ডিবির হাওরে লাল শাপলার ভুবন
অপারে মেঘালয়ের সুউচ্চ পাহাড়, এপারে সমতলে বিস্তৃত জলাশয়। এখানে চারটি বিল রয়েছে; ডিবি, ইয়াম, হরফকাটা আর কেন্দ্রী। প্রায় ছয়শ একরজুড়ে বিস্তৃত এ চার বিলের সমন্বিত জলাশয় ডিবির হাওর নামে পরিচিত।
এ হাওরেই ফুটেছে হাজার হাজার লাল শাপলা। প্রতিদিন শাপলার সৌন্দর্য্য দেখতে প্রতিদিন ছুটে আসছেন মানুষ।
হাজারো লাল শাপলার এমন সৌন্দর্য্য দেখতে যেতে হবে সিলেটের জৈন্তাপুরের ডিবির হাওরে। লাল শাপলার সৌন্দর্য্য অবলোকনের পাশাপাশি দেখা মিলবে মেঘালয়ের সুউচ্চ পাহাড়েরও। শীতের শিশির ভেজা সকালে মুগ্ধ হবেন ভ্রমণে আসা পর্যটকরাও।
স্থানীয়রা জানান, শ্রাবণ থেকে পৌষ মাস পর্যন্ত এ হাওরে লাল শাপলা ফোটে। এরপর হাওরের পানি একদম কমে যায়; ফলে সেভাবে শাপলার দেখা মিলে না। তবে হাওরের সৌন্দর্য্য উপভোগের জন্য শরতের শেষ ভাগ থেকে হেমন্তের মাঝামাঝি সময়ই উপযুক্ত।
তারা জানান, পানি কিছুটা কমলেও পুরো হাওর জুড়েই ছেয়ে আছে লাল শাপলায়। ভোর থেকেই শাপলা পাঁপড়ি মেলতে শুরু করে। বেলা বাড়ার সাথে সাথে ফুল চুপসে যেতে থাকে। ফলে সকাল ১০টা পর্যন্তই ফুটন্ত লাল শাপলার রূপের দেখা মেলে। এ কারণে সকাল থেকেই এ হাওর এলাকায় দর্শনার্থীদের চাপ থাকে বেশি।
মঙ্গলবার ডিবির হাওর ঘুরে দেখা গেছে, দলবেঁধে সেখানে বেড়াতে এসেছেন অনেকেই। বেড়াতে আসা দর্শনার্থীদের মধ্যে তরুণ-তরুণীর আধিক্যই বেশি। এদেরই একজন আফসানা জান্নাত; তিনি সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
তিনি বলেন, ‘আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে ডিবির হাওরের লাল শাপলার সৌন্দর্য্য দেখতে এসেছি। খুবই ভালো লাগছে।’
ঢাকা থেকে সিলেট বেড়াতে আসা ফয়সাল আহমদ বললেন, ফেসবুকে লাল শাপলার বিলের কথা জেনেছিলাম। এজন্য সিলেট ট্যুরে এ হাওরটিও লিস্টে রেখেছিলাম। আর জাফলং-লালাখাল ঘুরতে এলে কাছাকাছি স্থানে হওয়াতে এ হাওরটি ঘুরে যেতে দর্শনার্থীদের পরামর্শও দেন তিনি।
গোয়াইনঘাট প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মনজুর আহমদ বললেন, পাশ্ববর্তী উপজেলা হওয়ার কারণে সময় পেলেই হাওরে ঘুরতে আসি। সিলেটে লাল শাপলার জন্য এ হাওর খ্যাতি পেয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ হাওরের পরিবেশ রক্ষায় উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, এই হাওরে শীতকালে পরিযায়ী পাখির ঢল নামে। একই সাথে দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির মাছও ধরা পড়ে। গ্রামের জেলেরা হাওর থেকে মাছ ধরে থাকেন। তবে শাপলার যেন কোন ধরনের ক্ষতি না হয় সে বিষয়টি খেয়াল রাখতে প্রশাসন নজরদারি করে থাকে বলে জানান তিনি।
ছোট ছোট নৌকায় করে শাপলার সৌন্দর্য্য উপভোগ করেন দর্শনার্থীরা। আকারভেদে এসব নৌকার ভাড়া ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা রাখা হচ্ছে। পর্যটকরা এ ভাড়াকে অতিরিক্ত ভাড়া বলে দাবি করছেন। তবে মাঝিরা বলছেন, হাওরে পানি কম। আর অতিরিক্ত কাদার কারণে লগি দিয়ে নৌকা চালাতে বেশ কষ্ট হয়। পুরো হাওরের একাংশ ঘুরতেই দেড়-দুই ঘণ্টা সময় লেগে যায়। এ কারণে তারা এত ভাড়া নিচ্ছেন।
ডিবির হাওরের কেন্দ্রী বিলে ডুবিয়ে হত্যা করা হয় জৈন্তা রাজ্যের রাজা রাম সিংহকে। তার স্মৃতিতে নির্মিত দুইশ বছরের পুরাতন একটি মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ এখনও বর্তমান আছে সেখানে। যা মূলত ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তেই অবস্থিত। ঐতিহাসিক এই স্থানটিও দেখতে পাবেন পর্যটকরা।
যেভাবে যাবেন শাপলার বিল: সিলেট নগরীর সুবহানীঘাট পয়েন্ট থেকে জাফলংগামী বাসে করে যাওয়া যাবে জৈন্তাপুর বাজারে। সেখান থেকে ব্যাটারি টমটম নিয়ে সরাসরি বিলে যাওয়া যায়। সময় লাগবে এক থেকে দেড় ঘণ্টা। বাসের ভাড়া জনপ্রতি ৫০টাকা। আর টমটম ১০টাকা করে ভাড়া নিয়ে থাকে। এছাড়া নগর থেকে সরাসরি সিএনজি অথবা লেগুনা রিজার্ভ করেও যাওয়া যাবে ডিবির হাওরে।
সিলেট/নোমান/সাইফ
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন