ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

টালমাটাল যুবলীগে আতঙ্ক

এসকে রেজা পারভেজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৪৮, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
টালমাটাল যুবলীগে আতঙ্ক

দুর্নীতি-চাঁদাবাজের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ হাইকমান্ডের জোরালো পদক্ষেপে টালমাটাল হয়ে পড়েছে দলটির অন্যতম অঙ্গ সংগঠন যুবলীগ। অভিযুক্ত নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হওয়ায় সংগঠনের বিভিন্নস্তরের নেতাকর্মীদের মধ্যে ভীতি ছড়িয়ে পড়েছে।

বুধবার রাতে সংগঠনটির ঢাকা মহানগর দক্ষিনের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ ভুঁইয়াকে গ্রেপ্তারের পর কার্যত আনুষ্ঠানিকভাবে যুবলীগের দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ শুরু হলো। মুখে না বললেও আ. লীগের এই শুদ্ধি অভিযানে সৎ, ত‌্যাগী নেতারা বেশ খুশি।

তবে সংগঠনের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে যুবলীগ সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরীর বলেছেন, ‘যুবলীগকে নিয়ে ষড়যন্ত্র হচ্ছে।’

বুধবার রাতে অবৈধ জুয়া ও ক্যাসিনো চালানোর অভিযোগে ঢাকা দক্ষিণ মহানগর যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। পাশাপাশি তার মালিকানাধীন রাজধানীর ফকিরাপুলের ইয়াংম্যান্স ক্লাবে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থসহ ১৪২ জনকে আটক করেছে র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত।

এদিকে খালিদ মাহমুদ ভুঁইয়াকে গ্রেপ্তারের পর সংগঠনটির অভিযুক্ত অন‌্যান‌্য নেতাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। অনেক নেতা গোপনে খোঁজ খবরও নিচ্ছেন, তালিকায় তার নাম আছে কি না?   

দলীয় সুত্র জানিয়েছে, গত দুই মেয়াদে যুবলীগের অনেক নেতা চাঁদাবাজি, ভূমি দখল ও টেন্ডারবাজিসহ নানা অপকৌশলে বিশাল বিত্ত-বৈভবের পাশাপাশি ক্ষমতার দম্ভে যাচ্ছেতাই কার্যকলাপে লিপ্ত হয়েছেন। এসব অপকর্মের খতিয়ান গোয়েণ্দা রিপোর্টের মাধ‌্যমে এখন দলীয় প্রধানের হাতে।

গত শনিবার কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে এসব নেতাদের বিরুদ্ধে দলের সভাপতি শেখ হাসিনা ব‌্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এরপর থেকেই চরম ভীতিতে আছেন অভিযুক্তরা। শুদ্ধি অভিযানের হাত থেকে বাঁচতে কেউ কেউ আওয়ামী লীগের শীর্ষ ও হেভিওয়েট নেতার কাছে ধর্না দিচ্ছেন বলেও খবর চাউর হয়েছে।

কেউ আবার আত্মগোপনকে আপাতত ঢাল হিসেবে বেছে নিয়েছেন। দেশ ত‌্যাগের প্রস্তুতিতেও ব‌্যস্ত রয়েছেন কোনো কোনো নেতা-এমন খবর শোনা যাচ্ছে।

দলের মধ্যে দুর্নীতিবাজদের কোনো ছাড় নেই জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আজ দুপুরেই বলেছিলেন, ‘আওয়ামী লীগে অপকর্ম হয়নি, কেউ করেনি এটা বলি না। তবে অপকর্ম করলে আমরাই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করি। অন্তত আওয়ামী লীগ অপকর্মকারীকে ছাড় দেয় না। অন্য কোনো দল এমনকি বিএনপিও ব্যবস্থা নেয় না। আওয়ামী লীগে এই পলিটিক্যাল কনসার্ন আছে, কাজেই কেউ অনিয়ম, দূর্নীতি করলে শাস্তি পেতেই হবে।’

যুবলীগ সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরী বলেন, আমাদের একটি ট্রাইব্যুনাল আছে। এখানে কেউ কোন অপরাধে জড়িত থাকলে বিচারের মাধ্যমে শাস্তি দেওয়া হয়। অতি শিগগিরই আমরা অভিযুক্তদের ট্রাইব্যুনালের মুখোমুখি করবো। অভিযোগ পাওয়ার পর তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে কঠোর ব‌্যবস্থা নেয়া হবে। সে যুবলীগের যে কোনো পর্যায়ে নেতা হোক না কেন নুন্যতম অভিযোগেরও যদি সত্যতা পাওয়া যায় তাহলে যুবলীগ-তাৎক্ষণিকভাবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

‘যদি এই অভিযোগ ফৌজদারি অপরাধের পর্যায়ে পড়ে তাহলে সংশ্লিষ্ট থানায় তাৎক্ষনিকভাবে অভিযোগটি প্রেরণ করা হবে এবং অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ওই থানাকে অনুরোধ করা হবে’- বলে মন্তব‌্য করেন ওমর ফারুক।

অন‌্যদিকে যুবলীগের এই ট্রাইবুনাল নিয়ে প্রশ্ন আছে আওয়ামী লীগ নেতাদের। তারা বলছেন, যুবলীগের ট্রাইবুনালটি কাদের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে বা হবে সেটাও দেখার বিষয়। কারণ অভিযুক্তরাই যদি এটার পরিচালক হন তাহলে সুষ্ঠু বিচার করা সম্ভব নয়।


ঢাকা/রেজা/নবীন হোসেন

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়