ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

ডেঙ্গুজ্বর নিয়ে ধারাবাহিক : সূচনা পর্ব

ডা. সজল আশফাক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৫৪, ৩১ জুলাই ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ডেঙ্গুজ্বর নিয়ে ধারাবাহিক : সূচনা পর্ব

ডেঙ্গুজ্বর এ সময়ের আলোচিত স্বাস্থ্য সমস্যা। মহামারীর সংজ্ঞা অনুযায়ী এবারের ডেঙ্গুজ্বর মহামারী কিনা তা এপেডিওলজিস্ট বলতে পারবেন। তবে এবার প্রকোপ যে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে এ নিয়ে কারো দ্বিমত থাকার কথা নয়। ইতিহাসের তথ্যানুযায়ী ১৯৯৯ সালের জুন মাসে সাংবাদিক মাসুদ কামাল একটি দৈনিক প্রতিবেদনের মাধ্যমে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ প্রদত্ত তথ্য-উপাত্তের মাধ্যমে ঢাকায় প্রথম ডেঙ্গুজ্বরের প্রমাণ তুলে ধরেন। তার আগে ১৯৬৪ সালে একবার ঢাকায় জ্বরের প্রকোপ দেখা গিয়েছিল। তখন সে জ্বরের কোনো কারণ খুঁজে না পেয়ে বিশেষজ্ঞরা একে ‘ঢাকা ফিভার’ নামে অভিহিত করেছিলেন। ধারণা করা হয় সেই জ্বরটিও ডেঙ্গুজ্বর ছিল। সম্ভবত সেটাই ছিল বাংলাদেশে প্রথম আক্রমণ।
 

ডেঙ্গুজ্বর কী?
এটি এডিস মশাবাহিত ভাইরাসজনিত এক ধরনের তীব্র জ্বর। এই জ্বর সাধারণত দুই ধরনের হয়।
১. ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গুজ্বর
২. হেমোরেজিক ডেঙ্গুজ্বর
 

ডেঙ্গু ভাইরাস কয় ধরনের?
ডেঙ্গু ভাইরাসের ৪টি সেরোটাইপ। এগুলো হচ্ছে-DEN-1, DEN-2 DEN-3, DEN-4. এই ৪টি সেরোটাইপ থেকেই ডেঙ্গুজ্বর হতে পারে। তবে এগুলোর মধ্যে DEN-2 DEN-3 বেশি মারাত্মক।
 

এডিস মশা দেখতে কেমন?
এডিস মশা দেখতে গাঢ় নীলাভ কালো রঙের। এই মশার সারা শরীরে সাদা ডোরা কাটা দাগ আছে। এডিস ইজিপটাই এবং এডিস এলবোপিকটাস নামক দুই প্রজাতির স্ত্রী মশা মূলত ডেঙ্গুজ্বরের ভাইরাস বহন করে। তবে এডিস এলবোপিকটাসকে শহর অঞ্চলে কম দেখা যায়। এডিস এলবোপিকটাসকে বলা হয় ‘টাইগার মশা’। এটি সাধারণত গ্রামাঞ্চলে থাকে তবে শহরেও থাকতে পারে। এডিস ইজিপটাই শহরাঞ্চলে বেশি থাকে, আর এর প্রকোপই সবচেয়ে বেশি। দুটি মশার ডিম পাড়ার আচরণ একই।
 

এডিস মশা কি উঁচুতেও অবস্থান করে?
এডিস মশা অনেক উঁচুতেও চলাচল করতে সক্ষম। সাধারণত সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১০০০ মিটার উপরেও এডিস মশার অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। ভারতে ২১২১ মিটার উঁচু স্থানে এবং কলাম্বিয়ায় ২২০০ মিটার উঁচুতেও এডিস মশা পাওয়া গেছে। সুতরাং উঁচুতে অর্থাৎ উপরের তলায় বসবাস করলে এডিস মশা আপনার কাছে আসতে পারবে না- এমন মনে করার কোনো কারণ নেই।
 

এডিস মশা কখন কামড়ায়?
এডিস মশা সাধারণত দিনের বেলায় কামড়ায়। বিশেষ করে সকালবেলার প্রথম দিকে এবং বিকেল বেলার শেষ দিকে এই মশা বেশি কামড়ায়। তাই দিনের বেলা মশারি খাটিয়ে ঘুমাতে হবে। দিনের বেলা বাসায় কিংবা অফিসে ফুল প্যান্ট, ফুলশার্ট এবং মোজা পরিধান করে এডিস মশার কামড় থেকে কিছুটা রেহাই পাওয়া যেতেও পারে।
 

এডিস মশা কীভাবে এলো?
এডিস মশা প্রথমে আফ্রিকার গাছের কোটরে বাস করতো বলে মনে করা হয়। তখন এই মশা বৃষ্টির ঠিক পরপরই গর্তে জমে থাকা পানিতে ডিম পাড়তো। বর্ষাকাল এবং অতিরিক্ত আর্দ্র পরিবেশে এডিস মশার ডিমগুলো বেঁচে থাকতে পারে। ডিম ফোটার জন্য এদের পানির প্রয়োজন হয় না। বৃষ্টি কমে যাওয়ার সাথে সাথে বয়স্ক এডিস মশার প্রকোপ কমতে থাকে। মোটকথা এডিস মশা বর্ষাকালেই বেশি কামড়ায়। শহর ও শিল্পোন্নয়নের সঙ্গে মশার মধ্যেও জেনেটিক পরিবর্তন আসে। নতুন পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর জন্য মশার একটি নতুন স্ট্রেইন তৈরি হয়। নতুন স্ট্রেইনের এই মশা নিজেকে শহরের সঙ্গে মানিয়ে নেয়। প্রথম এই নতুন স্ট্রেইনের এডিস মশা, মানুষের তৈরি মাটির ও চীনামাটির পাত্রে সারা বছর ধরে ডিম পাড়ার ক্ষমতা অর্জন করে। এভাবে মানুষের নাগরিক জীবনের সঙ্গে নতুন স্ট্রেইনের এডিস মশা খাপ খাইয়ে নেয়। এক পর্যায়ে এই এডিস মশা শহরের বর্জ্য- পড়ে থাকা টায়ার, চিপসের প্যাকেট, প্লাস্টিকের বোতল ইত্যাদিতে ডিম পাড়ে এবং বেঁচে থাকার ক্ষমতা অর্জন করে। এখনো দুই ধরনের এডিস মশা রয়েছে। যার একটি বন্য, অন্যটি শহুরে। বন্য ধরনটি তার বন্যতা হারিয়ে আফ্রিকা থেকে জাহাজের মাধ্যমে সমুদ্র পথে বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। এডিস মশার বন্য ধরনটি এখনো আফ্রিকাতে পাওয়া যায়। ডেঙ্গু ভাইরাসের প্রথম বাহক মশা না বানর এ বিষয়ে সুস্পষ্ট কিছু জানা যায়নি। তবে এটা জানা গেছে যে, ডেঙ্গু ভাইরাস এশিয়ার জঙ্গলগুলোতে মশা-বানর-মশা এই চক্রাকারে আবর্তিত হচ্ছে। (চলবে)

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩১ জুলাই ২০১৯/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়