ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

তেলিয়াপাড়ার ঐতিহাসিক শপথ

মামুন চৌধুরী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:৪০, ৪ এপ্রিল ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
তেলিয়াপাড়ার ঐতিহাসিক শপথ

তেলিয়াপাড়ার স্মৃতিসৌধ

মো. মামুন চৌধুরী, হবিগঞ্জ : ৪ এপ্রিল মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক একটি দিন। ১৯৭১ সালের এ দিনে হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার তেলিয়াপাড়া চা-বাগানের ম্যানেজার বাংলোয় দেশের স্বাধীনতার পক্ষে  এক ঐতিহাসিক শপথ অনুষ্ঠিত হয়। এ শপথে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের উধ্বর্তন কর্মকর্তাসহ ২৭ জন সেনা কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে মেজর খালেদ মোশারফ স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা দেওয়ান আশ্রাফ আলীকে সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে যাওয়ার মত একটি রাস্তা তৈরি করার নির্দেশ দেন। তিনি চা-বাগানের শ্রমিকদের দিয়ে জঙ্গল কেটে রাস্তা নির্মাণ করান। ২ এপ্রিল কর্ণেল এমএজি ওসমানী প্রথম সীমান্ত অতিক্রম করে আগরতলায় পৌঁছেন এবং ওইদিন বিকেলে ভারতীয় বিএসএফ এর পূর্বাঞ্চলীয় ব্যাটেলিয়ান কমান্ডেন্ট পান্ডেকে তেলিয়াপাড়া ম্যানেজার বাংলোয় পাঠান।

৪ এপ্রিল সকালে ভারত থেকে এমএজি ওসমানীকে নিয়ে আসার জন্য খোলা জিপসহ দেওয়ান আশ্রাফ আলীকে একজন সৈনিক দিয়ে পাঠানো হয়। বিকালে এসে মাগরিবের নামাজের পর ওসমানী চা বাগানের ম্যানেজার বাংলোর দোতলায় কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠকে বসেন।

এ বৈঠকেই সমগ্র রণাঙ্গনকে ১১টি সেক্টরে ভাগ করেন মুক্তিবাহিনী ও সেনাবাহিনীর প্রধান সেনাপতি জেনারেল আতাউল গণি ওসমানী।

বৈঠকে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন তৎকালীন মেজর জিয়াউর রহমান, মেজর সি আর দত্ত, মেজর কে এম সফিউল্লাহ, মেজর খালেদ মোশারফ, মেজর কাজী নুরুজ্জামান, মেজর মঈনুল হোসেন চৌধুরী, মেজর নুরুল ইসলাম, মেজর শাফায়েত জামিল, লেঃ কর্ণেল আব্দুর রব, এমএনএ লেঃ কর্ণেল সালেহউদ্দিন মোহাম্মদ রেজা, ব্রিগেডিয়ার ভিসি পান্ডে, ক্যাপ্টেন নাসিম, ক্যাপ্টেন আব্দুল মতিন, ক্যাপ্টেন সুবিদ আলী ভুইয়া, লেঃ সৈয়দ মোহাম্মদ ইব্রাহিম, লেঃ হেলাল মোর্শেদ খান, লেঃ নাসিরউদ্দিন, লেঃ মাহবুব, লেঃ আনিস, লেঃ সেলিম, মোস্তফা আলী এমএনএ, মানিক চৌধুরী এমএনএ, এনামুল হক মোস্তফা শহীদ এমপিএ, মৌলানা আসাদ আলী এমপিএসহ কয়েকজন আওয়ামীলীগ ও ছাত্রলীগ নেতা।

তেলিয়াপাড়া চা-বাগানের ম্যানেজার বাংলো


তেলিয়াপাড়া ম্যানেজার বাংলোকে ৩নং সেক্টরের কার্যালয় হিসাবে ব্যবহার করা হয়। বৈঠক শেষে ওসমানী ও রবের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের নকশা প্রনয়ণ এবং যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার শপথ করানো হয়। শপথ বাক্য পাঠ করান এমএজি ওসমানী।

তেলিয়াপাড়া চা-বাগান কর্তৃপক্ষ জানান, ঐতিহাসিক এ দিনটি স্মরণে  প্রতি বছর ৪ এপ্রিল স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। এছাড়াও দর্শণার্থীরা এখানে এসে স্মৃতিসৌধ পরিদর্শন করে মুগ্ধ হচ্ছেন। চা-বাগানের ভেতরে স্মৃতিসৌধটি অবস্থিত। এ স্মৃতিসৌধের পাশে রয়েছে একটি বিশাল লেক।

প্রসঙ্গত, তেলিয়াপাড়ার এই সম্মেলনকে স্মৃতিময় করে রাখতে মেহেরপুর জেলার ঐতিহাসিক মুজিবনগরে স্থাপিত মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিকেন্দ্রে ‘ঐতিহাসিক তেলিয়াপাড়া সম্মেলন’ শিরোনামে ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়েছে। এতে ওই বৈঠকে উপস্থিত সকলের ভাস্কর্য রয়েছে।

তৎকালীন ছাত্রলীগ সভাপতি হবিগঞ্জ জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার এডভোকেট মোহাম্মদ আলী পাঠান ও মাধবপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার নুরুল ইসলাম জানান, মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় থেকে ঐতিহাসিক ওই স্থানটিতে যাদুঘর, রেস্ট হাউসসহ অবকাঠামো নির্মাণের জন্য প্রায় কোটি টাকা বরাদ্দ এসেছিল। কিন্তু জায়গা না পাওয়ায় টাকা ফেরত চলে যায়।




রাইজিংবিডি/হবিগঞ্জ/৪ এপ্রিল ২০১৭/মামুন চৌধুরী/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়