ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

ঢাবি ছাত্রলীগের শিক্ষার্থীবান্ধব উদ্যোগ

আবু বকর ইয়ামিন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৫৪, ২১ জানুয়ারি ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ঢাবি ছাত্রলীগের শিক্ষার্থীবান্ধব উদ্যোগ

আবু বকর ইয়ামিন : শিক্ষার্থীদের কাছে সংগঠনের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে শিক্ষার্থীবান্ধব নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ। মানসম্মত খাবার পরিবেশন ও ক্যান্টিনের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা রক্ষা এবং খাবারের মান অনুযায়ী যথাযথ মূল্য নির্ধারণের উদ্যোগ নিয়েছে তারা। এ লক্ষ্যে প্রতিটি হল ও ক্যান্টিন পরিদর্শন করছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।

এ ছাড়া সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আবাসন সংকট, খাবারের উচ্চ মূল্য, রিডিং রুমে আসন সঙ্কট, বহিরাগত সমস্যা, অপরিষ্কার টয়লেট, হলের বারান্দায় আলোকস্বল্পতা, পত্রিকা রুম না থাকা, গেমস রুম না থাকাসহ নানা সমস্যা সমাধানে সহযোগিতা করছেন ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতারা।

শিক্ষার্থীবান্ধব এসব উদ্যোগের বিষয়ে ছাত্রলীগের ঢাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন প্রিন্স রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘ছাত্রলীগ সবসময় ছাত্রদের অধিকার নিয়ে কাজ করে। বিভিন্ন সময় ছাত্রদের কাছ থেকে নানা অভিযোগ পাওয়া যায়। মাঝে মাঝে ক্যান্টিন মালিকদের পক্ষ থেকেও অভিযোগ পাওয়া যায় যে, অনেকে ফাউ খাচ্ছেন। আমরা শিক্ষার্থীদের বিষয়টিও দেখছি, যাতে খাবারের মানোন্নয়ন হয়। আবার ক্যান্টিনে যাতে কেউ ফাউ খেতে না পারে সে বিষয়টিও তদারকি করছি। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা হলগুলো পরিদর্শন করছি। হল প্রশাসনের সঙ্গে বসছি। যেসব বিষয়ে সমস্যা আছে, সেগুলো হল প্রশাসনকে জানাচ্ছি। ছাত্ররা যাতে কোনো সমস্যায় না পড়েন সে বিষয়ে কাজ করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ সবসময় প্রস্তুত আছে। আমরা ধারাবাহিকভাবে তাদের সব দাবি পূরণ করব।

খাবারের মান উন্নত করতে ক্যান্টিন মালিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে মোতাহার হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘ছাত্রদের মাছ-মাংস খাওয়ানোর দরকার নেই, আপনারা মৌসুমী সবজি দিন।’

তিনি হল ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদেরকে রুমে খাবার নেওয়া এবং ফাও খাওয়ার ব্যাপারে সতর্ক করেন। আগামী ১০ দিনের মধ্যে সব বহিরাগতকে বের হল ত্যাগের আলটিমেটাম দেন ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। অন্যথায় হল প্রশাসনের সহযোগিতায় বহিরাগতদের পুলিশে সোপর্দ করা হবে বলে সতর্ক করেন মোতাহার হোসেন প্রিন্স।

এ বিষয়ে ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আবিদ আল হাসান বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে সংগ্রাম করবে ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তোলার জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। ধারাবাহিকভাবে আমরা ১৯ দফা বাস্তবায়ন করব। এক্ষেত্রে সবার সহযোগিতা চাই।

ক্যান্টিন মালিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমরা ফাও এবং ফ্রি খাওয়া বন্ধ করে দেব। আপনারা ঠিক হয়ে যান।

শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সমস্যা চিহ্নিত করে গত বছরের ২৩ অক্টোবর প্রশাসনের কাছে ১৯ দফা দাবি জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দেয় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ।

ছাত্রলীগের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে মানসম্মত খাবার পরিবেশন, ক্যান্টিনের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা রক্ষা, খাবারের মান অনুযায়ী যথাযথ মূল্য নির্ধারণ, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেক বিভাগের শ্রেণিকক্ষগুলোতে শিক্ষা সরঞ্জাম, ডিজিটাল বোর্ড স্থাপন, প্রজেক্টর ও কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন, সুপেয় পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন, ঢাবির প্রত্যেক শিক্ষার্থীর হাতে স্বল্পমূল্যে এবং সহজ কিস্তিতে ল্যাপটপ প্রদান, প্রত্যেক ল্যাবরেটরিতে সর্বাধুনিক সরঞ্জাম ও প্রযুক্তি সরবরাহের মাধ্যমে শিক্ষার মান উন্নয়ন, ক্যাম্পাসকে মাদকমুক্ত করার লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় নিয়মিত অভিযান পরিচালনা, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে দোষীদের বিরুদ্ধে যথাযথ একাডেমিক ও আইনানুগ ব্যবস্তা গ্রহণ, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অংশ হিসেবে বিভিন্ন মোড় ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ডাস্টবিন স্থাপন ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে সচেতনতামূলক বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ, প্রত্যেক আবাসিক হলের পারিপার্শ্বিক পরিবেশ উন্নয়নে নিয়মিত মশা ও ছারপোকা নিধন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস ও প্রতিটি আবাসিক হলকে ওয়াইফাই জোনের আওতাভুক্ত করা, ঢাবির প্রতিটি গ্রন্থাগার আধুনিকীকরণ, যুগোপযোগী পাঠ্য বই, মুক্তিযুদ্ধের ওপর রচিত বইয়ের সংগ্রহ বৃদ্ধি, ঢাবির সব শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য খেলার মাঠ নিয়মিত পরিচর্যা করা ও মাঠগুলোকে ভাড়া প্রদান বন্ধ নিশ্চিত করা এবং বিভিন্ন সময়ে খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের আয়োজন, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের যথাযথ ব্যবস্থা ও ভূমিকা গ্রহণ, আবাসিক হলগুলোর শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তায় সিসি ক্যামেরা স্থাপন, ইভটিজিং প্রতিরোধে যৌন নিপীড়নবিরোধী সেলকে কার্যকর করা, শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসন ও পরিবহণ ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ, মেয়েদের হলগুলোতে যাতায়াতের জন্য পর্যাপ্ত পরিবহণের ব্যবস্থা, বিশ্ববিদ্যালয় মেডিক্যাল সেন্টারের আধুনিকীকরণের মাধ্যমে পর্যাপ্ত চিকিৎসা সরঞ্জাম ও ২৪ ঘণ্টা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের ব্যবস্থা করা, শিক্ষার মান উন্নয়নে বিভিন্ন বিষয়ের ওপর গবেষণাকেন্দ্র স্থাপন ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের গবেষণায় অংশগ্রহণে উৎসাহ প্রদান করা, গরিব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তির সংখ্যা বাড়ানো, উচ্চ শিক্ষা গ্রহণে মেধাবীদের বিদেশ গমনে সহায়তা, ক্যাম্পাসের ভেতরে ভাড়ায়চালিত বাস ও ট্রাক চলাচল নিয়ন্ত্রণ, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, পুরাতন হলগুলো দ্রুত সংস্কার করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের বসবাসের উপযোগী করা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন আবাসিক হল ও বিভিন্ন স্থানের দূরত্ব অনুযায়ী যথাযথ রিকশাভাড়া নির্ধারণ করা।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২১ জানুয়ারি ২০১৭/ইয়ামিন/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়