ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

তাপসের আগমনে মাতল পুরান ঢাকা

এসকে রেজা পারভেজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৩৫, ২১ জানুয়ারি ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
তাপসের আগমনে মাতল পুরান ঢাকা

নির্বাচনী প্রচার চালাতে পুরান ঢাকা গিয়ে অভূতপূর্ব এক উষ্ণ সংবর্ধনা পেলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপস। যা দেখে তিনি মুগ্ধ, ভালোবাসায় সিক্ত। তার আগমনে এলাকাবাসী তাকে স্বাগত জানিয়েছেন উৎসবের আমেজে।

এলাকাভেদে কখনো ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে, কখনো ফুলের নৌকা উপহার দিয়ে, কখনো হরেক রকমের উপহার সামগ্রী দিয়ে মঙ্গলবার দিনভর আনন্দে মেতেছিলেন তারা। প্রচার চালাতে গিয়ে শেখ তাপসও পুরান ঢাকার মানুষের ভালোবাসায় মুগ্ধতা প্রকাশ করে বলেছেন, ‘আজকে এই ঐতিহ্যবাহী ঢাকা সুত্রাপূর, গেণ্ডারিয়া, কোতোয়ালীসহ এই এলাকায় গণসংযোগ কার্যক্রম করছি। আমাদের ৫টি রূপরেখা-ঐতিহ্যের ঢাকা, সুন্দর ঢাকা, সচল ঢাকা, সুশাসিত ঢাকা ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার আওতায় উন্নত ঢাকা গড়ে তোলা। এই নবযাত্রা ও নবসূচনায় আমি বিশ্বাস করি ঢাকাবাসী দলমত নির্বিশেষে সবাই উন্নত ঢাকার পক্ষে রায় দেবেন।’

দিনের শুরুতে পুরান ঢাকার রায়সাহেব বাজার এলাকা থেকে প্রচার শুরু করেন তাপস। তার আগমনের খবরে পুরো এলাকা লোকে লোকারণ‌্য হয়ে যায়। নেতাকর্মী তো বটেই সাধারণ মানুষেরও প্রবল আগ্রহ দেখা গেছে। রিকশাচালক রিকশা থামিয়ে স্লোগান দিয়েছেন। পথচারী থমকে দাঁড়িয়ে তার প্রচার দেখেছেন। দোকান থেকে কর্মচারীরা বেরিয়ে এসেছেন তাপসকে একনজর দেখতে।

নৌকার এমন এক পাগল ভক্ত রিকশাচালক মোজাম্মেল হামিদ। বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার প্রতি প্রবল ভালোবাসা আর দুর্বলতার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ছোটকাল থেকেই নৌকার ভক্ত। গ্রামে থাকাকালীন যখনই নির্বাচন হয়েছে, নিজের তাগিদে সবসময় নেমে পড়েছি মিছিল-মিটিংয়ে। কিন্তু ঢাকায় এসে রিকশা চালানোর কারণে এখন আর আগের মতো যাওয়া হয় না।

তিনি জানান, তবে যখন নৌকার পক্ষে প্রচার দেখেন বা সামনে পড়েন, নিজেকে আর ধরে রাখতে পারেন না। মনের অজান্তেই নিজে শামিল হন, ‘নৌকা, নৌকা’ স্লোগানের বিট তাকে আলোড়িত করে।

শেখ তাপস যখন নৌকার প্রচার চালাচ্ছিলেন তখন তার পেছনে থাকা নেতা-কর্মীদের স্লোগানের সঙ্গে কিছুক্ষণ গলা মেলালেন মোজাম্মেল। পরে তাপসের কয়েকটি পোস্টার চেয়ে নিজের কাছে রাখলেন তিনি। আর নিজের রিকশায় স্টিকার লাগালেন খুব যত্ম করে।  

রায়সাহেব বাজার থেকে ধোলাইখাল এলাকা হয়ে কলতাবাজার এলাকা ঘুরে সূত্রাপুরের লক্ষ্মীবাজার এলাকায় প্রচার চালান তাপস। এ সময় নৌকার তালে তালে নেতা-কর্মীদের পাশে বেশকিছু ‘পাগল ভক্ত’কে দেখা গেছে বিভিন্ন বেশে। কেউ মাথায় নৌকা নিয়ে, কেউ নিজের সাইকেলকে নৌকা বানিয়ে এসেছেন, আবার কেউ সত্যিকারের নৌকার আদলে গড়ে তুলেছেন প্রতীকী নৌকা। জানালেন, প্রচারের স্বার্থে নয়, বরং ভালোবাসা থেকে নিজের খরচায় এসব করেছেন তারা।

বেলা ৩টার দিকে তাপস যখন সূত্রাপুর থানা এলাকায় আসেন, তখন ওই এলাকা জনসমুদ্র। নেতা-কর্মীদের ভিড়। তাপসকে দেখতে এলাকাবাসীর কৌতূহল আর সরু রাস্তা সব মিলিয়ে সমাবেশে রূপ নেয় সেখানে। মানুষের ভিড়ে তাপসকে খুঁজে পাওয়াই যেন দায়! তাপসের নির্বাচনী প্রচারে এমনিতেই হাজার হাজার লোকের জনসমাগম ঘটে। তবে এসব ছাড়িয়ে এদিন সূত্রাপুর ওয়ে ওঠে এক টুকরো মিছিলের নগরী। তাপস যখন রাস্তা দিয়ে হাঁটছিলেন বাড়িগুলো ছাদ থেকে পড়ছিল ফুলের পাপড়ি। যেন তাকে বরণ করতে এলাকাবাসী আগেই ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিল। এসব দেখে মুগ্ধ তাপস নিজেও। লক্ষ্মীবাজার, শাহী মসজিদ, সেন্ট ফ্রান্সিস জেভিয়ার্স গার্লস হাইস্কুল, সেইন্ট গ্রেগরী হাইস্কুল হয়ে মিউনিসিপ্যাল মার্কেটে এসে কিছুক্ষণ দাঁড়ান শেখ ফজলে নূর তাপস। এ সময় আশপাশের এলাকার মানুষজন রাস্তায় নেমে আসে তাকে একনজর দেখতে। বাড়ির ছাদ থেকে ফেলা হয় পুস্পবৃষ্টি।

পুরান ঢাকার মানুষের এমন ভালোবাসায় মুগ্ধ হয়ে বক্তব্য রাখেন শেখ ফজলে নূর তাপস। তিনি বলেন, ‘পুরান ঢাকার দিকে কেউ কখনো পরিকল্পনা নিয়ে এগোয়নি। আমি পুরান ঢাকাকে নিয়ে পরিকল্পনা দিয়েছি। এখানকার ঐতিহ্য সংরক্ষণ করে সৌন্দর্য প্রস্ফুটিত করে উন্নত ঢাকা গড়তে কাজ করবো।’

এ সময় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ সভাপতি আবু আহমেদ মান্নাফি, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট সানজিদা খানম, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সভাপতি কামরুল হাসান রিপন, সূত্রাপুর থানা আওয়ামী লীগ সভাপতি হাজী মো. সাহিদ, সাধারণ সম্পাদক গাজী আবু সাঈদসহ বিপুলসখ্যক নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন।  

নেতা-কর্মী আর এলাকাবাসীর চাপ সামলাতে কঠোর পরিশ্রম করতে দেখা গেছে গাজী আবু সাঈদকে। তিনি বলেন, ‘শুধু সূত্রাপুর নয়, পুরান ঢাকায় গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। শেখ ফজলে নূর তাপসের প্রতি ঢাকাবাসীর যে ভালোবাসা আর আগ্রহ তাতে বিপুল ভোটে তিনি বিজয়ী হবেন। সূত্রাপুর এলাকার প্রতিটি নেতা-কর্মী দিনরাত ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে নৌকা আর উন্নয়নের পক্ষে নগরবাসী ধারাবাহিক সমর্থন চাচ্ছেন।’

মিউনিসিপ্যাল মার্কেট থেকে এরপর পর্যায়ক্রমে সুভাষ বোস অ্যাভিনিউ, একরামপুর মোড়, ঋষিকেষ দাস লেনের ঐতিহাসিক সাউন্ড সিস্টেম প্রতিষ্ঠান ‘কল রেডী’র সামনে দিয়ে নির্বাচনী প্রচার তাপস। বিরতিহীনভাবে শ্রী দাস লেন, কেএম দাস লেন, ফরাসগঞ্জ, লালকুটি, শ্যামবাজার, বাংলাবাজার, পাটুয়াটুলী, ইসলামপুর গিয়ে প্রচার চালান নৌকার এই প্রার্থী।

সন্ধ্যায় ইসলামপুর বস্ত্র ব্যবসায়ী মালিক সমিতির দেয়া সংবর্ধনায় যোগ দেন তাপস। সেখানে ব্যবসায়ীরা দলমত নির্বিশেষে তাকে সমর্থন দেন এবং নৌকার পক্ষে কাজ করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। সন্ধ্যায় নবরালেন জামে মসজিদ থেকে মাগরিবের নামাজ আদায় করে আবারো নির্বাচনী প্রচার শুরু করেন তিনি। রাত অবধি গণসংযোগ চালাবেন বলে জানান তাপস। ঘুরবেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে, সেবক হিসেবে নতুন এক উন্নত ঢাকা গড়ার প্রত্যয়ে।  




ঢাকা/পারভেজ/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়