ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

দেখা হলো, কথাও হলো, স্পর্শ মিলল না

তানভীর হাসান তানু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:২১, ৭ ডিসেম্বর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
দেখা হলো, কথাও হলো, স্পর্শ মিলল না

ঠাকুরগাঁও সংবাদদাতা : ‘‘তোক মুই প্রথম দেখনু। ইচ্ছা কচ্ছে বুকত নেও। মরার কাঁটাতারের বেড়াখান তাও দিলনি। ভালো থাকিস নানু ভাই।’- বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন আরতি রাণী (৫৩)।

তিনি নাতিকে দেখতে ছুটে এসেছেন ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে। নাতির সঙ্গে দেখা হলো, কথাও হলো। কিন্তু তাদের মিলনে বাধা হয়ে দাঁড়াল কাঁটাতারের বেড়া।

ঠাকুরগাঁও জেলার কোঁচল ও চাঁপাসার এবং ভারতের নাড়গাঁও ও মাকারহাট সীমান্তে শুক্রবার বসেছিল দুই বাংলার মানুষের মিলন মেলা। দীর্ঘ দিন পর ক্ষণিকের জন্য হলেও দুই দেশের মানুষ স্বজনদের সঙ্গে মিলিত হন, বিদায়ের সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন অনেকে।
 


সীমান্ত এলাকার কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দুই দেশের মানুষ যারা অর্থাভাবে পাসপোর্ট-ভিসা করতে পারেন না, তারা এই দিনটির অপেক্ষায় থাকেন।

স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে আসা সৈয়দপুর উপজেলার বাসিন্দা মরিয়ম বেগম (৫০) জানান, এবার দেখা করেছেন ছোট বোন সেফালীর সঙ্গে। ১৬ বছর আগে সেফালীর বিয়ে হয় ভারতের মাল্দা জেলার চানমুনী গ্রামে। বিয়ের পর এই প্রথম বোন ও বোনের স্বামীর দেখা পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। পরে তার বোন ও বোনের ছেলে-মেয়ে ও স্বামীকে কাপড় এবং মিষ্টি দিয়েছেন।

দিনাজপুরের কাহারোল উপজেলার প্রতীমা রাণী (৬০) জানান, ২০ বছর আগে ছোট মেয়ে কমলা রাণীর বিয়ে হয় ভারতের গোয়ালপুকুর থানার পাঁচঘরিয়া গ্রামে। বিয়ের পর আর কথা হয়নি তার সঙ্গে। কিন্তু আজ মেয়ের সঙ্গে কাঁটাতারের এপার-ওপারে দাঁড়িয়ে কথা বলে এবং কাঁটাতারের ফাঁক দিয়ে মিষ্টি ও নতুন পোশাক দিতে পেরে ভালো লাগছে।

পাথরকালী মেলার সভাপতি নগেন চন্দ্র পাল বলেন, কয়েক যুগ ধরে গোবিন্দপুর গ্রামে কালীপূজার আয়োজন করছেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা। আর কালীপূজার পরের শুক্রবার ওই এলাকায় বসে মেলা। পাথরে নির্মিত মূর্তির নাম অনুসারে মেলার নামকরণ হয় পাথরকালীর মেলা। তবে এ বছর খেতে পাকা ধান থাকায় মেলার তারিখ পিছিয়ে দেয় কর্তৃপক্ষ। মেলা ঘিরে প্রতি বছর এক দিনের জন্য সীমান্তের কাঁটাতারের কাছে গিয়ে স্বজনদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করার সুযোগ করে দেওয়া হয়। এ সুযোগে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা মানুষেরা কাঁটাতারের বেড়ার দুই ধারে দাঁড়িয়ে সহজে দেখা-সাক্ষাৎ ও কিছু উপহার দিয়ে ফিরে যায়।
 


সীমান্ত এলাকায় দেখা যায়, ভারতে বসবাসকারী আত্মীয় স্বজনের সঙ্গে দেখা করতে সকাল ৯টা থেকে মেলায় ভিড় জমান বাংলাদেশের কয়েক হাজার নারী-পুরুষ। তারা মেলায় ঘুরে ঘুরে জিনিসপত্র কেনেন। বেলা সোয়া ৩টা থেকে দেড় ঘণ্টার জন্য তারা স্বজনদের সঙ্গে কুশলবিনিময় করেন। বিনিময় করেন কাপড় ও খাদ্য। বিদায়ের সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন অনেকে।

সদর উপজেলার রায়পুর গ্রামের বাসিন্দা রজনীকান্ত বর্মণ (৫১) বলেন, তার পাসপোর্ট ও ভিসা করার সামর্থ্য নেই। ওপারের স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে এই দিনে সীমান্তে আসেন। স্বজনের মুখটা দেখে মন চায় জড়িয়ে ধরতে। কিন্তু কাঁটাতারের বেড়া সেই সুযোগ দেয় না।

 

 

রাইজিংবিডি/ঠাকুরগাঁও/৭ ডিসেম্বর ২০১৮/তানভীর হাসান তানু/বকুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়