ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

দক্ষিণের উত্তাপে নিরুত্তাপ উত্তর

এসকে রেজা পারভেজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:০৫, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
দক্ষিণের উত্তাপে নিরুত্তাপ উত্তর

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সমর্থন পেতে দলীয় মনোনয়ন কিনেছেন ১২ জন। আর দক্ষিণে এই সংখ্যা ৮।

বিশেষ কোনো চমক না থাকলে উত্তরে বর্তমান মেয়র আতিকুল ইসলাম পাচ্ছেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন। তবে দক্ষিণে কাকে দেয়া হচ্ছে তা উত্তাপ ছড়াচ্ছে রাজনীতির অঙ্গনে। একাধিক হেভিওয়েট প্রার্থীর ফরম তোলায় সব দৃষ্টি এখন দক্ষিণে। নেতাকর্মীরা নানা সমীকরণ আর যুক্তিতে খোঁজার চেষ্টা করছেন কে হাসবেন শেষ হাসি।

ঢাকা দক্ষিণে মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন ফরম কিনেছেন আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট নজিবুল্লাহ হিরু, বর্তমান মেয়র সাঈদ খোকন, ঢাকা-১০ আসনের আওয়ামী লীগের দলীয় সংসদ সদস্য শেখ ফজলে নুর তাপস, ঢাকা-৭ আসনের সাংসদ হাজী সেলিমসহ মোট ৮জন। অন্যদিকে উত্তরে বর্তমান মেয়র আতিকুল ইসলাসহ ৯ জন মনোনয়ন প্রত্যাশী দলীয় মনোনয়ন ফরম কিনেছেন।

দলীয় সূত্র বলছে, ঢাকা উত্তরে কোনো ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষায় যাচ্ছে না আওয়ামী লীগ। বিশেষ করে প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক মারা যাওয়ার পর উপ-নির্বাচনে জয়ী হওয়া বর্তমান মেয়র আতিকুল হক নিজেকে প্রমাণ করার খুব একটা সময় পাননি। মাত্র দশ মাসে তার কাজের মুল্যায়ন করাও কঠিন বলে মনে করছেন দলের নেতারা। তবুও এই অল্প সময়ে কাজ করার ইচ্ছাশক্তি আর মানসিকতা তাকে এগিয়ে রাখছে। বিশেষ করে ডেঙ্গু নিয়ে যখন টালমাটাল দুই সিটি করপোরেশন, তখন তার তড়িৎ পদক্ষেপ নেয়ার মানসিকতা প্রশংসিত হয়েছে। সার্বিক দিক বিবেচনায় তিনিই আবারো উত্তর সিটি করপোরেশনে নৌকা হাতেই মাঠে নামছেন।

সেই দিক বিবেচনায় ভালো নেই দক্ষিণের বর্তমান মেয়র সাঈদ খোকন। নিজেই স্বীকার করেছেন রাজনীতিতে তিনি কঠিন সময় পার করছেন। বিশেষ করে গত পাঁচ বছরে সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে তাকে নিয়ে ইতিবাচক আলোচনার চেয়ে নেতিবাচক আলোচনা হয়েছে বেশি। সম্প্রতি ডেঙ্গু পরিস্থিতি তার অবস্থান আরো নড়বড়ে বানিয়ে দিয়েছে। এ নিয়ে দক্ষিণে তিনিই থাকছেন না কি নতুন কেউ আসছেন তা নিয়ে জোরালো আলোচনা আছে দলে। দক্ষিণে মেয়র পদে ঢাকা-১০ আসনের সাংসদ শেখ ফজলে নুর তাপস মনোনয়ন ফরম কেনার পর সেই আলোচনা আরো এগিয়েছে। এরই মধ্যে শুক্রবার দলের আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট নজিবুল্লাহ হিরুও মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। তিন হেভিওয়েটের মনোনয়ন ফরম কেনায় দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে দলের মনোনয়ন কে পাচ্ছেন সেটিই এখন উত্তাপ ছড়াচ্ছে।

ফজলে নুর তাপস কোনো সিগনাল ছাড়া দলীয় ফরম নিয়েছেন-এমনটি মনে করেন না আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতারা। এমন দুজন নেতার মতে, তাপস শেখ পরিবারের আত্মীয়। তিনি এমনিতেই ফরম কিনবেন না। নিশ্চয় কোনো ইঙ্গিত রয়েছে। তাপসের মনোনয়ন পাওয়ার পেছনে যথেষ্ট কারণ আছে বলেও তারা মনে করেন। অন্যদিকে দলের আইন বিষয়ক সম্পাদক  নজিবুল্লাহ হিরুর মনোনয়ন ফরম কেনার বিষয়ে তারা ইতিবাচক মন্তব্য করেছেন। তারা এও মনে করেন, এই দুজন হেভিওয়েট প্রার্থীর মনোনয়ন ফরম কেনা ভিন্ন ইঙ্গিত বহন করে।

তাপসের ঘনিষ্ট একজন জানিয়েছেন, মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়ে আশাবাদী তিনি। নির্বাচিত হলে তিনি নগরকে কিভাবে উন্নয়ন করতে চান সেই বিষয়েও বিভিন্ন সময়ে বলে আসছেন।

নজিবুল্লাহ হিরুর ঘনিষ্ট হিসেবে পরিচিত একজন জানান, দলের শীর্ষ মহলের ইতিবাচক সমর্থন পেয়েই তিনি শেষ দিনে মনোনয়ন ফরম তুলেছেন। মনোনয়ন ফরম কিনবেন কি না-সেজন্য শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত অপেক্ষায় ছিলেন তিনি। গণভবন থেকে তিনি ইতিবাচক ইঙ্গিত পেয়েছেন। সার্বিক দিক বিবেচনায় তাপস আর হিরুই দক্ষিণে এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।

দলীয় মনোনয়ন পেলে নাগরিক সেবা নগরবাসীর দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে অ্যাডভোকেট নজিবুল্লাহ হিরু রাইজিংবিডিকে বলেন, দুর্নীতিমুক্ত, দূষণমুক্ত, মাদকমুক্ত নগর গড়ার স্বপ্ন আছে আমার। সবকিছুতেই দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিতে চাই। একই প্রকল্পে বারবার খরচ করে অহেতুক অর্থ খরচের পক্ষে আমি নই। সর্বোপরি নগরবাসীর চাওয়ার আগেই নাগরিক সেবা তাদের কাছে পৌঁছে দেয়ার ইচ্ছে রয়েছে।

তিনি বলেন, ‘তবে নেত্রীর (আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা) সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। তিনি যেখানে চাইবেন সেখানে আমি মনপ্রাণ উজাড় করে কাজ করে যাব। আর দশটা সাধারণ মানুষের মতো আমিও তিলোত্তমা ঢাকার স্বপ্ন দেখি। কঠিন হলেও বিষয়টি অসম্ভব নয়। এজন্য কাজ করা ইচ্ছাশক্তি ভীষণরকম প্রয়োজন। আমার সেই ইচ্ছে রয়েছে।’     

পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি নিয়ে আলোচনার কেন্দ্রে থাকা ঢাকা ১০ এর সাংসদ ব্যারিস্টার ফজলে নুর তাপস ঢাকা উত্তর সিটির   প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের সফলতার মডেল অনুসরণ করতে চান। পুরান ঢাকার ঐতিহ্যের সঙ্গে মিল রেখে উন্নয়ন ও নাগরিক   সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নেয়ার কথাও জানান তিনি।

বর্তমান মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, ‘পিতার হাত ধরে রাজনীতিতে এসেছি। আজ পিতা নেই। পিতার অবর্তমানে আমার অভিভাবক আমার নেত্রী শেখ হাসিনা। তিনি যেটা ভালো মনে করবেন, সেটাই করবেন। আজ আমার কঠিন সময়। ঢাকাবাসী ও দেশবাসীর দোয়া চাই।’

শনিবার সন্ধ্যা ৬টায় গণভবনে স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সভা হবে জননেত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে। সেখানে দুই সিটির মেয়র ও ১৭২ জন কাউন্সিলরকে মনোনয়ন দেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি নির্বাচনে মেয়র ও কাউন্সিলর পদে দলীয় সমর্থন দেয়ার ক্ষেত্রে জনপ্রিয়, গ্রহণযোগ্য এবং স্বচ্ছ ভাবমূর্তির বিষয়টি বিবেচনায় নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

তিনি বলেন, ‘আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যারা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের  জন্য বিতর্কিত আমরা এমন কাউকে মনোনয়ন দেব না। বিতর্কের ঊর্ধ্বে যারা আছে, অপকর্মের রেকর্ড নেই, তাদের আমরা চয়েস করবো। আক্সসেক্টবল অ‌্যান্ড পপুলার ক্যান্ডিডেট অর্থাৎ জনগণের কাছে জনপ্রিয় ও গ্রহণযোগ্য- এ ধরনের প্রার্থী মনোনয়ন দেয়ার জন্য আমাদের বোর্ড বসবে। সর্বাত্মকভাবে আমাদের নেত্রীরও মাউন্ড সেট, ক্লিন ইমেজের প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়া।’

আগামী ৩০ জানুয়ারি ঢাকার দুই সিটির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।


ঢাকা/পারভেজ/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়