ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

মালয়েশিয়ায় অবৈধ বাংলাদেশি

দেশে ফেরার সরকারি সুযোগেও চলছে প্রতারণা

হাসান মাহামুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৩২, ২২ আগস্ট ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
দেশে ফেরার সরকারি সুযোগেও চলছে প্রতারণা

টিপি করতে একটি বুথে প্রবাসী অবৈধ বাংলাদেশিদের আবেদনের একটি চিত্র

হাসান মাহামুদ : অবৈধ প্রবাসীদের কোনো রকম শাস্তির আওতায় না এনে স্ব স্ব দেশে ফেরার জন্য সময় বেঁধে দিয়ে ‌'ব্যাক ফর গুড' কর্মসূচি চালু করেছে মালয়েশিয়া সরকার। এরই মধ্যে এ কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

বৈধ উপায়ে দেশে ফেরার এই সুযোগকে কাজে লাগাতে প্রবাসীদের মধ্যে আগ্রহ অনেক বেশি। এই আবেগকে পুঁজি করে ডিজিটাল প্রতারণা করছে এক শ্রেনীর দালাল চক্র।

মালয়েশিয়া সরকারের ঘোষিত সাধারণ ক্ষমা কর্মসূচির আওতায় প্রতিদিন মালয়েশিয়াস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে ট্রাভেল পারমিট (টিপি) নিতে ভিড় করছেন অবৈধভাবে দেশটিতে অবস্থান করা বাংলাদেশীরাও। এ কর্মসূচির আওতায় মালয়েশিয়ায় প্রবেশের কোনো তথ্য নেই বা ভিসা ছাড়াই প্রবেশ করেছে এবং ভিসার মেয়াদ শেষ হবার পরও অবস্থান করছে এমন ব্যক্তিরা সহজ শর্তে মালয়েশিয়া ত্যাগের সুযোগ পাবেন। এ বিষয়ে আবেদন করার জন্য পর্যাপ্ত বুথ স্থাপন করা হয়েছে। কোনো রকম সমস্যা ছাড়াই এসব বুথে আবেদন করে টিপি পাওয়া যাচ্ছে।

কিন্তু দালাল চক্র প্রচারণা চালাচ্ছে। অশিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত, ইমিগ্রেশন সম্পর্কে যারা একটু অজ্ঞ তাদেরকে নানা ধরনের সমস্যার কথা বলে ভড়কে দেয়া হচ্ছে। আর তারও যেহেতু মালয়েশিয়ায় অবৈধ্ হয়ে গেছে সেহেতু নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত রিস্ক নিতে চাচ্ছেন না। এই সুযোগে ফায়দা লুটছে দালালচক্র। জিজ্ঞাসাবাদে সমস্যা হবে, সহজে টিপি পাইয়ে দেবো-এমন ভয় আর লোভ দেখিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে রিঙ্গিত। ব্যাক ফর গুড (বি ফর জি) কর্মসূচির টিপি ইস্যুতে কঠোর নজরদারি করছে দূতাবাস। তাই দালাল চক্র এসব প্রচারণা চালাচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

দূতাবাস সূত্রে জানা গেছে, বিষয়টি তদারকির আওতায় থাকায় ভার্চুয়াল প্লাটফর্ম ব্যবহার করছে দালাল চক্র। তবে এ বিষয়ে নজরদারি আরও জোরদার করা হয়েছে।

অবৈধ চক্র কমিউনিটি গ্রুপকেন্দ্রিক বিভিন্ন ফেসবুক ও হোয়াসটআপ গ্রুপে প্রচারণা চালাচ্ছে সহজে টিপি করে দেয়ার বিষয় নিয়ে। এরপর সাধারণ শ্রমিকদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে হাজার হাজার রিঙ্গিত। ফলে অবৈধ বাংলাদেশিরা ট্রাভেল পাস পেতে পদে পদে হয়রানি ও ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এরই মধ্যে কেউ কেউ টাকা দিয়ে প্রতারণার শিকার হয়েছেন এমন তথ্যও এসেছে দূতাবাসের কাছে।

মালয়েশিয়া দূতাবাসের শ্রম শাখার প্রথম সচিব মো. হেদায়েতুল ইসলাম মন্ডল বলেন, আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে মালয়েশিয়া থেকে সব অবৈধ অভিবাসীকে ‘বি ফর জি’ পদ্ধতি অনুসরণ করে নিজ নিজ দেশে ফেরত যেতে হবে। যারা ওই তারিখের মধ্যে দেশে ফিরবেন না, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। নিরাপত্তা রক্ষার তাগিদে কোনো পক্ষের সঙ্গে আপসে যাবে না প্রশাসন।

তিনি বলেন, বিষয়গুলো প্রচারণার পর সাধারণ শ্রমিকদের মধ্যে আগ্রহ যেমন বেড়েছে, তেমনি হয়তো ভয়ও কাজ করছে পদ্ধতিটি সর্ম্পকে, আর এই সুযোগটি নিতে চাচ্ছে কতিপয় চক্র। তবে আমরা দূতাবাসের পক্ষ থেকে সবাইকে আশ্বস্ত করছি, দূতাবাস সব ধরনের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত রয়েছে।

এ কর্মসূচির কাজ প্রক্রিয়াকরণের জন্য কোনো তৃতীয় পক্ষ বা ভেন্ডর বা এজেন্ট নিযুক্ত করা হয়নি জানিয়ে হেদায়েতুল ইসলাম বলেন, কোনো মাধ্যম ছাড়াই আবেদনকারীকে সরাসরি নিকটস্থ ইমিগ্রেশন অফিসে স্বশরীরে হাজির হতে হবে। যদি কেউ তৃতীয় পক্ষ বা ভেন্ডর বা মধ্যস্থতাকারীর মাধ্যমে ভুয়া তথ্য প্রদান করে আর সেটি প্রমাণিত হয় তাহলে আবেদনকারীর জেল-জরিমানা হতে পারে।

প্রতারক চক্রের হাত থেকে রক্ষা পেতে দূতাবাসের সতর্কবাণীর একটি চিত্র

 

ট্রাভেল পাস নিতে বাংলাদেশিরা যাতে হয়রানির শিকার না হন সেজন্য মালয়েশিয়াস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনের ফেসবুক পেজে কিছু পরামর্শ দেয়া হয়েছে। প্রতারণা থেকে সাবধান হতে এবং যেকোনো এজেন্ট বা ভেন্ডরের সঙ্গে টাকা লেনদেন না করার জন্য মালয়েশিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে সাধারণ ক্ষমা কর্মসূচি ঘোষণার পর থেকে নোটিশ জারি করা হয়েছে।

দূতাবাসের নোটিশে বলা হয়েছে, ট্রাভেল পারমিট এবং স্পেশাল পাস সম্পূর্ণ আলাদা। স্পেশাল পাস দেয় মালয়েশিয়া ইমিগ্রেশন। ট্রাভেল পারমিট (টিপি) দেয় বাংলাদেশ হাইকমিশন।

জানা গেছে, দূতাবাস থেকে প্রতিদিন গড়ে ১৫০টি ট্রাভেল পাসের জন্য আবেদন জমা পড়ছে। ১ আগস্ট আবেদন প্রক্রিয়া শুরু হয়। ২২  আগস্ট পর্যন্ত আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রায় দেড় হাজার ট্রাভেল পাস ইস্যু করা হয়েছে।

ট্রাভেল পাশ ইস্যুর ক্ষেত্রে আবেদনকারীর তথ্যাদি যাচাই বাছাই পূর্বক ট্রাভেল পাশ ইস্যু করা হচ্ছে। দেশটির সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা দেয়া হয়েছে, কেউ যদি তথ্য গোপন রাখে অথবা মিথ্যা তথ্য দেয় সেক্ষেত্রে ট্রাভেল পাস ইস্যু করা হবে না। আর ট্রাভেল পাস ছাড়া এই কর্মসূচির মাধ্যমে সহজে দেশে ফেরত যাওয়া সম্ভব না।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ হাইকমিশনার শহীদুল ইসলামের পক্ষ থেকে দীর্ঘসূত্রতা ও হয়রানিমুক্ত সহজ পদ্ধতি প্রবর্তন এবং জেল জরিমানা ব্যতিরেকে ইচ্ছুক অবৈধ প্রবাসীদের দেশে ফেরা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে মালয়েশিয়া সরকারের সাথে দীর্ঘ আলোচনা করে আসছিল। যার পরিপ্রেক্ষিতে মালয়েশিয়া সরকার 'বি ফর জি' কর্মসূচি চালু করে।

বিদ্যমান পদ্ধতিতে গ্রেপ্তার, জরিমানা ও কারাবরণ শেষে ডিপোর্টেশন ক্যাম্পে অবস্থানের পর দেশে ফেরত যেতে হয়। আত্মসমর্পণকারীদের স্পেশাল পাস বা বহির্গমন অনুমতি পেতে ১৪ দিন অপেক্ষা করতে হয় এবং ৩১০০ রিংগিত বা তার বেশি জরিমানা দিতে হয়, যা তাদের জন্য কষ্টকর।

এ কর্মসূচি চালু থাকবে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। মালয়েশিয়া ইমিগ্রেশনে পাসপোর্ট বা ট্রাভেল ডকুমেন্ট এবং নিশ্চিত (কনফার্মড) বিমান টিকিটসহ আবেদন করতে হবে এবং জরিমানা ও স্পেশাল পাস বাবদ সর্বসাকুল্যে ৭০০ রিংগিত জমা দিতে হবে। ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ আবেদনের এক কার্যদিবসের মধ্যেই স্পেশাল পাস বা বহির্গমনের অনুমতি প্রদান করবে। এই অনুমতি প্রাপ্তির তারিখ থেকে ৭ দিনের মধ্যেই মালয়েশিয়া ত্যাগ করতে হবে। আবেদনকারীদের সুবিধা প্রাপ্তি নিশ্চিত করার জন্য মালয়েশিয়া ইমিগ্রেশন সারাদেশে ৮০টির বেশি বুথ স্থাপন করেছে।

সূত্র জানায়, মালয়েশিয়ায় অবৈধভাবে থাকা বিদেশি শ্রমিকদের বৈধ করতে ২০১৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে রি-হায়ারিং প্রকল্প হাতে নেয় দেশটি। এ প্রকল্পের মাধ্যমে নিবন্ধন করে অবৈধ শ্রমিকদের বৈধ করার সুযোগ দেয়া হয়। দফায় দফায় এ প্রকল্পের মেয়াদও বাড়ানো হয়। তবে অনেক অবৈধ বাংলাদেশি প্রতারিত হয়ে এ প্রকল্পের সুযোগ নিতে পারেননি। যাদের কোনো বৈধ কাগজপত্র নেই-এমন অবৈধ কর্মীদের বৈধতা দিতেই রি-হায়ারিং প্রকল্প গ্রহণ করে দেশটির সরকার।


রাইজিংবিডি/ঢাকা/২২ আগস্ট ২০১৯/হাসান/নবীন হোসেন

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়