ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে

আলী নওশের || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৩১, ৩১ মে ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে

ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ দেশের উপকূলীয় এলাকায় আঘাত হানে মঙ্গলবার ভোরে।  প্রচণ্ড ঝঞ্জা বায়ু আর জলোচ্ছ্বাস উপকূলে বিস্তীর্ণ এলাকা লণ্ডভণ্ড করে দেয়। তবে যে রকম আশঙ্কা করা হচ্ছিল সে তুলনায় ক্ষয়ক্ষতি কম হয়েছে। এই ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতের আগে ১০ নম্বর মহা বিপদসংকেত ঘোষণা ও পরিস্থিতি মোকাবিলায় যথাযথ প্রস্তুতি বেশ কার্যকর ছিল। উপকূল ও নিম্নাঞ্চলের মানুষ সময়মতো ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নেয় প্রশাসনের উদ্যোগে। ফলে প্রাণহানির সংখ্যা সর্বনিম্ন পর্যায়ে নামিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে।  অবশ্য অনেক ফসল, ঘরবাড়ি ও গাছপালার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

‘মোরা’ মূলত কক্সবাজার ও চট্টগ্রামে আঘাত হানে। তবে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় কক্সবাজার সদর উপজেলা এবং টেকনাফ, কুতুবদিয়া ও মহেশখালী।  এসব স্থানে টিনশেডের ও কাঁচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত এবং গাছপালা ভেঙে বা উপড়ে যায়। কুতুবদিয়া, হাতিয়া, সদ্বীপ, ভোলা, চাঁদপুর, নোয়াখালী ও সীতাকুণ্ডে সাত জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। আর সাগরে ট্রলার বা নৌকা নিয়ে মাছ ধরায় নিয়োজিত থাকা বেশ কিছু লোক নিখোঁজ ছিল। বুধবার সবশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত সাগরে ভেসে যাওয়া অর্ধশতাধিক লোককে থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।

বাংলাদেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগ নতুন কিছু নয়। বিশ্বে ব্যাপক হারে প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের নাম উপরের দিকে। প্রায় প্রতিবছর এ ধরনের দুর্যোগের কবলে পড়ে দেশ। তাই দেশের মানুষ বিশেষত: উপকূলের লোকজন এই প্রাকৃতিক দুর্যোগের মোকাবিলা করেই টিকে থাকছে। শক্তিশালী মোরার আঘাত উপকূলে লণ্ডভণ্ড অবস্থার সৃষ্টি হলেও সতর্কতামূলক পদক্ষেপের কারণে ক্ষয়ক্ষতি তুলনামূলক কম হয়েছে। বিশেষ করে স্থানীয় প্রশাসন ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে লোকজনকে যথাসময়ে আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়ায় মানুষের জীবন রক্ষা পেয়েছে। ঘূর্ণিঝড় ভাটার সময় আঘাত হানায় জলোচ্ছ্বাসও কম হয়েছে।

তবে আশ্রয়কেন্দ্রের মাধ্যমে উপকূলের অনেক মানুষের জীবন রক্ষা পেলেও অনেকের বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। তাদের জন্য সামনে অপেক্ষা করছে কঠিন সময়। অনেকের মজুত ধানচাল নষ্ট হয়েছে। তাছাড়া বাড়িঘর মেরামত ও নতুন করে নির্মাণ না করা পর্যন্ত অনেককে থাকতে হবে আশ্রয়কেন্দ্রে। ঘূর্ণিঝড় উপকূলীয় এলাকার লোকজনের জীবন-জীবিকার ওপরও বড় আঘাত হেনেছে। অনেকের বিধ্বস্ত হয়েছে পানের বরজ, কারো শুঁটকিপল্লি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, মাটিতে মিশে গেছে সবজির খেত। তাদের এই ক্ষয়ক্ষতি কাটাতে অনেক সময় লাগবে।

এখন দুর্গত মানুষের দুরাবস্থা লাঘবে তাদের পাশে দাঁড়ানো প্রয়োজন। তাদের জন্য যথাযথ সহায়তা নিশ্চিত করতে হবে। জেলা-উপজেলা প্রশাসনের তরফে প্রাথমিক ত্রাণ তৎপরতা শুরুর খবর পাওয়া গেছে। ঝড়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ বিপর্যস্ত হয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে তা ঠিক করার উদ্যোগ নিতে হবে।

দুর্যোগ মোকাবেলায় এবার আমাদের প্রস্তুতি ভাল থাকলেও আরো কার্যকর কোন ব্যবস্থা থাকলে ভাল হয়। যেহেতু বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঘূর্ণিঝড়সহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ বেড়ে চলেছে। তাই সামনে আরো প্রলয়ংকরী কোনো ঝড় আঘাত হানবে না তা নিশ্চিত করে বলা যায় না। তাই ঝড়-জলোচ্ছ্বাসসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে উপকূলীয় মানুষকে রক্ষায় স্থায়ী ব্যবস্থা গড়ে তোলা প্রয়োজন।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩১ মে ২০১৭/আলী নওশের

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়