ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

দালালের প্ররোচনায় সর্বশান্ত

আহমদ নূর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:১৫, ১০ আগস্ট ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
দালালের প্ররোচনায় সর্বশান্ত

আহমদ নূর : উন্নত জীবনের আশায় ইউরোপ পাড়ি দিতে চেয়েছিলেন সিলেটের শামীম আলম। যেতে চেয়েছিলেন বৈধ পথে। তুরস্কে থাকা এক দালাল তাকে আশ্বাস দেয় বৈধ পথে পাঠাবে পূর্ব ইউরোপের দেশ ‍তুরস্কে। কিন্তু সেটা না করে দালালরা অবৈধ পথে তাকে ইউরোপের দেশ তুরস্কে ঢোকানোর চেষ্টা করে। অবশ্য শামীম তুরস্কে ঢুকেছিলেনও। তবে ঢোকার পরই দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে ধরা পড়েন। ৬ মাস ছিলেন তুরস্কের কারাগারে।

সম্প্রতি দেশে ফিরে রাইজিংবিডির এ প্রতিবেদককে জানালেন তার অভিজ্ঞতার কথা-

শামীম আলম জানান, প্রথমে তুরস্কে থাকা রফিক নামে এক দালালের সঙ্গে যোগাযোগ হয় তার। রফিক ওমানে থাকা সুনামগঞ্জের জাউয়া উপজেলার সালেখ আহমেদ নামে এক দালালের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। দুই লাখ টাকা খরচ করে ২০১৮ সালের নভেম্বরের শেষ দিকে দেশ থেকে ওমান যান শামীম। সেখানে সালেখের সঙ্গে দেখা হয়। সালেখ ওমান থেকে ইরান পাঠানোর কথা বলে দেড় লাখ টাকা দাবি করে। টাকা নেয়ার পর ইরান পাঠাতে গড়িমসি শুরু করে সালেখ। পরে সে আরো ১৫০ ডলার হাতিয়ে নেয়।

শামীম আরো জানান, ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝিতে সালেখের মাধ্যমে নৌকায় আরব সাগর পাড়ি দিয়ে ইরান যান শামীম।  সেখানে গেলে রফিক তাকে শরিফ উদ্দীনের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেয়। ইরান পৌঁছে শামীম যোগাযোগ করেন শরীফের সঙ্গে। শরিফ উদ্দীন পরিবার নিয়ে তেহরানে থাকেন। ৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে শরিফ তাকে তেহরান নিয়ে যান।

তেহরানে পৌছার পর শরিফ টাকার জন্য শামীমকে জিম্মি করে ফেলে। ১৫ দিন শরিফের গোপন আস্তানায় জিম্মি ছিলেন শামীম। এর মধ্যে তাকে ঠিকমত কোনো খাবার দেয়া হতো না। পানি চাইলেও পাওয়া যেত না। মাঝে মধ্যে শুকনো রুটি দেয়া হতো। যখন শরিফ বুঝতে পারলো আর কোন টাকা পাওয়া যাবে না- তখন ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। পরে আরও এক লাখ টাকায় দালাল শরিফ শামীমকে তুরস্কে পাঠাবে এমন চুক্তি করে।

শামীম জানান, দালালের সঙ্গে আমার কথা হয়েছিল ফ্লাইটে তুরস্ক পাঠাবে। কিন্তু ওমান নেয়ার পর তারা বাই রোডে আমাকে এক দেশ থেকে অন্য দেশে নিয়ে যায়। এ বিষয়ে কথা বললে শরিফ শারিরীক নির্যাতন শুরু করে। পরে প্রাণ ভয়ে তাকে আর কিছু বলতাম না।

তুরস্কের উদ্দেশ্যে যাত্রা :

শামীম জানান, তেহরান থেকে পায়ে হেঁটে তুরস্কের উদ্দেশ্যে রওনা দেন তিনি। তার সঙ্গে আরো অনেকে ছিলেন। সবাই বৈধভাবে ইউরোপে ঢুকতে চেয়েছিল। কিন্তু দালালরা টাকা নিয়ে তাদের অবৈধ পথে সেখানে ঢুকানোর চেষ্টা করে। পায়ে হেঁটে কখনো উঁচু উঁচু পাহাড় পাড়ি দিতে হতো। পা পিছলেই হতাহতের ঘটনাও ঘটে সেসময়। এরমধ্যে ভয় থাকে কখন পুলিশ এসে ধরে নিয়ে যায়। জানুয়ারির শুরুতে তারা তুরস্ক বর্ডারে পৌঁছান। সেখানে একদিন অপেক্ষার পর অবৈধভাবে সীমানা পার করে তুরস্ক প্রবেশ করেন শামীম।  কিন্তু সেখানে ঢুকার পরই পুলিশ তাদের আটক করে একটি ক্যাম্পে নিয়ে যায়। এটাকে অবৈধ অভিভাসীদের জন্য কারাগারও বলা চলে।

ক্যাম্পে ৬ মাস :

জানুয়ারী থেকে জুলাইর প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত উরমিয়া ক্যাম্পে ছিলেন শামীম। সেখানে ৫ শতাধিক বাংলাদেশী আছেন বলে দাবি তার। এর মধ্যে সিলেট অঞ্চলের ছেলেরাই হবে ৯০ শতাংশ। সবাই অবৈধভাবে তুরস্কে প্রবেশ করেছিলেন। শত চেষ্টা করেও তারা দেশে আসতে পারছেন না।

শামীম জানান, অনেকে না বুঝে সেখানে গিয়ে বাড়ি ফেরার জন্য কান্নাকাটি করছেন। ৬ মাস থেকে শুরু করে ৮ মাস, কেউ কেউ ১০ মাস পর্যন্ত ক্যাম্পে আছেন।

ওখানে থাকার মতো কোনো পরিবেশ নেই। বাংলাদেশের জেলের চেয়েও খারাপ অবস্থা। দিনে একবার খাবার দেয়। সে খাবার আবার মুখে নেয়া যায় না। এক রুমে দুই থেকে আড়াইশ জনকে থাকতে দেয়। গাদাগাদি করে থাকতে হয়। প্রতিটি দিন যেন দু:স্বপ্নের দিন।

তিনি বলেন, তুরস্কে বাংলাদেশী দূতাবাসের কর্মকর্তারা ক্যাম্পে আসেন। কিন্তু আমরা যারা প্রতারিত হয়ে ক্যাম্পে থাকি তাদের জন্য কোনো ব্যবস্থা নেন না তারা। অন্যদিকে ভারতের কেউ ক্যাম্পে আটকা পড়লে তাদের দেশের দূতাবাসের কর্মকর্তারা এক সপ্তাহের মধ্যে ছাড়িয়ে দেশে পাঠিয়ে দেন।

শামীম আলম জানান, তিনি ৬ মাস কারাভোগ করে জুলাই মাসের মাঝামাঝিতে দেশে ফিরেছেন। দেশে ফিরতে সরকারের কাছ থেকে আর্থিক কোনো সাহায্য পাননি।

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১০ আগস্ট ২০১৯/নূর/নবীন হোসেন

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়