ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

তিনিই প্রথম জানালেন, গাছেরও প্রাণ আছে

শাহ মতিন টিপু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ২৩ নভেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
 তিনিই প্রথম জানালেন, গাছেরও প্রাণ আছে

তিনিই প্রথম জানিয়েছিলেন, গাছেরও প্রাণ আছে। এর আগে উদ্ভিদের প্রাণ সম্পর্কে জানতো না মানুষ। সর্বপ্রথম উদ্ভিদের প্রাণ থাকার ঘোষণায় বিশ্বকে চমকে দিয়েছিলেন এই বাঙালি বিজ্ঞানী।

তিনি তারই আবিষ্কৃত ক্রেস্কোগ্রাফ যন্ত্রের সাহায্যে প্রমাণ করেছিলেন উদ্ভিদের প্রাণের অস্তিত্ব। গাছের প্রাণ আছে, এ নিয়ে আজ কাউকে বোঝাবার দরকার হয় না। অথচ এ সত্যটি প্রমাণে স্যার জগদীশ চন্দ্র বসুকে অনেক সাধনা করতে হয়েছিল।

এই বাঙালি বিজ্ঞানীর ৮২তম প্রয়াণ দিবস আজ। ১৯৩৭ সালের এইদিনে তিনি ভারতের গিরিডিতে মৃত্যুবরণ করেন। বাংলাদেশের ময়মনসিংহ শহরে ১৮৫৮ সালের ৩০ নভেম্বর তিনি জন্মগ্রহণ করেন।

তার পরিবারের প্রকৃত বাসস্থান ছিল বিক্রমপুরের রাঢ়িখাল গ্রাম। বাবা ভগবান চন্দ্র বসু ছিলেন ময়মনসিংহ জিলা স্কুলের প্রথম প্রধান শিক্ষক। জগদীশ চন্দ্রেরও প্রথম স্কুল ছিল ময়মনসিংহ জিলা স্কুল। তিনি এখানেই বেড়ে ওঠেন।

কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে বিএ পাশ করার পর বাবার ইচ্ছা ও আগ্রহে চিকিৎসাবিজ্ঞান পাঠের উদ্দেশ্যে লন্ডনে যান জগদীশ। অধ্যয়ন শেষে ফিরে এসে প্রেসিডেন্সি কলেজে পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক পদে যোগ দেন। তার গবেষণার সূত্রপাতও এখান থেকেই। এই কলেজই তার গবেষণাসমূহের সূতিকাগার ।

প্রেসিডেন্সি কলেজে অধ্যাপনার প্রথম আঠারো মাসে জগদীশ যে সকল গবেষণা কাজ সম্পন্ন করেছিলেন তা লন্ডনের রয়েল সোসাইটির জার্নালে প্রকাশিত হয়। তার গবেষণার প্রধান দিক ছিল উদ্ভিদ ও তড়িৎ চৌম্বক। তার আবিষ্কারের মধ্যে উদ্ভিদের বৃদ্ধিমাপক যন্ত্র ক্রেস্কোগ্রাফ ও উদ্ভিদের দেহের উত্তেজনার বেগ নিরুপক সমতল তরুলিপি যন্ত্র রিজোনাষ্ট রেকর্ডার অন্যতম।

রেডিও’র আবিষ্কারকও মূলত তিনিই। অথচ কিছুদিন আগেও বিশ্ববাসী ইটালির মার্কোনিকেই রেডিও’র আবিষ্কারক জানত। কিন্তু ১৯৯৮ সালে প্রকাশিত IEEE (Institute of Electrical and Electronics Engineers) এর প্রসিডিংয়ে জগদীশ বসুকে রেডিওর প্রকৃত আবিষ্কারক হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।

মার্কোনি তার আবিষ্কারে অনেক সূক্ষ্ম যন্ত্রপাতি ব্যবহার করেছিলেন যার মধ্যে একটি হচ্ছে কোহেরার (২টি ধাতব পাতের মাঝে খানিকটা পারদ), যা ছিল রেডিও বা তারহীন সংকেত পাঠানোর প্রক্রিয়ার মূল বিষয়। মজার ব্যপার হচ্ছে, এই কোহেরার এর প্রকৃত আবিষ্কারক স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু, যা মার্কোনি বা তার সমসাময়িক বিজ্ঞানীরা কেউ স্বীকার করেনি। মার্কোনি বসুর তৈরি কোহেরারটি সামান্য পরিবর্তন করেছিলেন। বসুর কোহেরারটি ছিল ট আকৃতির মত আর মার্কোনিরটি ছিল সোজা।

জগদীশ চন্দ্র বসুর আশ্চর্য আবিষ্কার দেখে বিজ্ঞানী আইনস্টাইন বলেন, ‘জগদীশ চন্দ্র বসুর প্রত্যেকটি আবিষ্কার বিজ্ঞান জগতে একটি বিজয়স্তম্ভ।’

বাঙালিরাও বিজ্ঞান গবেষণার ক্ষেত্রে নিউটন-আইনস্টাইনের চেয়ে কম যায়না তিনি তা প্রমাণ করেন। জগদীশ চন্দ্র যে গ্যালিলিও-নিউটনের সমকক্ষ বিজ্ঞানী তার স্বীকৃতি দিয়েছিল লন্ডনের ডেইলি এক্সপ্রেস পত্রিকা, ১৯২৭ সালে।

তিনি একজন সাহিত্যিকও। তার লেখা ‘অব্যক্ত’ বাংলা ভাষায় একটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ। ১৮৯৬ সালে তার লেখা প্রথম সায়েন্স ফিকশানটির নাম ছিল ‘নিরুদ্দেশের কাহিনী’। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন জগদীশ চন্দ্র।

১৯১৬ সালে তিনি অধ্যাপনা থেকে অবসর নেন। এরপর তিনি ‘জগদীশচন্দ্র বসু বিজ্ঞানমন্দির’ প্রতিষ্ঠা করেন। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি সেই বিজ্ঞানমন্দিরে গবেষণা পরিচালনা করেন।



ঢাকা/ শাহ মতিন টিপু

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়