ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

দুঃসহ স্মৃতির রক্তাক্ত শোলাকিয়া

রুমন চক্রবর্তী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৩:৩৯, ৭ জুলাই ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
দুঃসহ স্মৃতির রক্তাক্ত শোলাকিয়া

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি: শোলাকিয়ায় নৃশংস জঙ্গি হামলার ঘটনা আজো ভুলতে পারেনি কিশোরগঞ্জবাসী। তিন বছর পার হলেও গুলি আর বোমার শব্দ যেন এখনো কানে বাজে।

২০১৬ সালের ৭ জুলাই ছিল পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর। সেদিন সকালে দেশের সবচেয়ে বড় ঈদের নামাজের জামাতের জন্য খ্যাত শোলাকিয়ার ঈদগাহের কাছেই জঙ্গিরা বর্বরোচিত হামলা চালায়। সকাল পৌনে ৯টার দিকে ঈদগাহ সংলগ্ন আজিমউদ্দিন হাইস্কুলের রাস্তায় পুলিশের একটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলা চালানো হয়। প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে জঙ্গিদের সঙ্গে পুলিশের বন্দুকযুদ্ধ হয়।

জঙ্গিরা জবাই করে হত্যা করে পুলিশের দুই কনস্টেবল জহিরুল ইসলাম ও আনসারুল হককে। আহত হয় পুলিশের ৮ সদস্য। বন্দুকযুদ্ধে ঘটনাস্থলে নিহত হয় আবির রহমান নামে এক জঙ্গি। গোলাগুলির সময় নিজের ঘরে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন গৃহবধূ ঝর্ণা ভৌমিক।

সে ভয়ার্ত দিনের কথা মনে পরলেই আজো শিউড়ে উঠেন কিশোরগঞ্জের মানুষ। দুঃসহ স্মৃতির সে বীভৎস ঘটনা আজও তাড়িয়ে বেড়ায় এ এলাকার মানুষদের।

শোলাকিয়ার ভয়াবহ হামলার পর পুলিশ ও র‌্যাবের অভিযানে গুরুতর আহত অবস্থায় শফিউল ইসলাম ডন নামে এক সশস্ত্র জঙ্গি এবং তানিম নামে স্থানীয় এক সন্দেহভাজন যুবক আটক হয়। এ ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় মোট ২৪ জনকে আসামি করা হয়। তাদের মধ্যে ১৯ জনই জঙ্গি হামলা চালাতে গিয়ে অথবা পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে বিভিন্ন সময় মারা যায়। তাই অন্যদের অব্যাহতি দিয়ে  জীবিত পাঁচজনই এখন এ মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি। বর্তমানে তারা কারাগারে আটক রয়েছে। আসামিরা হলেন- কিশোরগঞ্জ শহরের তারাপাশা এলাকার  জাহিদুল হক তানিম, গাইবান্ধার রাঘবপুর গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব গান্ধী, চাপাইনবাবগঞ্জের হাজারদিঘা গ্রামের মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান, গাইবান্ধার পান্থাপাড়া গ্রামের আনোয়ার হোসেন ও কুষ্টিয়ার সাদিপুর কাবলিপাড়া গ্রামের আব্দুস সবুর খান হাসান ওরফে সোহেল মাহফুজ।

পরিবারের মাঝে নিহত গৃহবধূ ঝর্ণা ভৌমিক

 

এদিকে বর্তমান সরকার এ ঘটনায় নিহত দুই পুলিশ সদস্যের পরিবারকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ প্রদানের পাশাপাশি সার্বিক সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। অন্যদিকে নিহত গৃহবধূ ঝর্ণা ভৌমিকের সন্তানকেও ব্যাংকে চাকরি দিয়ে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন।

কিশোরগঞ্জ জেলা মহিলা পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট মায়া রাণী ভৌমিক বলেন, ‘আমরা জঙ্গিমুক্ত অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ দেখতে চাই। ঐতিহাসিক শোলাকিয়ার মাঠে ঈদের নামাজের আগে দূর-দুরান্ত থেকে আগত মুসুল্লিদের সার্বিক সহযোগিতা ও বিভিন্ন সেবা প্রদানে সকল সম্প্রদায়ের মানুষ এক কাতারে এসে দাঁড়ায়। সেদিন জঙ্গি হামলায় ঘটনায় মহিলা পরিষদ সদস্য ঝর্ণা রাণী ভৌমিকসহ দু’জন পুলিশ সদস্য নিহত হন। সেদিনটির কথা মনে পড়লে এখনও চমকে উঠি।’

হামলায় ঘটনায় নিহত ঝর্ণা রাণী ভৌমিকের শিশুপুত্র শুভ ভৌমিক বর্তমানে অষ্টম শ্রেণিতে পড়াশুনা করছে। সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বার বার কেঁদে উঠে। সে জানায়- ‘তখন তো আমি আরো ছোট ছিলাম, মা আমাকে কত আদর করত। নিজের হাতে খাওয়াতো, ঘুম পাড়াত, পড়াশুনা করাতো। মাকে আমি আর এই জীবনে পাব না। বছর ঘুরে এ দিনটি আসলে আমার কোন কিছুতেই ভালো লাগে না, রাতে ঘুমাতে পারিনা।’

কিশোরগঞ্জের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট শাহ আজিজুল হক বলেন, ‘ইতিমধ্যেই এ চাঞ্চল্যকর মামলাটির চার্জ গঠন সম্পন্ন হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষ ও আদালত সাক্ষীর জন্য প্রস্তত রয়েছেন। সাক্ষীর জন্য ২২ জুলাই তারিখ ধার্য্য হয়েছে। তবে এ মামলার আসামিদের প্রায় সবাই ঢাকার হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলার মামলারও আসামি। এদের মধ্যে ১৯ জন ইতিমধ্যেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বিভিন্ন সময় বন্দুক যুদ্ধে নিহত হয়েছে। তাই অবশিষ্ট পাঁচজনের বিরুদ্ধে পুলিশ চার্জশিট দিতে পেরেছে।’

কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মাশরুকুর রহমান খালেদ বিপিএম (বার) বলেন, ‘পুলিশ সর্বাধিক গুরুত্বের সাথে নিখুঁতভাবে তদন্ত শেষে মামলাটির চার্জশিট দিয়েছে। শোলাকিয়া জঙ্গি হামলা আমাদের জন্যও একটি বিশেষ বার্তা ছিল। আশা করছি, শোলাকিয়া হামলা মামলার সব আসামিরই সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড হবে।’

 

রাইজিংবিডি/ কিশোরগঞ্জ/৭ জুলাই ২০১৯/রুমন চক্রবর্তী/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়