দুর্গম পাহাড়ের বয়স্করা ভাল নেই
বয়স্কভাতা বঞ্চিত সূর্য কুমার দেববর্মা
হবিগঞ্জ প্রতিনিধি : দুর্গম পাহাড়ের বয়স্করা ভাল নেই।অভাব-অনটন ও যথাযথ চিকিৎসার অভাবে কষ্টের মধ্যদিয়েই দিন পার হয় তাদের।
সূর্য কুমার দেববর্মা। ১১৫ বছরে পা রেখেছেন। এখন আর চলাফেরা করতে পারেন না। চলতে গেলে স্বজনদের সহায়তা নিতে হয়। এই শতবর্ষী চুনারুঘাট উপজেলার দুর্গম পাহাড়ি এলাকার কালেঙ্গা রেঞ্জের কালিয়াবাড়ি আদিবাসী পুঞ্জির বাসিন্দা। তিনি ছিলেন এ পুঞ্জির হেডম্যান। বর্তমানে তার ছেলে বিনয় দেববর্মা এ পুঞ্জির হেডম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন।
পিতা সূর্য কুমারের ভরণপোষণের দায়িত্ব পালন করছেন হেডম্যান বিনয় দেববর্মা। এ বৃদ্ধ’র সেবাযত্ন করছেন পুত্রবধূ ও নাতি-নাতনিরা। পুত্র বিনয়ের সংসার চলছে অতিকষ্টে। বিশেষ করে পিতার চিকিৎসার খরচ চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে পুত্র’র পক্ষে। এ সময়ে যদি তিনি বয়স্কভাতা পেতেন, তাহলে ভাল হতো।
আলাপকালে বিনয় দেববর্মা বলেন, পিতার আর কত বয়স হলে বয়স্কভাতা পাবেন। এ সময়ে বয়স্ক ভাতা পেলে, চিকিৎসা খরচটা চালানো যেতো। তিনি তার পিতার ভাতা চালু করার দাবি জানান।
বয়স্কভাতা বঞ্চিত পুঞ্জির দুই বাসিন্দা ও প্রতিবেদক
এ পুঞ্জি থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে কৃষ্ণছড়া আদিবাসী পুঞ্জি । এ পুঞ্জিতেও রয়েছেন বেশ কয়েক বয়স্ক লোক। তারাও পাচ্ছেন না বয়স্ক ভাতা। এমন তথ্য জানালেন পুঞ্জির হেডম্যান উমেশ খাড়িয়া।
কৃষ্ণছড়া পুঞ্জিতে টিলায় টিলায় অবস্থিত বাড়ি-ঘরে বয়স্ক লোকেরা বসবাস করছেন। তারাও বয়স্ক ভাতা বঞ্চিত । দুর্বিসহ জীবন ধারণ করছেন তারা । বয়স্ক ভাতা পেলে কিছুটা হলেও স্বাচ্ছন্দ জীবন যাপন করতে পারতেন, বললেন হেডম্যান উমেশ খাড়িয়া। তিনি বলেন, ‘আমাদের জন্ম-মৃত্যু এখানেই। এস্থানে থেকেই খেয়ে না খেয়ে বেঁচে আছি। তারমধ্যে কি করে রোগবালাইয়ের চিকিৎসা করাবো।’
এ পুঞ্জির বাসিন্দা জুনাম খাড়িয়ার ছেলে কালী খাড়িয়া(১০৮), মাংরা খাড়িয়ার ছেলে জুগলু খাড়িয়া(৮০), তার স্ত্রী লম্বী খাড়িয়া(৭৪), শুকরাম খাড়িয়ার ছেলে শ্যামল খাড়িয়া(৮০), লক্ষণ খাড়িয়ার স্ত্রী কাউড়ি খাড়িয়া(১১২), নান্দে খাড়িয়ার ছেলে রবি খাড়িয়া(৬৭), শুকরো খাড়িয়ার ছেলে শ্রীলাশ খাড়িয়া(৭৫), লপনা খাড়িয়ার ছেলে কালো খাড়িয়া(১০০), বীরশা খাড়িয়ার স্ত্রী পুনি খাড়িয়া(৯০), মাংরা খাড়িয়ার স্ত্রী বুশি খাড়িয়া(৭০) ও মহন খাড়িয়ার স্ত্রী বীরশ্রী খাড়িয়া(৭৫) জানান, তাদের ভাগ্যে বয়স্ক ভাতা নেই। তারা বর্তমানে অতিকষ্টে দিনাতিপাত করছেন। যদিও তাদের পরিবার-পরিজন রয়েছে। তারা সবাই দিনমজুর। তাই পরিবারের আহার জোগাড় করে তারা আমাদের চিকিৎসার টাকা ব্যবস্থা করতে পারছেন না। তবে বয়স্ক ভাতা পেলে অনেক উপকার হতো।
রানীগাঁও ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরুল মোনীম চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘পুরো ইউনিয়নে ২০টি কার্ড এসেছে। এরমধ্যে এ আদিবাসী এলাকার ২জনকে বয়স্ক ভাতার কার্ড দিয়েছি। পর্যায়ক্রমে বাকী বয়স্ক ব্যক্তিরাও এ কার্ড পাবেন।’
রাইজিংবিডি/হবিগঞ্জ/৯ মার্চ ২০১৭/মো. মামুন চৌধুরী/টিপু
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন