৎসাহিত করার আহবান মৃত্তিকা গবেষকদের।

রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মনিরুজ্জামান বলেন, জমির জৈব পদার্থের পরিমাণ বাড়াতে হলে কুষকদের আরো সচেতন হতে হবে। কৃষি বিভাগ কৃষকদের সচেনতা বৃদ্ধির লক্ষ‌্যে কাজ করে যাচ্ছে।

রংপুর কৃষি সম্পসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক আবু সায়েম জানান, বর্তমানে এই অঞ্চলে গোবর, পাতাপচা, কেচো কম্পোস্ট ,কম্পোস্ট, কচুরি পাতা ইত্যাদি পচানো সারের ব্যবহার অনেকগুণ বেড়েছে।

তিনি আরো জানান, ফসলের পরিত্যক্ত অংশে যে পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান থাকে সেগুলো হারিয়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করা উচিত। গরুর নিচে বিছানো খড় গৃহস্থালির উচ্ছিষ্ট দ্রব্যাদি, বাড়ির ঝাট দেয়া আবর্জনা প্রভৃতি গোবর মিশ্র্র্র্রিত করে পচিয়ে জৈব সার হিসেবে ব্যবহারের মাত্রাকে আরো বাড়াতে হবে । ফসলের পরিত্যক্ত অংশ (খড়) যতটুকু সম্ভব জমিতে রেখে দিয়ে অথবা জমিতেই আবার ফিরিয়ে দিয়ে পরে চাষের সময় মাটির সঙ্গে ভালোভাবে মিশিয়ে জৈব সার হিসেবে ব্যবহার করে মাটির হারানো শক্তিকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব।

 

রংপুর/নজরুল/বুলাকী

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়