ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

তাদের জীবনই এখন ঝুঁকিপূর্ণ

মো. আনোয়ার হোসেন শাহীন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:১১, ১৯ আগস্ট ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
তাদের জীবনই এখন ঝুঁকিপূর্ণ

মাগুরা প্রতিনিধি : অগ্নিকাণ্ড, দুর্ঘটনা ও দুর্যোগে মানুষকে মৃত্যুমুখ থেকে উদ্ধার করেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সদস্যরা। কিন্তু মাগুরা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের পুরনো দোতলা ভবনের বিভিন্ন জায়গায় ফাটল দেখা দেওয়ায় এখানে আবাসিক সদস্যরা নিজেরাই রয়েছেন মৃত্যুমুখে।

‘দুর্গত মানুষকে উদ্ধার করতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করি, অথচ আজ আমাদের নিজেদের জীবনই এখানে ঝুঁকিপূর্ণ।’ সাংবাদিকদের কাছে চরম আতংক ও দুর্ভোগের কথা এভাবেই জানালেন মাগুরা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন ব্যারাকে অবস্থানরত ফায়ারম্যান আব্দুল কাদির।

তিনি বলেন, ‘আমাদের স্ত্রী-সন্তান, পরিবার আছে, তাদেরও প্রতিটি মুহূর্ত কাটছে দুশ্চিন্তায়। ভাড়া বাসায় বাস করার সামর্থ থাকলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এভাবে ব্যারাকে থাকতাম না।’

সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, ভবনের ছাদ ও কার্নিশসহ বিভিন্ন অংশে ফাটল দেখা দেওয়ায় দুর্ঘটনা এড়াতে বাঁশের খুঁটি দিয়ে ঠেকা দেওয়া হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে এখানে অবস্থানরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা আতংকগ্রস্ত থাকেন সব সময়। 



মাগুরা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের কর্মকর্তা কর্মচারীরা ভয়াবহ দুর্ঘটনার আশংকায় আতংকগ্রস্ত থাকেন সব সময়।

কিন্তু বিকল্প কোনো ব্যবস্থা না থাকায় ৪৯ বছর আগে নির্মিত ঝুঁকিপূর্ণ এ ভবনটিই ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। ভবনটির নিচতলায় রয়েছে স্টেশন অফিসারের অফিস কক্ষ, ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি রাখার জায়গা এবং দ্বিতীয় তলায় রয়েছে এখানকার কর্মকর্তা এবং স্টাফদের ব্যারাক যেখানে নিয়মিতভাবে বসবাস করতে বাধ্য হন ২৬ জন মানুষ।

ভবনটির ব্যারাকে বসবাসকারীদের মধ্যে রয়েছেন একজন সাব-অফিসার, ১৭ জন ফায়ারম্যান, তিনজন টিম লিডার গাড়ির চালকরা। থাকার কক্ষ ছাড়া পাশের দুটি কক্ষ ব্যবহৃত হয় যথাক্রমে খাবার ঘর এবং রান্নাঘর হিসেবে।

দ্বিতীয় তলায় উঠতেই দেখা গেল যে, এখানকার প্রত্যেকটি কক্ষের দেয়াল এবং ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ে রড বেরিয়ে গেছে বিভিন্ন জায়গায়। শুধু তাই নয়, দ্বিতীয় তলার ছাদ ও কার্নিশে বড় বড় ফাটল দেখা দিয়েছে। বৃষ্টি হলেই ব্যারাকের রান্নাঘরসহ বিভিন্ন জায়গায় ছাদ থেকে পানি চুইয়ে পড়তে শুরু করে। বৃষ্টির পানি থেকে রক্ষা পেতে সেখানে পলিথিন ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা।



বর্তমানে অবস্থা এমন যে, ভবনটি যেকোনো সময় ধসে পড়তে পারে যা ব্যারাকে আবাসিক কর্মীদের  প্রাণহানির কারণ হতে পারে।

মাগুরা গণপূর্ত বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, মাগুরা ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের এই দোতলা ভবনটি নির্মিত হয় ১৯৬৮ সালে। নির্মাণের পর থেকে রং করা ছাড়া ভবনটির যথাযথ সংস্কার হয়নি কখনই। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ক্রমেই অবকাঠামো দুর্বল হয়ে ভবনটি বর্তমানে ধসে পড়ার মত অবস্থায় পৌঁছেছে।

মাগুরা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের স্টেশন অফিসার মনিরুজ্জামান বলেন, ‘ভবনটির এই ভগ্ন দশা বেশ কয়েক বছর যাবৎ। আমরা কয়েকবার লিখিতভাবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করার পর ২০১৬ সালে গণপূর্ত বিভাগের একটি দল এটি পরিদর্শন করে। পরে তারা ভবনটিকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করলেও অদ্যাবধি সংস্কারের কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।’

ফায়ার সার্ভিস স্টেশনে নতুন ভবন নির্মাণের বিষয়ে জানতে চাইলে মাগুরা গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রদীপ কুমার বসু ওই ভবনটির ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘আমাদের পাঠানো লিখিত প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গণপূর্ত অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে নতুন ভবন নির্মাণের লক্ষ্যে ’ডিজাইন ডিভিশন’-এর একটি টিম ভবনটিসহ ভবন এলাকা পরিদর্শন করে গেছে। আর্থিক বরাদ্দ পেলেই নতুন ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করব।’





রাইজিংবিডি /মাগুরা/ ১৯ আগস্ট ২০১৭/ মো. আনোয়ার হোসেন শাহীন/রুহুল/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়