ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

দেশভেদে লকডাউন অমান্যের শাস্তি

খালেদ সাইফুল্লাহ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:০৬, ১১ এপ্রিল ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
দেশভেদে লকডাউন অমান্যের শাস্তি

করোনাভাইরাস সৃষ্ট মহামারিতে স্থবির হয়ে পড়েছে বিশ্ব। সংক্রমণ প্রতিরোধে বিভিন্ন দেশে জারি করা হয়েছে লকডাউন। কিন্তু দীর্ঘদিন মানুষকে ঘরে আটকে রাখা কর্তৃপক্ষের জন্য বেশ কঠিন হয়ে পড়েছে। লকডাউন অমান্য করে যেন কেউ বাড়ির বাইরে বের হতে না পারে এজন্য দেশভেদে ঘোষণা করা হয়েছে শাস্তি।

রাজধানী মস্কোসহ রাশিয়ায় কঠোরভাবে লকডাউন চলছে। জীবিকা নির্বাহ ও গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজন ছাড়া সব ধরনের ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। মস্কোর নাগরিকরা ঘরের ১০০ মিটারের বাইরে বের হতে পারবেন না। শুরুতে দেশটিতে লকডাউন অমান্যের শাস্তি হিসেবে ৭ বছরের কারাদণ্ডের বিধান করা হয়। পরবর্তী সময়ে কঠোর এই আইনে পরিবর্তন আনা হয়। সেখানে বলা হয়েছে কোনো সুস্থ ব্যক্তি বাড়ি থেকে বাইরে বের হলে তাকে গুনতে হবে বড় অঙ্কের জরিমানা।

মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরবেও ছড়িয়েছে করোনাভাইরাস। দেশটিতে বেশ আগেই জনসমাগম এড়াতে সকল মসজিদে জামাতে নামাজ আদায় নিষিদ্ধ করা হয়েছে। জারি করা হয়েছে কারফিউ। কারফিউ না মানলে দিতে হবে জরিমানা। প্রথমবার কারফিউ অমান্য করলে গুনতে হবে ১০ হাজার রিয়াল। দ্বিতীয়বার আইন ভঙ্গ করার অপরাধে জরিমানার পরিমাণ হবে দ্বিগুণ। তবে তৃতীয়বার আর জরিমানা দিয়ে ছাড় পাওয়া যাবে না। ২০ দিনের জন্য সোজা গারদে চলে যেতে হবে।

লকডাউন অমান্যকারীদের ব্যাপারে কঠোর ফিলিপাইনের সরকার। দেশটিতে মাসব্যাপী লকডাউন চলছে। কিন্তু জনসাধারণ লকডাউন মানতেই চাইছে না। জনসমাগম থেকে মানুষকে কোনোভাবেই দূরে রাখা যাচ্ছে না। ফলে লকডাউন যেন কোনোভাবেই ভঙ্গ না হয়, সেজন্য কঠোর অবস্থান নিয়েছে দেশটির সরকার। প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতার্তে লকডাউন ভঙ্গ করে কেউ বাইরে বের হলেই সরাসরি গুলি করার নির্দেশ দিয়েছেন। এছাড়াও কিছু মানবাধিকার সংস্থা দাবি করেছে, লকডাউন অমান্য করলে তাদের কুকুরের খাঁচায় পুরে দেওয়া হচ্ছে।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যায় ইতালি শীর্ষস্থানে রয়েছে। শুরুতে করোনা প্রতিরোধে নানা পদক্ষেপ নিলেও আক্রান্ত রোগীদের ব্যাপারে তাদের ছিল না যথেষ্ট সতর্কতা। ফলে জনগণকে কোয়ারেন্টাইন ঠিকমতো মানতে বাধ্য করার ব্যাপারে শুরুর দিকে তারা কঠোর পদক্ষেপ নেয়নি। কিন্তু দেশব্যাপী ভাইরাস সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়লে তখনই কঠোর অবস্থানে যায় সরকার। ৯ মার্চ থেকে পুরো দেশ রেডজোন ঘোষণা করে বন্ধ করে দেওয়া হয় সকল ধরনের চলাচল। ফার্মেসি, খাবার ও জরুরি পণ্যের দোকান ছাড়া সবকিছু বন্ধ করে দেওয়া হয়। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হওয়া নিষিদ্ধ করা হয়। তবে অকারণে বাইরে বেরোলেই গুনতে হচ্ছে জরিমানা। লকডাউন ভঙ্গ করার জন্য ২০৬ ইউরো গুনতে হচ্ছে তাদের। তাছাড়া ৩ মাস থেকে সর্বোচ্চ ২১ বছর পর্যন্ত জেলও হতে পারে।

করোনার সংক্রমণ রোধে অস্ট্রিয়াতে লকডাউন চলছে কঠোরভাবে। শুধু খাবার ও জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হওয়া সম্পূর্ণ নিষেধ। একসাথে ৫ জনের বেশি কোথাও অবস্থান করাও নিষেধ। কেউ নিষেধাজ্ঞা অমান্য করলেই ৩৬০০ ইউরো পর্যন্ত জরিমানার বিধান করা হয়েছে দেশটিতে। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা।

জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে যেতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে জার্মানি। দুজনের বেশি একসঙ্গে চলাচলও নিষেধ। বাইরে বা বাড়িতে একসঙ্গে জমায়েত হওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ঘোষণা করা হয়েছে শাস্তি। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করলে দেশটির কোনো কোনো রাজ্য ২৫০০০ ইউরো পর্যন্ত জরিমানা করা হবে বলে ঘোষণা করেছে।

প্রতিবেশী দেশ ভারতেও ঘোষণা করা হয়েছে লকডাউন। অমান্য করলে কিংবা সরকারি কর্মীদের কাজে বাধা দেওয়ার শাস্তিস্বরূপ ১ থেকে ২ বছরের জেল হতে পারে সেখানে। রাজ্য সরকারকে এমনটাই নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্র সরকার। আইন অনুযায়ী যথাযথ কারণ ছাড়া লকডাউন ভঙ্গ করলে জেল হতে পারে দুই বছর পর্যন্ত। হতে পারে জরিমানা। এ সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাজে বাধা দেওয়ার শাস্তি সর্বোচ্চ দুই বছর জেল।


ঢাকা/মারুফ/তারা

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়