ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

তবু আমারে দেব না ভুলিতে...

শাহ মতিন টিপু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৩:৪০, ২৭ আগস্ট ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
তবু আমারে দেব না ভুলিতে...

শাহ মতিন টিপু: ‘আমি চিরতরে দূরে চলে যাব তবু আমারে দেবনা ভুলিতে.. ।’ আজ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪৪তম প্রয়াণ দিবস।

সত্যি আমাদের মন ও মনন দখল করে আছেন জাতীয় কবি । তিনি আপন সৃষ্টি কুশলতায় আমাদের জাতীয় জীবনে এতটাই মিশে আছেন যে, তাকে ভুলে যাওয়া অসম্ভব।

১৩৮৩ সালের ১২ ভাদ্র শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে (সাবেক পিজি হাসপাতাল) শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। কবিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয়। এখানেই তিনি চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন।

কাজী নজরুল ইসলাম বাংলা ভাষাভাষি সকলেরই প্রিয় কবি। পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ উভয় বাংলাতেই তার কবিতা ও গান সমানভাবে সমাদৃত। তার রচনায়, কবিতায়, গানে, প্রবন্ধ-ভাষণে বিদ্রোহী দৃষ্টিভঙ্গির কারণে তিনি বিদ্রোহী কবিও। তার ক্ষুরধার লেখনি ছিলো মানুষের ওপর মানুষের অত্যাচার, প্রভূত্ব, অধর্মের চর্চা এবং সামাজিক অনাচার ও শোষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার।

তিনি একাধারে কবি, সাহিত্যিক, সংগীতজ্ঞ, সাংবাদিক, সম্পাদক, রাজনীতিবিদ এবং সৈনিক হিসেবে অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে সর্বদাই ছিলেন উচ্চকন্ঠ। বাংলা সাহিত্যে অগ্নিবীণা হাতে নিয়ে এসেছিলেন। প্রকাশিত হয়েছেন ধূমকেতুর মতো।

তার ডাক নাম ছিল ‘দুখু মিয়া’। দুঃখ ও কষ্টেই কেটেছে তার শৈশব। যখন তার পিতার মৃত্যু হয়, তখন তার বয়স মাত্র নয় বছর। পারিবারিক অভাব-অনটনে তার শিক্ষাজীবন চরমভাবে বাঁধাগ্রস্ত হয়। মাত্র দশ বছর বয়সে তাকে নেমে যেতে হয় জীবিকা অর্জনে।

আর্থিক সমস্যা তাকে পড়ালেখায় বাধাগ্রস্ত করেছে বারবার। ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার পরই তাকে আবার কাজে ফিরে যেতে হয়। কষ্টের মাঝেই অতিবাহিত হয় তার বাল্য জীবন।

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ১৩০৬ সালের ১১ জ্যৈষ্ঠ পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। প্রেম, দ্রোহ, সাম্যবাদ ও জাগরণের কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা ও গান শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে সংগ্রামে জাতিকে উদ্বুদ্ধ করেছে। মুক্তিযুদ্ধে তাঁর গান ও কবিতা ছিল প্রেরণার উৎস।

নজরুলের কবিতা, গান ও সাহিত্য কর্ম বাংলা সাহিত্যে নবজাগরণ সৃষ্টি করে। তিনি ছিলেন অসাম্প্রদায়িক চেতনার পথিকৃৎ লেখক। তাঁর লেখনি জাতীয় জীবনে অসাম্প্রদায়িক চেতনা বিকাশে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। তাঁর কবিতা ও গান মানুষকে যুগে যুগে শোষণ ও বঞ্চনা থেকে মুক্তির পথ দেখিয়ে চলছে।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর পরই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামকে স্বপরিবারে সদ্যস্বাধীন বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বাংলাদেশে তাঁর বসবাসের ব্যবস্থা করেন। ধানমন্ডিতে কবির জন্য একটি বাড়ি প্রদান করেন।

জাতীয় কবির মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও পেশাজীবী সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

বাংলাদেশ বেতার, টেলিভিশন ও বিভিন্ন বেসরকারী টেলিভিশন চ্যানেল কবির মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচারের উদ্যোগ নিয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সকালে শোভাযাত্রা সহকারে কবির সমাধি প্রাঙ্গণে গমন, পুষ্প অর্পণ এবং ফাতেহা পাঠ ও পরে কবির মাজার প্রাঙ্গণে আলোচনা সভা। বাংলা একাডেমি কবির মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে একক বক্তৃতার আয়োজন করেছে। বিকাল ৪টায় এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান।

‘অসংকোচ প্রকাশের দুরন্ত সাহসে’ঝাঁকড়া চুলের বাবরি দোলানো কাজী নজরুল যেমন বিদ্রোহের অনল ছড়িয়েছেন, তেমনি প্রেম-ভালবাসাতেও দ্যোতনা তৈরি করে গেছেন। সৃষ্টি সুখের উল্লাসে তিনি যে ঝংকার তুলে দিয়ে গেছেন, তাতে তাকে ভুলে যাওয়া মোটেই সহজ নয়।


রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৭ আগস্ট২০১৯/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়