ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

৬ বছরে কাজ মাত্র ২১ শতাংশ, বাড়তি টাকার আবদার

হাসিবুল ইসলাম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:৫১, ৪ নভেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
৬ বছরে কাজ মাত্র ২১ শতাংশ, বাড়তি টাকার আবদার

রাজধানীতে ওয়াসার পানি নিয়ে নগরবাসীর অভিযোগ নতুন কিছু নয়। ময়লা দুর্গন্ধযুক্ত পানি পানের কারণে ডায়রিয়া-আমাশয়ের মতো রোগে অনেকে আক্রান্ত হচ্ছে। এ সমস্যা সমাধানে ঢাকা ওয়াসার একটি প্রকল্পের কাজ চলছে কচ্ছপ গতিতে। ছয় বছরে মাত্র ২১ শতাংশ কাজ সম্পন্ন করেছে এ সংস্থা।

কাজ শেষ করতে এ প্রকল্পে নতুন করে আরো ২ হাজার ৯৮৩ কোটি ৬১ লাখ টাকা বরাদ্দের আবদার করেছে ঢাকা ওয়াসা। পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানিয়েছে, ঢাকা এনভায়রনমেন্টাল সাসটেইনেবল ওয়াটার সাপ্লাই প্রজেক্টের (ডিএএসডাব্লিউএসপি) আওতায় এ বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।

ঢাকা ওয়াসা ২০১৩ সালের অক্টোবরে একনেকে এ প্রকল্পের অনুমোদন পায়। শুরুতে এই প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয় ৫ হাজার ২৪৮ কোটি টাকা। সরকারি তহবিল থেকে ১ হাজার ৭৩৯ কোটি টাকা। জাইকা দেবে ৩ হাজার ৪৯৯ কোটি এবং ওয়াসা দেবে ১০ কোটি টাকা।

প্রকল্পটি ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মেয়াদে সম্পন্ন হওয়ার সময়সীমা নির্ধারিত ছিল। কিন্তু ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর পযর্ন্ত কাজ হয়েছে মাত্র ২০ দশমিক ৮৫ শতাংশ।

নতুন করে প্রকল্পের ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে ৮ হাজার ২৩১ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। অর্থাৎ আগের চেয়ে ৫৭ শতাংশ বেশি টাকা চাওয়া হয়েছে। শুধু বাড়তি বরাদ্দ নয় প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদও বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। এক প্রকল্পের আওতায় এতো বেশি বাড়তি বরাদ্দ চাওয়ায় ঢাকা ওয়াসার প্রতি ক্ষুব্ধ পরিকল্পনা কমিশন।

মেয়াদ ও ব্যয় বাড়ার প্রসঙ্গে ঢাকা ওয়াসা জানায়, সেকেন্ডারি ৫০ কিলোমিটার ডিস্ট্রিবিউশন লাইন, ৫০টি নতুন গভীর নলকূপ স্থাপন, ডিমারকেশন পিলার, সীমানা প্রাচীর, ভূমি উন্নয়ন, নলকূপ স্থাপন সুপারভিশন কাজে ব্যক্তি পরামর্শক, পানি শোধনাগারের জন্য নিরাপত্তা কর্মী ভাড়া, ইন্টারনেট, ফ্যাক্স ও টেলিফোন ব্যয় বাবদ এই বাড়তি বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।

এ প্রকল্প চারটি প্যাকেজ নিয়ে গঠিত। প্রকল্পের প্রধান কাজ নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জের গন্ধর্বপুরে দৈনিক ৫০ কোটি লিটার পানি শোধনের ক্ষমতাসম্পন্ন ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপন করা। একই সঙ্গে নারায়নগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার উপজেলার মেঘনা নদীর তীরে বিশ্বনন্দী পয়েন্টে ১০৫ কোটি লিটার ক্ষমতাসম্পন্ন ইনটেক নির্মাণ করা।

প্রকল্পের সমস্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে সব মিলিয়ে সময় লেগেছে সাড়ে তিন বছর। ঠিকাদারের সঙ্গে চুক্তি করতে আরো এক বছর লাগবে। ফলে প্রকল্প বাস্তবায়নে সময় লাগবে ২০২২ সালের জুন পযর্ন্ত।

বাড়তি বরাদ্দ ও সময় বৃদ্ধি প্রসঙ্গে প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) মাহমুদুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের প্রকল্প চারটি প্যাকেজে বাস্তবায়িত হচ্ছে। ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট নির্মাণ কাজে ১২শ কোটি টাকা বাড়তি লাগছে। প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণ ব্যয় শুরুতে ৩০০ কোটি টাকা ছিল এখন বেড়ে ৮০০ কোটি হয়েছে। অনেক জিনিসপত্রের দাম বাড়ার কারণে প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে।’

উল্লেখ্য, ঢাকা মহানগরীতে প্রতিদিন পানির চাহিদা ২৪৫ থেকে ২৫০ কোটি লিটার। ২২৫ থেকে ২৩০ কোটি লিটার পানি সরবরাহ করা হয় ঢাকা শহরে। ফলে প্রতিদিন ঢাকাতে পানির ঘাটতি থাকছে প্রায় ২০ কোটি লিটার।

এ ঘাটতি মেটাতে ঢাকা এনভায়রনমেন্টাল সাসটেইনেবল ওয়াটার সাপ্লাই প্রজেক্ট (ডিএএসডাব্লিউএসপি) শীর্ষক প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। এ প্রকল্প থেকে প্রতিদিন আরো বাড়তি ৫০ কোটি লিটার বিশুদ্ধ পানি ঢাকাতে সরবরাহ করার কথা।

প্রকল্পের আওতায় মেঘনা নদী থেকে পাইপ লাইনের মাধ্যমে পানি নারায়ণগঞ্জ জেলার বিশ্বনন্দী, আড়াইহাজার, রূপগঞ্জ হয়ে গন্ধর্বপুর এলাকায় ট্রিটমেন্ট প্লান্টের মাধ্যমে পরিশোধন করা হবে। এখান থেকে প্রতিদিন ৫০ কোটি লিটার পরিশোধিত পানি পাওয়ার কথা।

 

ঢাকা/হাসিবুল/জেনিস/এনএ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়