ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

তারাই এখন বাংলাদেশ

আব্দুল্লাহ এম রুবেল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:২৬, ৮ মার্চ ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
তারাই এখন বাংলাদেশ

আব্দুল্লাহ এম রুবেল : খুলনার রূপসা উপজেলার মিলকি দেয়ারা নামে প্রত্যন্ত এক গ্রামে জন্ম মেয়েটির। গ্রামের আর দশটি সাধারণ মেয়ের মতোই পারিবারিক পরিমন্ডলে বড় হতে থাকলেও তার মন বিদ্রোহী হয়ে ওঠে পরিবেশের সাথে। কিছুতেই যেন মন বসতে চায়তো না পড়াশোনায়। মন পড়ে থাকতো ঘরে বাইরে খেলার মাঠে।

পাঠ্য বইয়ের চাইতে ব্যাট-বলের প্রতি ছিল তার বেশি আগ্রহ। বাড়ির পাশে এলাকার ছেলেদের সাথে খেলতো ক্রিকেট। সামাজের নানা কটুকথা, বাধা উপেক্ষা করে খেলাধুলা করে গিয়েছেন। পরে খোঁজ পান খুলনায় মেয়েদের একটি ক্রিকেট কোচিং একাডেমির। সেখানে ভর্তি হয়ে পার করেছেন অনেকটা দিন। আজ সেই মেয়েটিকে সারাদেশ এক নামে চেনে। শুধু দেশ কেন বিশ্ব ক্রিকেটাঙ্গনে আজ এক উজ্জ্বল নাম সালমা খাতুন।



বলছিলাম সালমা খাতুনের কথা। দেশের বাইরে বাংলাদেশের লাল সবুজ পতাকা চেনাতে যার অবদানও কম নয়। সালমার দেখাদেখি এই অঞ্চল থেকে উঠে এসেছেন অনেক নারী ক্রিকেটার। আজ দেশের নারী ক্রিকেটের বড় একটি অংশ খুলনার মেয়েদের দখলে। সারাদেশেই নারীদের অগ্রযাত্রায় এক অনন্য দৃষ্টান্ত সালমা খাতুন। শুধু সালমা কেন, নারীদের এগিয়ে চলার পথে ক্রিকেট দল পিছিয়ে পড়া মানুষদের জন্য অনন্য নজির স্থাপন করেছে। নানা প্রতিকুলতাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সফল হয়ে তারাই এখন বাংলাদেশ।

২০১৮ সালে নারীদের আইসিসি বর্ষসেরা টি-টোয়েন্টি দলে জায়গা করে নিয়েছিলেন রুমানা আহমেদ। যিনি এখন জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের ওয়ানডে অধিনায়কও। ক্রিকেটের আরেক ফরম্যাট টি-টোয়েন্টির নেতৃত্ব দিচ্ছেন সালমা খাতুন। জাতীয় নারী দলে এই মুহুর্তে এই দু’জন বাদেও নিয়মিত ক্রিকেটার আছেন আয়েশা রহমান, শুকতারা, জাহানারা আলম, শায়লা, শারমীনসহ বেশ কয়েকজন।



খুলনার এই মেয়েদের যে মানুষটি ঘর থেকে বাইরে এনে পথ চিনিয়েছেন, তিন হলেন ইমতিয়াজ হোসেন পিলু। এই এলকায় নারী ক্রিকেট গড়ার কারিগর তিনি। যে শহর এক সময় সুন্দরবন বলে পরিচিত ছিলো আজ সেই শহরকে লোকে সালমা-রুমানার শহরও বলে।

নারী ক্রিকেটাররা সফলতার পথে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন গত বছর। যে অর্জনটা এখনও পুরুষ ক্রিকেটাররা করতে পারেনি। এই মুহুর্তে নারী ক্রিকেটের এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের তকমাটা বঙ্গ ললনাদেরই। গত বছর অনুষ্ঠিত এশিয়া কাপ ক্রিকেটে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল। এখনও পর্যন্ত এশিয়া কাপ জেতা হয়নি পুরুষ দলের। এই বিবেচনায় নারীদের একটু এগিয়েই রাখা যায়। আগামী বছর মেয়েদের বিশ্বকাপ ক্রিকেট অনুষ্ঠিত হবে। বাছাইপর্ব পেরিয়ে আবারও বিশ্বক্রিকেট মঞ্চে নিজেদের আরেক ধাপ উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার কথা একাধিকবার বলেছেন বাংলাদেশের নারী ক্রিকেটাররা।



তবে নারী ক্রিকেটারদের এই পথচলাটা এতটাই মসৃন নয়। বাংলাদেশের পুরুষ ক্রিকেট দল বছরের প্রায় পুরোটা সময় ব্যস্ত থাকলেও নারীরা সেই তুলনায় অনেকটা সময় অলস কাটায়। সর্বশেষ আন্তর্জাতিব ম্যাচ খেলেছে মেয়েরা প্রায় পাঁচ মাস আগে। অথচ দারুণ সম্ভাবনা স্বত্ত্বেও মেয়েদের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট নিয়ে বিসিবির তেমন কোন উদ্যেগ নেই। এটা নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন স্বয়ং অধিনায়ক রুমানা আহমেদ। কয়েকদিন আগে রাইজিংবিডিকে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘এভাবে যদি চলতে থাকে, আন্তর্জাতিক ম্যাচ না খেলতে থাকি, আমাদের প্লেয়াররা অবশ্যই পিছিয়ে পড়বে। আমরা এখনও পর্যন্ত ৯ নম্বরে আছি (র‌্যাঙ্কিংয়ে)। জানি না, ভবিষ্যতে কি করতে পারব।’

মেয়েদের ক্রিকেটে উন্নতির জন্য তাই আন্তর্জাতিক ম্যাচ বাড়ানোর তাগিদ রুমানার কন্ঠে, ‘আমরা তো আর ম্যাচ এরেঞ্জ করতে পারব না, বিসিবির অবশ্যই দায়িত্ব যে ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েদের আরও ম্যাচ খেলার সুযোগ দেয়া ।

আমাদের দেশের সামাজিক অবস্থার প্রেক্ষাপট অনেকটাই পরিবর্তন হয়েছে এই মেয়েদের হাত ধরেই। এখন আর ক্রিকেট খেলা মেয়েদের দিকে তেমনভাবে কেউ অন্য দৃষ্টিতে তাকায় না।



খুলনার নারী ক্রিকেট তথা দেশের নারী ক্রিকেটকে সামনে এগিয়ে নিতে যিনি অবদান রেখেছেন সেই ইমতিয়াজ হোসেন পিলু জানান নারীদের নিয়ে কাজ করাটা তার জন্য সহজ ছিল না। পদে পদে বাধাপ্রাপ্ত হতে হয়েছে তাকে। তবুও আজকে বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল যে এতোটা পথ এগোতে পেরেছে এটা নিয়ে সন্তুষ্ট তিনি। তবে নারী ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ নিয়েও আছেন শঙ্কায়। নতুন মেয়েদের খেলায় আসতে এখনও নানা প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয়। পরিবার থেকেই আসে প্রথম বাধা।

নারীদের সাফল্যের এই বিজয় নিশান আরও অব্যাহত ধারায় এগিয়ে যাক, এই আশা পুরো দেশবাসীর।




রাইজিংবিডি/খুলনা/৮ মার্চ ২০১৯/রুবেল/আমিনুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়