ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

থানায় ধর্ষণ: সেই রাতের বর্ণনা দিলেন তিনি

মুহাম্মদ নূরুজ্জামান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৪৭, ১০ আগস্ট ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
থানায় ধর্ষণ: সেই রাতের বর্ণনা দিলেন তিনি

নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা : খুলনায় জিআরপি থানায় গণধর্ষণের শিকার নারী আদালতে জবানবন্দী দিয়েছেন। তিন সন্তানের মা এই নারী (৩০) সেই রাতে তার ওপর পাশবিক নির্যাতনের লোমহর্ষক বর্ণনা দেন।

জবানবন্দীতে তিনি বলেন, থানার ওসি, ডিউটি অফিসার ও আরো তিনজন পুলিশ সদস্য মিলে সর্বমোট পাঁচজন তাকে রাতভর পালাক্রমে ধর্ষণ করেছেন।

৪ আগস্ট নির্যাতনের শিকার ওই নারী আদালতে জবানবন্দিতে উল্লেখ করেন, পুলিশ হেফাজতে থাকাকালীন জিআরপি খুলনা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নিজে তল্লাশির নামে তার স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেন এবং এর কিছুক্ষণ পর ডিউটি অফিসারের সহায়তায় তার ওপর শারীরিক নির্যাতন করেন। পরে রাত আনুমানিক দেড়টার দিকে একই ডিউটি অফিসারের সহযোগিতায় তাকে চোখ বেঁধে অন্য একটি রুমে নিয়ে গিয়ে মুখে কাপড় বেঁধে অফিসার ইনচার্জ নিজে তিনবার, ডিউটি অফিসার একবার ও বাকি তিনজন পুলিশ সদস্য সর্বমোট পাঁচজন মিলে পালাক্রমে ধর্ষণ করেন। এ বিষয়টি কাউকে বললে তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের বিভিন্ন মিথ্যা মামলায় জড়ানোর হুমকি দেন।

জবানবন্দিতে তিনি আরো উল্লেখ করেন, রাত আনুমানিক দেড়টার দিকে হলুদ গেঞ্জি ও লুঙ্গি পরে ডিউটি অফিসার থানায় আসেন। তিনি আমাকে চোখ বেঁধে একটা রুমে নিয়ে যান। রুমে যেতে দু-তিন মিনিট লাগে। রুমে গিয়ে দেখি ওসি সাহেব লুঙ্গি-গেঞ্জি পরা। তখন ওই ডিউটি অফিসার আমার মুখের ভেতরে ওড়না দিয়ে মুখ বাঁধেন যাতে কথা বলতে না পারি। ডিউটি অফিসার বাইরে গেলে ওসি সাহেব ভিতর থেকে দড়জা আটকে দেন। এ সময় তিনি বলেন, দেখি কোথায় কোথায় লেগেছে? এই কথা বলে তিনি আমার সব কাপড় খুলে ফেলেন এবং বলেন এ ঘটনা যদি কাউকে বলা হয় তাহলে আমার পরিবারের সবগুলোর বিরুদ্ধে একটার পর একটা মামলা দেবেন। এই কথা বলে আমাকে ধর্ষণ করেন। ওসি সাহেব আমাকে দেড়ঘণ্টা ওই রুমে রাখেন এবং এরমধ্যে আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে তিনবার পাশবিক নির্যাতন করেন। এ সময় তিনি কনডম ব্যবহার করেন। এরপর ওসি সাহেব রুম থেকে চলে যান। পরপরই ডিউটি অফিসার রুমে আসেন। মুখ বাঁধা অবস্থায় তিনি আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে পাশবিক কাজ করেন। তিনি সাথে করে ভেজা গামছা নিয়ে আসেন এবং আমার শরীর মুছে নেন। তিনিও ওসি সাহেবের মত কনডম ব্যবহার করেন। এরপর আমার শরীর কাজ করছিল না। এই অবস্থায় আরো একজন আসেন। তাকে দেখলে চিনব। তিনি ভেজা গামছা দিয়ে আমার শরীর পরিস্কার করেন এবং ইচ্ছার বিরুদ্ধে পাশবিক কাজ করেন। ওই ব্যক্তি যাওয়ার পর আরো দুইজন আসেন, সবাইকে দেখলে চিনব। বাকিরা সবাই কনডম ব্যবহার করেন। এভাবে তারা পালাক্রমে অনেকবার ধর্ষণ করেন। ভোরের আজানের কিছু আগে আমাকে গারদে নিয়ে রেখে দেন। পরের দিন পাঁচ বোতল ফেনসিডিল মামলা দিয়ে আমাকে কোর্টে চালান দেন। পুলিশ আমাকে ওই দিন মোবাইল চুরি করেছি- এই সন্দেহে আটক করেছিল। এই আমার জবানবন্দী। আমি ন্যায় বিচার চাই।

এ ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান কুষ্টিয়া সার্কেলের এএসপি ফিরোজ আহমেদ  বলেন, ‘জিআরপি থানায় গৃহবধূ ধর্ষণের ঘটনায় আদালতের নির্দেশে ওসি উছমান গণিসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে পুলিশ হেফাজতে নির্যাতন ও হত্যা নিবারণ আইনে মামলা হয়েছে। এ মামলার বাদী ভুক্তভোগী নারী নিজেই।

এর আগে ৮ আগস্ট দুপুরে নির্যাতনের শিকার নারীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তদন্ত কমিটি। জিজ্ঞাসাবাদের পরেই আদালতের নির্দেশে পাঁচ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ২ আগস্ট যশোর থেকে ট্রেনে খুলনায় আসার পথে তিন সন্তানের মা এক নারীকে আটক করে খুলনা জিআরপি থানা পুলিশ। ওই নারীর অভিযোগ, মোবাইল ফোন চুরির অভিযোগ দিয়ে তাকে আটক করা হয়। ওই দিন রাতে থানা হাজতে ওসিসহ ৫ পুলিশ সদস্য তাকে মারধর ও ধর্ষণ করে। পরদিন ৩ আগস্ট তাকে ৫ বোতল ফেনসিডিলসহ গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।

৪ আগস্ট ওই নারী খুলনার অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. সাইফুজ্জামানের আদালতে তাকে মারধর ও গণধর্ষণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন। আদালত তার জবানবন্দি গ্রহণ করে তার ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য তাকে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর নির্দেশ দেন। আদালতের নির্দেশে ৫ আগস্ট তার ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়। ধর্ষণের ঘটনায় ৫ আগস্ট কুষ্টিয়া সার্কেলের এএসপি ফিরোজ আহমেদসহ ৩ সদস্যের  তদন্ত কমিটি তাদের কাজ শুরু করে। তদন্ত কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন, পুলিশ পরিদর্শক শ ম কামাল হোসেইন ও মো. বাহারুল ইসলাম।

 

 

রাইজিংবিডি/খুলনা/১০ আগস্ট ২০১৯/মুহাম্মদ নূরুজ্জামান/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়